প্রশান্তর কাশ্মীর-মন্তব্যে তোপ বিজেপির
ভোটে গরিষ্ঠতা না পেলেও পরে মানুষের রায় নিয়ে কংগ্রেসের সমর্থনে সরকার গড়েছে আম আদমি পার্টি (আপ)। কাশ্মীর থেকে সেনা ও তাদের বিশেষ ক্ষমতা দেওয়ার আইন আফস্পা প্রত্যাহারের প্রশ্নে একই ভাবে মানুষের রায় নেওয়ার কথা বলে এ বার আপ-কে বিতর্কে জড়িয়ে ফেললেন দলের অন্যতম শীর্ষনেতা প্রশান্ত ভূষণ। আপ-কে আক্রমণের অস্ত্র তুলে দিলেন বিজেপি-র হাতে। যা নিয়ে আপ-এর অন্দরেও তৈরি হয়েছে ক্ষোভ।
কাশ্মীর নিয়ে মন্তব্য করে এর আগেও বিতর্ক বাধিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী। ২০১১-র সেপ্টেম্বরে বারাণসীতে এক সাংবাদিক বৈঠকে প্রায় একই কথা বলেছিলেন তিনি। এর জেরে তিন যুবকের হাতে মারও খেতে হয়েছিল তাঁকে। তাদের মধ্যে এক যুবক নিজেকে ভগত সিংহ ক্রান্তি সেনা বলে দাবি করেছিল। তখনও আপ-এর জন্ম হয়নি। প্রশান্ত তখন অণ্ণা হজারে টিমের সদস্য। এখন আপ নেতা হিসেবে তাঁর ওই বক্তব্য অস্ত্র তুলে দিয়েছে বিজেপি-র হাতে। প্রশান্তর গত কালের ওই মন্তব্যকে দেশের স্বার্থবিরোধী আখ্যা দিয়ে আজ সকাল থেকেই আপ-কে তুলোধোনা করতে শুরু করে বিজেপি। আর বিতর্ক এড়াতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ সভাপতি অরবিন্দ কেজরওয়াল, একে প্রশান্তর ব্যক্তিগত মত বলে আখ্যা দেন। পরে সন্ধেয় ফের এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কেজরিওয়াল সরাসরি কোনও উত্তর দেননি। তিনি শুধু বলেন, “আগে নরেন্দ্র মোদী ও রাহুল গাঁধী তাঁদের অবস্থান স্পষ্ট করুন বিষয়টি নিয়ে।”

অরুণ জেটলি

প্রশান্ত ভূষণ
দলের অন্দরে তৈরি হওয়া বিরক্তি ও বিজেপি-র আক্রমণের মুখে প্রশান্ত আজ বোঝানোর চেষ্টা করেন, ভারতের সঙ্গে কাশ্মীরের সংযুক্তির প্রশ্নে গণভোট নেওয়ার যে দাবি পাকিস্তান বা ভূস্বর্গের বিচ্ছিন্নতাকামীরা তুলে থাকে, তিনি আদৌ তার কথা বলেননি। গত কাল প্রশান্ত মন্তব্য করেছিলেন, “কাশ্মীরে সেনার প্রয়োজন রয়েছে কি না সেই সিদ্ধান্ত নিক স্থানীয় মানুষ। যে সিদ্ধান্তের পিছনে সাধারণ মানুষের সমর্থন নেই, তা অগণতান্ত্রিক। মানুষ যদি মনে করেন সেনাবাহিনী সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, তা হলে তাঁরা বলতেই পারেন তাদের শান্তিরক্ষায় সেনাবাহিনীর প্রয়োজন নেই। সে ক্ষেত্রে সেনা প্রত্যাহার করা যেতেই পারে।” কাশ্মীরে আফস্পা-র প্রয়োজন রয়েছে কি না তা ঠিক করার জন্য প্রয়োজনে গণভোট নেওয়ারও দাবি তোলেন ওই আপ নেতা।
এমনিতেই দিল্লির তখ্ত ফস্কে যাওয়ার পরে বিজেপি এখন আপ-কে পথের কাঁটা বলে মনে করছে। তার উপরে আপ এখন লোকসভা ভোটের ময়দানে বড়সড় ভাবে নামতে চাইছে। বিজেপি নেতৃত্ব ভাল মতোই বুঝতে পারছেন আপ-এর শক্তি বিস্তারে মূলত ক্ষতি হবে তাদেরই। এই কারণেই প্রশান্তর বক্তব্য সামনে আসার পরেই আপ নেতৃত্বকে আক্রমণ শানাতে নেমে পড়ে বিজেপি শিবির। দলের রাজ্যসভা নেতা অরুণ জেটলির কথায়, “জাতীয় স্তরে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখছে এমন একটি দল দেশের স্বার্থবিরোধী নীতির পক্ষে সওয়াল করছে। জাতীয় সুরক্ষার প্রশ্নটি কোনও ভাবেই গণভোট বা সস্তা জনপ্রিয় সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে স্থির করা যায় না। দেশের সামগ্রিক সুরক্ষা ব্যবস্থার বিচারেই সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে।”
লোকসভা ভোটের আগে তাদের আক্রমণ করার এমন সুযোগ যে বিজেপি যথাসাধ্য কাজে লাগাতে চাইবে, আপ নেতৃত্বের কাছেও তা স্পষ্ট। দল তাই গোড়া থেকেই প্রশান্তর মন্তব্য থেকে সরে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কেজরিওয়ালও কার্যত আজ জেটলির মতোই বলেছেন, “কোনও এলাকায় সুরক্ষা সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে সেনা মোতায়েন করা হয়। এর জন্য কোনও গণভোট নেওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রশান্তর মতামত একান্তই ব্যক্তিগত।”
তবে গোটা বিষয়টি নিয়ে দলে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। আপ নেতাদের অনেকেই মনে করছেন, সরকার গড়ার পর থেকেই দল বিভিন্ন বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছে। কখনও মুখ্যমন্ত্রীর ডুপ্লে ফ্ল্যাট নেওয়া না-নেওয়ার প্রশ্নে, আবার কখনও মন্ত্রীদের সরকারি গাড়ি ব্যবহার নিয়ে। সাংবাদমাধ্যমের কাছে অকারণে মুখ খুলে বিতর্ক বাড়াচ্ছেন নেতারাও। জনমানসে নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে এতে। ক্ষতি হচ্ছে দলেরই। তাই আপ শীর্ষ নেতৃত্বের বড় অংশই চাইছেন, অহেতুক বিভিন্ন বিষয়ে মন্তব্য না করে কাজে মন দিক দল। এই রকম বিতর্কে দল যত বেশি জড়াবে, ততই লোকসভা ভোটে ভাল ফলের সম্ভাবনা কমবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.