সত্য-সুধার সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন শহরের আবেগ-সহমর্মিতাও
গুজরাত থেকে গুয়াহাটিমিলে গেল রেড রোডে। নেপথ্যে অঙ্গীকার অর্থের অভাবে কেউ যেন ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ময়দানে হেরে না যান।
রবিবার সাতসকালে তাই ‘দিল’ দিয়েই দৌড়ল কলকাতা। আট থেকে আশি সামিল কলকাতা ম্যারাথনে। সব বিভাগ মিলিয়ে বারো হাজার মানুষ। জানাচ্ছেন আয়োজক টাটা স্টিলের অন্যতম শীর্ষকর্তা টিভি নরেন্দ্রন। যিনি নিজেও দৌড়লেন মিনি ম্যারাথনে। সেই মহা ভিড়ে গুজরাতের প্রতিনিধি থাকলে, আছেন গুয়াহাটির দৌড়বাজও। ফালাকাটার রাজা চৌধুরির সঙ্গে দৌড়লেন নাগপুরের রোহিণী রাউতও। ফুটবলমহল থেকে হাজির ছিলেন নবি, সুব্রত পাল, লুসিয়ানোরা। ছিলেন সিএবি কর্তারাও।

হুইল চেয়ারে সওয়ার মধ্যকলকাতার জিমি বৎস সাতসকালে হাজির রেড রোডে।
তাঁকে ম্যারাথনে এগিয়ে দিলেন দিব্যেন্দু বড়ুয়া, নগরপাল সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ,
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং রাজ্যপাল এমকে নারায়ণন।
৪২.১৯৫ কিলোমিটার ম্যারাথন দৌড়ের শেষে পুরুষ বিভাগে জব্বলপুরের সত্যপ্রকাশ চ্যাম্পিয়ন। মেয়েদের ১১ কিলোমিটারের মিনি ম্যারাথনে সেরা উত্তরপ্রদেশের সুধা সিংহ। সেনাবাহিনীর কর্মী সত্যপ্রকাশের সঙ্গে গুয়াংঝৌ এশিয়াডে স্টিপলচেজে সোনাজয়ী সুধা সেরার শংসাপত্র নিয়ে ফিরে গেলেও কলকাতা ম্যারাথনের আসল চ্যাম্পিয়ন হয়ে থেকে গেল শহরবাসীর আবেগ, সহমর্মিতা, দায়বদ্ধতা। দুঃস্থ ক্যানসার রোগীদের পাশে দাঁড়াতে অশীতিপর বৃদ্ধা ছাড়াও দৌড়ে অংশ নিতে দেখা গেল হুইলচেয়ার সওয়ার ব্যক্তিদেরও। মঞ্চে উঠে প্রতিযোগীদের সাহস দিয়ে গেল ক্যানসারকে হারানো ছোট্ট মেয়ে কোয়েল দত্ত।
এ রকম এক আবেগঘন ম্যারাথনে হাজির থেকেও দৌড়তে না পারায় তাই আক্ষেপ যাচ্ছে না সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক গত নভেম্বরেই সামাজিক দায়বদ্ধতার তাগিদে বোথাম, গাওস্করের সঙ্গে ৩২ কিলোমিটার হেঁটেছেন শ্রীলঙ্কার মাটিতে। সকাল ছ’টায় কলকাতা ম্যারাথনের ফ্ল্যাগ অফ-এর পরে ‘প্রিন্স অব কলকাতা’ বলছিলেন, “দৌড়নোর ইচ্ছে নিয়েই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু এত মানুষের ভিড় দেখে ঝুঁকি নিলাম না। নিরাপত্তা কর্মীদের সমস্যা বাড়ত।” অবশ্য ম্যারাথনের উপযোগিতা নিয়ে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে আসমুদ্রহিমাচলের ‘দাদা’-র পরামর্শ, “দৌড়লে শরীর-মন, দুটোই ভাল থাকে। আপনাদের সকলের জীবনেই কোনও না কোনও একটা দৌড় রয়েছে। আজকের দৌড়ের সঙ্গে সেই দৌড়টাও কিন্তু শেষ করবেন।”

চ্যাম্পিয়ন সত্যপ্রকাশ।
যা শুনে সৌরভের পাশে বসা প্রাক্তন ডেভিসকাপার নরেশকুমারের সংযোজন, “রেড রোডে এত লোক! কিন্তু কোনও রাজনৈতিক দলের প্ল্যাকার্ড বা ফেস্টুন নেই। সামাজিক দায়বোধ থেকে এই সমাবেশ মনে থাকবে।” যে মন্তব্য হাসি ফোটাল মশাল জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধক রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের মুখেও।
সকাল ছ’টায় শুরু হয়ে কলকাতা ম্যারাথন শেষ সাড়ে দশটায়। শহর জুড়ে সাড়ে চার ঘণ্টার দৌড়ের মাঝেই রেড রোড প্রায় সারাক্ষণ মুখর উৎসবের কনসার্টে। যা গানে-নাচে মাতালেন উষা উত্থুপ থেকে তনুশ্রীশঙ্কর। হাজির ছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী। গোড়ায় কিছুক্ষণ যুবকল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। শেষবেলায় এসে পুরস্কার দিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র।
ম্যারাথন জিতে তিন লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা পেলেন সত্যপ্রকাশ। রেড রোড ছাড়ার আগে বলে গেলেন, “দু’হাজার আটে এখানে সিক্সথ হয়েছিলাম। এ বার চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু প্রতিবারই কলকাতা ম্যারাথনের স্পিরিট আলাদা।” যার সূত্র ধরে মিনি ম্যারাথন জয়ী সুধাও বলে গেলেন, “সমাজের পাশে আমাকে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিল কলকাতা ম্যারাথনই।”

ছবি: উৎপল সরকার।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.