ধর্ষণের পরে অসুস্থ হয়ে পড়া এক আদিবাসী শিশুকন্যার সঙ্কট এখনও কাটেনি বলে জানিয়ে দিল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। নকশালবাড়ির বাসিন্দা ওই শিশুকন্যাকে শুক্রবার স্থানীয় এক দুষ্কৃতী ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। শনিবার সকাল থেকেই শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে। সেই রাতেই তার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। হাসপাতালের সুপার অমরনাথ সরকার বলেন, “শিশুটির অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। আপাতত স্যালাইন চলছে। তার সঙ্কট এখনও কাটেনি।”
এই ঘটনায় অভিযুক্ত কার্তিক লোহারকে পুলিশ গ্রেফতার করতে না পারায় স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ। এদিন অভিযোগ উঠেছে, শিশুটিকে প্রথমে নকশালবাড়ি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলেও সেখানে চিকিৎসা না করিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবীর ভৌমিক অবশ্য বলেন, “ধর্ষণের মতো মামলায় প্রমাণ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। তা ছাড়া নকশালবাড়িতে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞও নেই। তাই শিশুটিকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।” আজ, সোমবার শিশুকন্যাটির জামাকাপড়ের ফরেন্সিক পরীক্ষা করানো হবে।
পুলিশ সূত্রের খবর, অভিযুক্ত কার্তিকের বিরুদ্ধে একাধিক অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতিই সে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে। দার্জিলিং জেলা লিগাল এড ফোরামের সম্পাদক অমিত সরকার বলেন, “পুলিশ আরও একটু সক্রিয় হলে কার্তিককে গ্রেফতার করা সম্ভব হত।” তবে দার্জিলিংয়ের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “অভিযুক্তকে খোঁজা হচ্ছে। গাফিলতির কোনও প্রশ্ন নেই।”
শিশুটির মা জানিয়েছেন, শুক্রবার রাত আটটা নাগাদ কার্তিক এসে তাঁর মেয়ের কাছে জল চায়। তিনি বলেন, “কিছুক্ষণ পর থেকে মেয়েকে আর দেখতে পাইনি। কার্তিকের বাড়িতেও খুঁজতে যাই। আধ ঘণ্টা পর এসে দেখি মেয়ে বাড়িতেই রয়েছে। রাতেই মেয়ের জ্বর আসে। খাবারও খায়নি।” পরদিন সকালেই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁরা।
মালদহের সুজাপুরে এক মহিলাকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে না পারায় সেখানেও স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ দিন ওই মহিলার বাড়িতে যান জেলা কংগ্রেস সভানেত্রী তথা সাংসদ মৌসম বেনজির নুর। সাংসদ বলেন, “সুজাপুরে এক বছরে চার জন মহিলা খুন হয়েছেন। অথচ পুলিশ একটি খুনেরও কিনারা করতে পারেনি। সিআইডিকে দিয়ে এই মামলার তদন্ত করানো হোক।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশেরও বক্তব্য, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার জন্যই সুজাপুরে অপরাধীরা ধরা পড়ছে না। তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভানেত্রী মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র অবশ্য জানিয়েছেন, পুলিশকে দ্রুত অপরাধীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে বলা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনার তদন্ত চলছে। অভিযুক্তদের শনাক্ত করতে সিআইডি-র বিশেষজ্ঞ ডাকা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা জিনিসপত্র ফরেন্সিক গবেষণাগারে পাঠানো হচ্ছে।” |