তৃণমূল কংগ্রেসের দুই নেতাকে খুনের ঘটনায় গত বছর জানুয়ারিতে উত্তাল হয়েছিল রায়গঞ্জের গৌরী গ্রাম। নিহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব এবং উদ্যান ও পালন দফতরের মন্ত্রী সুব্রত সাহা। তদন্ত করে অভিযুক্তদের শাস্তি এবং পরিবারের এক জনকে চাকরি দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তাঁরা। এর পরে কেটে গিয়েছে এক বছর। হতদের পরিবারের অভিযোগ, কোনও আশ্বাসই বাস্তবায়িত হয়নি। নিহতদের এক জন পেশায় দিন মজুর মুকুন্দ দাস তৃণমূলের কিসান খেত মজদুর সংগঠনের ব্লক সভাপতি ছিলেন। অন্য জন, তাঁর দূর সম্পর্কের মামা ক্ষীরোদ দাস রায়গঞ্জ ব্লক তৃণমূল সহ সভাপতি ছিলেন। গত বছরের ১১ জানুয়ারি বাইকে চেপে মামা-ভাগ্নে বাড়ি ফেরার পথে খুন হন। তাঁদের ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। পর দিনই গ্রামে এসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে পড়েন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী ও উদ্যান ও পালন দফতরের মন্ত্রী। পরে তৃণমূলের তরফে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হয় দুই পরিবারের সঙ্গে। ক্ষীরোদবাবুর স্ত্রী কৃষ্ণাদেবীকে গত পঞ্চায়েত ভোটে দলের তরফে প্রার্থীও করা হয়েছিল।
কিন্তু, এই পর্যন্তই। তার পরে আর কিছুই না হওয়ার ফলে বর্তমানে দুই পরিবারের সদস্যদের মধ্যেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ক্ষীরোদবাবুর দুই ছেলে সুব্রত এবং সুরঞ্জন পানের দোকান চালান। সুব্রতবাবু বলেন, “শিক্ষাগত যোগ্যতা কম থাকায় মন্ত্রীরা আমাকে চতুর্থ শ্রেণির পদে চাকরি এবং আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিলেন। যদিও বছর ঘুরে গেল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কিছুই পাইনি। ভাই ও মা’কে নিয়ে আধাপেটা খেয়ে বেঁচে আছি।” নিহত মুকুন্দবাবুর ভাই প্রদীপবাবু দিনমজুরি করে সংসার চালান। তিনি বলেন, “আমাকেও দুই মন্ত্রী একই আশ্বাস দিয়েছিলেন। দিনমজুরি করে ঠিকমতো সংসার চালাতে পারি না।” মুকুন্দবাবুর মা বিষ্ণুদেবী বলেন, “যারা আমাদের এ সর্বনাশ করল তাদের শাস্তি চাই।”
কী অবস্থায় রয়েছে খুনের তদন্ত?
তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, জমি সংক্রান্ত বিবাদে খুন হতে হয় মামা-ভাগ্নেকে। খুনের অভিযোগে আট জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পুলিশ। ছয় অভিযুক্তকে ধরে পুলিশ। দু’জন আত্মসমর্পণ করেন। বর্তমানে সকলেই জামিনে মুক্ত। পুলিশ জানায়, গত এপ্রিলে আট অভিযুক্তের বিরুদ্ধে রায়গঞ্জ জেলা আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। রায়গঞ্জ থানার আইসি দীনেশ প্রামাণিক বলেন, “জোড়া খুনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এপ্রিল মাসে আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়। এর পরে যা করার আদালত করবে।”
জেলা তৃণমূল সভাপতি রাজ্যের পরিষদীয় সচিব অমল আচার্য বলেন, “নিহত মুকুন্দবাবু ও ক্ষীরোদবাবুকে তৃণমূল শহিদের মর্যাদা দিয়েছে। দুই পরিবার যাতে দ্রুত সরকারি সুবিধা পায় সে জন্য উদ্যোগী হয়েছি। সরকারি সুবিধা পেতে কিছু সময় তো লাগে।”
আদালতের রায়, সরকারি আশ্বাস দুইয়ের অপেক্ষায় আপাতত সময় কাটাচ্ছেন গৌরীগ্রামের দুই পরিবার। |