পৌষের রাত। চারিদিকে ঘন কুয়াশা। তার মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে ট্রেন। লাল সিগন্যাল কিন্তু সবুজ হওয়ার নামই নেই। সামনে একটি লেভেল ক্রসিং-ও রয়েছে। তা দিয়ে যাতায়াতও তখন কমে এসেছে। বেশ খানিকক্ষণ উশখুস করার পরে কয়েক জন যাত্রী নেমে দেখেন, লেভেল ক্রসিংয়ের গেট তোলা। তার পাশে কয়েক কদম হেঁটে গেলেই রেলের সিগন্যাল কেবিন। ট্রেনের চালক এবং গার্ডকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে গিয়ে তাঁরা দেখেন, শীতের রাতে অঘোরে ঘুমিয়ে পড়েছেন সেখানকার রেলকর্মী। তাঁকে ঠেলা দিয়ে তুলে সিগন্যাল সবুজ করিয়ে শেষ পর্যন্ত যখন ট্রেন ছাড়ল, ততক্ষণে ৪০ মিনিট কেটে গিয়েছে।
শনিবার রাতে কোচবিহারের দিনহাটার কাছে প্রান্তিক বাজার এলাকায় মালদহ-দিনহাটা ডিএমইউ ট্রেনের যাত্রীরা এই ঘটনায় বেশ ক্ষুব্ধ। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ওই ট্রেনে উঠে দিনহাটা যাচ্ছিলেন বিজন রায়। তিনি বলেন, “রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১০টা ১০ পর্যন্ত ট্রেনটি দাঁড়িয়েছিল। একেবারে অকারণে ওই শীতের রাতে তাই পৌঁছতে অনেক দেরি হয়ে গেল।” দিনহাটা মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির অভিযোগ, দিনহাটা স্টেশনের রেলকর্মীরাও এই ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না। দিনহাটার সহকারী স্টেশন ম্যানেজার সুনীল রায় বলেন, “ওই পয়েন্টে এক জন কর্মীর সিগন্যাল দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল। শুক্রবার ওই কর্মী রাতে কাজ করেছিলেন। পরের দিন ফের রাতেই তাঁর ডিউটি পড়ে। ক্লান্ত হয়ে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। পরে ট্রেনের কর্মীরা যোগাযোগ করলে, সিগন্যাল নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”
ওই রেলকর্মী অসুস্থ ছিলেন বলে অবশ্য দাবি করেছেন কয়েক জন যাত্রী। তবে সে কথা মানতে চাননি রেলকর্তারা। এই ঘটনার পরে রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী বলেন, “এটি মারাত্মক অপরাধ। এমন কোনও ঘটনা ঘটে থাকলে ওই রেলকর্মীর বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ। খোঁজ নিয়ে দেখছি।” আলিপুরদুয়ারের ডিআরএম বীরেন্দ্রকুমার বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।”
ট্রেনটি রোজ আড়াইটে নাগাদ এনজেপি থেকে দিনহাটা রওনা হয়। সে দিনও তাই হয়েছিল। ঠিক সময়েই যাচ্ছিল। এর মধ্যেই ওই সিগন্যাল বিপত্তি। একদিকে জনবসতি। অন্য দিকে বাজার এলাকা। তার মধ্যে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় অনেকক্ষণ। এই ট্রেনটির পরে ওই একই লাইন দিয়ে বামনহাট প্যাসেঞ্জার ওই এলাকা পার করে রাত ১১টা নাগাদ। যাত্রীদের কয়েকজনের অভিযোগ, তাঁরা উদ্যোগী হয়ে ওই রেলকর্মীকে জাগিয়ে সিগন্যাল বদল না করালে, বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত। |