|
|
|
|
সংসদ এড়িয়েও সংস্কার সম্ভব, বলছে শিল্পমহল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
৬ জানুয়ারি |
সংসদে না গিয়েও শুধু প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই যে বহু ক্ষেত্রে সংস্কারের রথ ছোটানো সম্ভব, তা ফের সরকারকে মনে করিয়ে দিল শিল্পমহল। একই সঙ্গে থমকে যাওয়া সংস্কারে গতি আনার প্রশ্নে তারা যে সরকারের কোনও অজুহাতই আর শুনতে রাজি নয়, এ বার তা-ও বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিল শিল্পমহল।
ক’দিন আগেই সাংবাদিক বৈঠকে মনমোহন সিংহ জানিয়েছেন, লোকসভা ভোটের আগে তাঁর সরকারের শেষ পাঁচ মাসে আর্থিক সংস্কারের পথে আরও এগোনোর চেষ্টা করবেন তিনি। যেখানে যতটুকু সুযোগ মিলবে, সেখানেই সংস্কারের কাজ হবে। প্রধানমন্ত্রীর সেই বক্তব্যের সূত্র ধরেই আজ শিল্পমহল জানিয়ে দিল, আর্থিক বৃদ্ধির হারকে ৮ থেকে ৯ শতাংশের ঘরে টেনে তুলতে সংসদমুখী হওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিয়েই সিংহভাগ কাজ সেরে ফেলা যেতে পারে বলে মত শিল্পমহলের।
কী সেই কাজ? শিল্পমহল বলছে, কয়লা, আকরিক লোহার খনিতে খননের কাজ দ্রুত শুরু হোক। দেশের মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেল উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা হোক। তা হলে এই সব আমদানির খরচ কমবে। নিয়ন্ত্রণে থাকবে বিদেশি মুদ্রার লেনদেনের ঘাটতি। প্রসঙ্গত এ দিনই কেন্দ্র জানিয়েছে, শীঘ্রই দেশের ৫৬টি তেল ও গ্যাসের ব্লক নিলামে তুলবে তারা। শিল্পমহল অবশ্য শুধু কয়লা-লোহা বা তেল-গ্যাসের কথা বলেনি। তাদের বক্তব্য, লোকসভা নির্বাচনের কথা ভেবে দরাজ হাতে খরচ করতে গিয়ে রাজকোষ ঘাটতি যাতে লাগামছাড়া না হয়ে যায়, তা-ও নিশ্চিত করুক সরকার। শিল্পের জন্য পরিবেশ-সহ বিভিন্ন ছাড়পত্র দেওয়ার দ্রুত বন্দোবস্ত করা হোক। কর সংক্রান্ত আইনি জটিলতা মেটানোর চেষ্টা হোক। সিদ্ধান্ত গ্রহণে গতি আনা হোক। শিল্পমহলের বক্তব্য, এ সবের জন্য কোনও নতুন বিল পাশ করানোর দরকার নেই। ফলে রাজনৈতিক ঐকমত্যের অভাবে সংস্কারের কাজ করা যাচ্ছে না বলে সরকারের তরফে যা বলা হচ্ছে, তা আদৌ ঠিক নয়।
প্রধানমন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠকের পরেই শিল্পমহল এক সুরে দাবি তুলেছিল, আর্থিক বৃদ্ধিকে চাঙ্গা করতে যাবতীয় ব্যবস্থা নিক কেন্দ্র। আজ আর্থিক বৃদ্ধিকে চাঙ্গা করার জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসূচির একটি তালিকা প্রকাশ করেছে বণিকসভা ফিকি। তালিকাটি প্রধানমন্ত্রীকেও দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, প্রতি বছর অন্তত ১ কোটি নতুন চাকরির ব্যবস্থা করতে গেলে বৃদ্ধির হার ৮ থেকে ৯ শতাংশে ধরে রাখতেই হবে। ফিকি-র সভাপতি সিদ্ধার্থ বিড়লা বলেন, “আমরা চাই রাজকোষ ঘাটতি, লেনদেনের ঘাটতি এবং মূল্যবৃদ্ধিকে লাগাম দিতে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। এই তিনটি আর্থিক সূচক ঠিক থাকলেই বিনিয়োগকারীদের মনোভাবের উন্নতি হবে। দেশের শিল্পপতিদের এ দেশে বিনিয়োগটাই এক মাত্র পাকাপাকি সমাধান।”
পরিবেশের ছাড়পত্র নিয়ে সমস্যার জেরে বেশ কিছু নতুন শিল্প আটকে রয়েছে বলে বহু দিন ধরেই অভিযোগ করছিল শিল্পমহল। পরিবেশ ছাড়পত্র নিয়ে সমস্যার কথা গত মাসে ফিকি-র সভায় গিয়ে স্বীকার করেছিলেন রাহুল গাঁধীও। সম্প্রতি জয়ন্তী নটরাজনকে সরিয়ে পরিবেশ মন্ত্রকের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বীরাপ্পা মইলিকে। শিল্পমহলের একাংশের দাবি, মইলিকে আনার পরে মন্ত্রকের কাজে গতি এসেছে। বেশ কয়েকটি আটকে থাকা প্রকল্প ছাড়পত্রও পেয়েছে। শিল্পপতি ওয়াই কে মোদী এ দিন বলেন, “এক মাত্র পরিবেশ মন্ত্রকেই গত ১৫ দিনে অনেক কাজ হয়েছে। যার থেকে স্পষ্ট, প্রশাসনিক সিদ্ধান্তর মাধ্যমেই অনেক কিছু করা যায়।” কিন্তু রাহুল ফিকি-র সভায় যে অর্থনৈতিক কর্মসূচির কথা বলেছিলেন, তার সঙ্গে এখনও সরকারের কাজের বিস্তর ফারাক রয়েছে বলে অভিযোগ শিল্পমহলের। মোদীর কথায়, “রাহুল যা বলেছেন, সেটা রূপায়ণ হলেই যথেষ্ট। কিন্তু সরকারের কাজে এখনও তার প্রতিফলন মিলছে না।”
এই প্রসঙ্গেই উঠেছে কর সংক্রান্ত জটিলতা কমানোর কথাও। বিজেপি গত কয়েক মাস ধরে বিষয়টি নিয়ে সরব। গত কালই বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, “এখন প্রয়োজন পুরো ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে সংস্কার করা। আমাদের দল সেই কাজ করছে।” কর সংস্কার প্রশ্নে বিজেপির এই অবস্থানকে ইতিমধ্যেই স্বাগত জানিয়েছে শিল্পমহল। এ দিন শিল্পপতি রাজ্যবর্ধন কানোরিয়া বলেন, “এখন একটা কর আইনের কুড়ি রকম ব্যাখ্যা হচ্ছে। কোনও নতুন নীতি বা আইনের প্রয়োজন নেই। নীতির ক্ষেত্রে আরও স্পষ্টতা আনা হোক। সেই নীতির সঠিক রূপায়ণ হোক।” শিল্পপতি হর্ষপতি সিংহানিয়ার যুক্তি, “এই আইনি জটিলতাতেই বহু কর সংক্রান্ত মামলা ঝুলে রয়েছে। সরকার ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট তৈরি করে এই সব মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে পারে। সরকারেরই রাজস্ব আদায় বাড়বে তাতে।” এই সব ব্যবস্থা ঠিক ভাবে চালু করা গেলে আগামী পাঁচ মাসে অর্থনীতির ছবি অনেকটা বদলাতে পারে বলে আশা শিল্পমহলের। |
|
|
|
|
|