দক্ষিণ আফ্রিকার পর নিউজিল্যান্ডের বিমানও তিনি ভারতীয় দলের হয়ে ধরছেন না। রঞ্জি ট্রফিতেও তাঁর ক্যাপ্টেন্সিতে দিল্লি নক আউটে পৌঁছতে পারেনি। বর্তমান ক্রিকেট মরসুম থেকে আইপিএল, আসন্ন ভবিষ্যৎ সব কিছু নিয়ে একান্ত সাক্ষাৎকারে যা যা বললেন গৌতম গম্ভীর...
প্রশ্ন: বেশ লম্বা একটা ক্রিকেট-মরসুম গেল আপনার। কাউন্টি দিয়ে শুরু করলেন। তার পর প্রাক্-মরসুম ম্যাচ। তার পর রঞ্জি। মরসুমটা নিয়ে কী বলবেন?
গম্ভীর: মিশ্র অনুভূতি, বলা যায়। একটু খারাপ লাগছে এটা ভেবে যে, রঞ্জি ট্রফির নক আউটে দিল্লি গেল না। নক আউটে কোয়ালিফাই করাটা আমাদের প্রথম টার্গেট ছিল। তবে আমরা কিন্তু আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম। প্রথম তিনটে রাউন্ডের পর আমাদের বোলার-সহায়ক পিচে খেলতে হয়েছিল। সেটা খেলেওছিলাম। কিন্তু যে ভাবে প্ল্যান করেছিলাম, ব্যাপারটা সে রকম হয়নি।
প্র: আপনার নিজের ব্যাটিং-প্রসঙ্গে আসি। ইংল্যান্ডে আপনি ভাল রান পেয়েছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ টিমের বিরুদ্ধে তার পর সেঞ্চুরি পেলেন। দিল্লির হয়েও একটা সেঞ্চুরি আর তিনটে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। ডব্লিউ ভি রামন আর নিজের কোচের সঙ্গে প্রি-সিজন নেটে ব্যাটিংয়ের কোনও বিশেষ ব্যাপারে খাটাখাটনি করেছিলেন?
গম্ভীর: টেকনিক্যাল দিকগুলো নিয়ে আমি তেমন খাটাখাটনি করিনি। বরং মানসিক দিকটা নিয়ে অনেক বেশি করেছি। কাউন্টি ক্রিকেট খেলে আমার বেশ লাভই হয়েছে। কারণ ওখানে ভাল রকম কঠিন উইকেটে ব্যাট করতে হয়েছে আমাকে।
প্র: রঞ্জি ট্রফিতে ছ’শোর কাছাকাছি রান করার পরেও দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের জন্য আপনাকে ভাবা হল না। এমনকী ধোনি পর্যন্ত বলে ফেলেছিলেন যে তৃতীয় ওপেনার হিসেবে স্কোয়াডে আপনি-ই পছন্দ। টিমে থাকতে না পেরে আপনার কোনও মানসিক প্রতিক্রিয়া হয়েছিল?
গম্ভীর: একদম না। আমার কাছে রানটা করাই আসল। সে জন্যই আমি এই খেলাটা খেলি। আমার কাজটা হল রান করা, টিমকে জেতানো। সেটা যে টিমের হয়েই খেলি না কেন। |
প্র: দিল্লিতে একই সঙ্গে অধিনায়ক ও ব্যাটসম্যানের দায়িত্বটা কী ভাবে সামলান। বিশেষ করে আপনি যখন ভারতীয় দলে কামব্যাক করার চেষ্টা করছেন?
গম্ভীর: আমি সেটা অতীতেও করেছি। এ বার তাই আলাদা কিছু করছি না। বিশেষ করে রঞ্জিতে। ২০০৭-০৮ মরসুমে দিল্লি আমার ক্যাপ্টেন্সিতে রঞ্জিতে জিতেছে, আবার আমি ভারতীয় দলেও কামব্যাক করেছিলাম। বহু দিন ধরে এটা করে আসছি বলে দায়িত্ব বা চাপটা সামলাতে কোনও অসুবিধে হয় না।
প্র: কিন্তু রঞ্জিতে এ বার ৫৭৮ রান করার পরেও নিউজিল্যান্ড সফরে আপনাকে জাতীয় দলে নেওয়া হল না। আপনি হতাশ?
গম্ভীর: দেখুন, টিমে যদি আপনার জায়গা না হয়, তা হলে খারাপ লাগতে আপনার বাধ্য। কিন্তু ঠিক আছে। আমার কাজ হচ্ছে রান করা, সেটা যে কোনও রকম ম্যাচেই হোক না কেন। আমি তো বলব বেশি হতাশ লাগছে দিল্লি নক আউটে যেতে পারল না বলে। কারণ আমি ক্যাপ্টেন ছিলাম। নক আউটে দিল্লিকে তোলাই আমার লক্ষ্য ছিল। নিউজিল্যান্ড সফরে ভারতীয় দলে জায়গা হয়নি বলে যতটা হতাশ লেগেছে, তার চেয়ে অনেক বেশি লেগেছে এই ব্যাপারটায়। নির্বাচকদের নিশ্চয়ই মনে হয়েছে তাঁরা নিউজিল্যান্ডের জন্য যে পনেরো-ষোলো জনের স্কোয়াড বেছেছেন, জেতার জন্য সেটাই সেরা টিম। ভারতীয় দলের জন্য আমার শুভেচ্ছা রইল। আমি চাই ওরা নিউজিল্যান্ডে খুব ভাল খেলুক।
প্র: আপনার মনে হয় যে দক্ষিণ আফ্রিকা বা নিউজিল্যান্ডে মাত্র দু’টো করে টেস্ট ম্যাচ হওয়াটাই তৃতীয় ওপেনার হিসেবে আপনার যাওয়া আটকে দিল?
