বছর দেড়েক আগের লন্ডন অলিম্পিকের মতো লিয়েন্ডার বনাম মহেশ এ বার খুল্লমখুল্লা নয়। বরং দু’পক্ষই ধীরে চলো নীতি অবলম্বনে যেন আগ্রহী। তবে লিয়েন্ডার এ বছরটাই ভারতের হয়ে খেলবেন না ঘোষণা করায় চলতি মাসের শেষে ডেভিস কাপে চিনা তাইপে ম্যাচে মহেশ ভূপতির প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা আরও বেড়েছে। ভারতীয় টেনিস প্লেয়ারদের সংস্থার (আইটিপিএ) এক শীর্ষস্থানীয় কর্তার কথায়, ১১ জানুয়ারি দল নির্বাচনে প্রথমে ছ’জনের দল গড়া হবে। পরে তার থেকে চূড়ান্ত চার বাছা হবে। সোমদেব, য়ুকি, বোপান্না, দুই উঠতি তরুণ সাকেত মিনানি, রামকুমার রমানাথনের সঙ্গে মহেশও ডেভিস কাপ দলে থাকতে পারেন। এআইটিএ-র চিঠির জবাবে মহেশ তাঁকে আসন্ন ডেভিস কাপে পাওয়া যাবে বলেও ফেডারেশনকে জানিয়ে দিয়েছেন।
মহেশ এই বছরটা চুটিয়ে খেলে র্যাকেট তুলে রাখার মনস্থ করেছেন। তাঁর এবং লিয়েন্ডার দুই শিবিরেরই প্রভাবশালী লোকেদের সঙ্গে গত চব্বিশ ঘণ্টায় কথা বলে মনে হল, লিয়েন্ডার-হীন ডেভিস কাপ দলে ফিরতে মহেশ যেমন স্বচ্ছন্দ অনুভব করবেন, তেমনই মহেশের অবসরের পর ২০১৫-এ ফের জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চড়াতে খুশিই হবেন লিয়েন্ডার। দু’জনের কেউই চাইছেন না, অলিম্পিকের মতো লড়াইটা তীব্র প্রকাশ্য হয়ে পড়ুক। যার পিছনে আইটিপিএ-তে এখনও লিয়েন্ডারের অন্যতম ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে থাকা একটা বড় কারণ।
লিয়েন্ডারের পারিবারিক এক সূত্র জানাচ্ছেন, প্লেয়ারদের সংস্থা এ দেশের টেনিসের উন্নতিতে কোনও ভাল পদক্ষেপ নিচ্ছে বুঝলে লিয়েন্ডার অবশ্যই তাঁর অভিজ্ঞতা-পরামর্শ দিয়ে আইটিপিএ-কে সাহায্য করবেন। তেমনই আইটিপিএ-র এক শীর্ষস্থানীয় কর্তা বললেন, “ও আমাদের সঙ্গেই আছে। গত মাসেই তো মুম্বইয়ে আইটিপিএ-র ফান্ড রাইজিং টুর্নামেন্টে এসে টেনিস ক্লিনিক করেছে।”
তবে লিয়েন্ডারের টেনিসজীবনের উপর বিরাট প্রভাবশালী তথা ভারতীয় টেনিসের এক শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব লিয়েন্ডারের এই সিদ্ধান্তের মধ্যে ‘গড়বড়’ দেখছেন। ভারতীয় টেনিসের সাম্প্রতিক কালের ঘটনাপ্রবাহে প্রবল বিরক্ত তিনি। তাঁর মতে, লিয়েন্ডার যদি খেলতেনও তা হলে এই মুহূর্তের ফর্মের বিচারে ভারতীয় দলের অন্য তিন সদস্য হওয়া উচিত সোমদেব, য়ুকি ও বোপান্নার। রিজার্ভে রামকুমার। সেক্ষেত্রে বোপান্নাকে নিয়ে ডাবলস খেলতে হত লিয়েন্ডারকে। কিন্তু মহেশ-বোপান্না, দু’জনের সঙ্গেই নাকি লিয়েন্ডারের বাক্যালাপ নেই এখনও। ফলে ভারতীয় ড্রেসিংরুমের পরিবেশ খুব স্বাস্থ্যকর থাকত না। এমনকী এ বার তিনি লিয়েন্ডারকে সুযোগ হলে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্যও অনুরোধ করবেন না।
একই সিদ্ধান্ত লিয়েন্ডারের পরিবারেরও। তাঁর অতি ঘনিষ্ঠ এক জন বলেন, “এটা সম্পূর্ণ ওর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। যেটাকে আমাদের প্রত্যেকের মর্যাদা দেওয়া উচিত।”
টেনিসমহলের অনেকের অবশ্য প্রশ্ন, আড়াই দশক দেশের হয়ে খেলার সময় যাঁর জার্সিতে অদৃশ্য তেরঙ্গা থাকত, সেই লিয়েন্ডার পুরো বছর জাতীয় দল থেকে সরে দাঁড়ালেন কেন? জানা গেল, বছর আটেকের মেয়ে আইয়ানাকে আগের চেয়ে অনেক বেশি সময় দিতে বদ্ধপরিকর লিয়েন্ডার। যেটা তাঁর কাছে নাকি কার্যত পারিবারিক দায়বদ্ধতায় পর্যবসিত। তার জন্য বছরে পঁচিশ সপ্তাহের বেশি সার্কিটে খেলবেন না। গ্র্যান্ড স্ল্যাম আর মাস্টার্স সিরিজ জাতীয় কিছু বিশেষ এটিপি টুর্নামেন্টই এ বছর লিয়েন্ডারের ক্যালেন্ডারে অগ্রাধিকার পাচ্ছে। যেমন অস্ট্রেলীয় ওপেন খেলে মুম্বইয়ে ফিরে টানা তিন সপ্তাহ কাটিয়ে মার্কিন হার্ডকোর্ট সিরিজ খেলতে বেরোবেন। “এর পর ডেভিস কাপ আর এশিয়াড যোগ হলে আরও ছ’-আট সপ্তাহ বেশি খেলতে হত ওকে,” ব্যাখ্যা লি-র সেই ঘনিষ্ঠ সূত্রের। |