গম্ভীর: এটাও নির্বাচকদের সিদ্ধান্ত। তাঁরা মনে করেছেন, ভারতের হয়ে এই টিমটা সবচেয়ে ভাল। দেশের কাজটা এই টিমটা ঠিকঠাক করতে পারবে। আশা করছি ওরা সেটা পারবেও। আসল হচ্ছে ভারতের জয়টা। টিমে কে আছে, কে নেই সেটা বড় নয়।
প্র: ২০০৯ সালে নিউজিল্যান্ড টেস্ট সিরিজ জেতার পিছনে আপনি মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন। ভারতের ওটাই শেষ নিউজিল্যান্ড সফর ছিল। এই তরুণ টিমটাকে কোনও পরামর্শ দিতে চান?
গম্ভীর: যখন তুমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছ, পরিবেশ যে রকমই থাকুক না কেন, তোমাকে মানসিক ভাবে শক্ত হতে হবে। বিশেষ করে ওপেনার হলে। কারণ বিদেশে ব্যাপারটা কঠিন হয়। আশা করছি আমাদের ওপেনাররা ওখানে ভাল করবে।
প্র: রঞ্জিতে দিল্লির কোথায় এ বার গণ্ডগোলটা হল?
গম্ভীর: আমাদের প্রথম তিনটে ম্যাচের পর তিন পয়েন্ট ছিল। স্বাভাবিক ভাবেই আমরা তখন পয়েন্টের জন্য ঝাঁপিয়েছিলাম। কিন্তু পাঁচটার মধ্যে যখন চারটেতে সরাসরি জয়ের টার্গেট নিয়ে আপনি ঝাঁপাবেন, কাজটা মোটেও সহজ দাঁড়াবে না।
প্র: ওপেনার স্লটে আগে শিখর ধবনের সঙ্গে আপনার প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। এখন উন্মুক্ত চন্দও আস্তে আস্তে অভিজ্ঞ হচ্ছেন। টিমের ভিতরের এই যুদ্ধটা কতটা চ্যালেঞ্জিং?
গম্ভীর: আমি কারও সঙ্গেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি না। করিওনি। আমি এ সবে বিশ্বাসও করি না।
প্র: বীরেন্দ্র সহবাগ অনেক দিন আপনার ওপেনিং পার্টনার ছিলেন। কিন্তু ব্যাটিং অর্ডারে নীচে নেমে আসায় ওঁর ক্রিকেটে কী প্রভাব পড়ছে?
গম্ভীর: ব্যাটিং অর্ডারে নীচে যাওয়া সম্পূর্ণ ওর সিদ্ধান্ত। আমি বলতে পারব না এতে ওর ক্রিকেট অ্যাফেক্টেড হয়েছে কি না। কিন্তু ও এই সিদ্ধান্তটা নিয়েছে। আমি সেটা সমর্থনও করেছি। কারণ ও যা করেছে, ভেবেচিন্তেই করেছে।
প্র: আসন্ন আইপিএল নিলাম নিয়ে কী ভাবছেন? কেকেআরে থাকছেন?
গম্ভীর: এই মুহূর্তে বলতে পারি, সে রকম কোনও আলোচনা হয়নি। রিটেনশন ডেডলাইনের আরও সাত-আট দিন বাকি। নিলামের তো আরও একমাস বাকি। দেখা যাক কী হয়।
প্র: কিন্তু টিমের সঙ্গে কি থাকতে চান?
গম্ভীর: ওহ্, অবশ্যই আমি কলকাতাকে ভালবাসি। সব সময় সেটা বলেওছি। আমি কেকেআরকেও ভালবাসি। দেখা যাক।
প্র: আপনার পরবর্তী টার্গেট কী? ভারতীয় টিমে কামব্যাক করার ব্যাপারে কী ভাবছেন?
গম্ভীর: জানি না। দল নির্বাচন নিয়েও ভাবি না। এখন আমি চার সপ্তাহের বিশ্রাম নেব। সীমিত ওভারের ক্রিকেট মরসুম শুরু হওয়ার আগে। তার পর আইপিএল আছে। ইংল্যান্ড সফর আছে। ওখানে যদি কিছু না হয়, তা হলে হয়তো আবার কাউন্টি খেলব। কিন্তু এখন শুধু আসন্ন ছুটিটা নিয়েই ভাবছি। |