আসন ধরে ধরে জয়ের অঙ্ক কষছে বিজেপি
ক দিকে সব দায় কাঁধে নিয়ে মনমোহন সিংহ ‘নিষ্কলঙ্ক’ রাহুল গাঁধীর জন্য নিরাপদ জমি তৈরি করে দিচ্ছেন। অন্য দিকে ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে আম আদমি পার্টি। এই জোড়া চাপের মুখে যতটা সম্ভব আসন বাড়ানোই এখন পাখির চোখ নরেন্দ্র মোদীর। আসন ধরে ধরে জয়ের পথ খুঁজতেই এখন ব্যস্ত বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী।
মনমোহন সিংহ গত কাল যে ভাবে তাঁকে বেনজির ভাষায় আক্রমণ করেছেন, তা মোটেই ভাবাচ্ছে না মোদীকে। বরং তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের ইঙ্গিত, এর ফলে মেরুকরণের জমিতে রাজনৈতিক ফসল ঘরে তোলা যাবে বলে আশা মোদীর। কিন্তু মনমোহনের বিদায় ঘোষণার পর রাহুলের নতুন ইনিংসের সূচনা ও দিল্লি বিধানসভায় সরকার গড়ার পর লোকসভায় আপ কতটা হাওয়া তুলতে পারবে, তা নিয়েই এখন চিন্তায় গেরুয়া শিবির। বিজেপি নেতাদের অনেকের মত, মোদীকে নিশানা করার সঙ্গে সঙ্গে আপ-কে ঘিরে জনতার আবেগকেও কাজে লাগাতে চাইছে কংগ্রেস। তা না হলে মোদীর উদ্দেশে কড়া শব্দ প্রয়োগ করলেও প্রধানমন্ত্রী তুলনায় অনেক নরম অবস্থান নিয়েছেন আপ প্রসঙ্গে।
পৌষ সংক্রান্তিতে উড়বে মোদী ঘুড়ি। শনিবার ইনদওরে পসরা সাজাচ্ছেন দোকানি। ছবি: পিটিআই।
মোদীও বুঝতে পারছেন, তাঁকে ঘিরে যে হাওয়া তৈরি হয়েছিল মাস কয়েক আগে, তা এখন অনেকটাই বইছে আপ-কে ঘিরে। দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের আগে যেমন বোঝা যায়নি এই হাওয়ার পরিণতি কী হবে, তেমনই লোকসভাতেও এই হাওয়ার পরিণতি নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কায় তারা। সে কারণে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস তো বটেই, আপকেও বাড়তি গুরুত্ব দিয়েই এ বারে এগোতে চান বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপির এক শীর্ষ নেতা আজ বলেন, “দিল্লি বিধানসভায় আমরা আপ-কে গুরুত্ব না দিয়ে ভুল করেছি। এখন আর সেই ভুল হবে না। দিল্লিতে আপ-কে সামনে রেখে কংগ্রেস-বিরোধী ভোট ভাগ ঠেকাতে চেয়েছিল সনিয়া গাঁধীর দল। তা আংশিক সফল হলেও আদতে ভরাডুবি হয়েছে কংগ্রেসেরই। লোকসভাতেও সেই ছকে এগোলে ফের ডুববে ওরা।” ওই নেতার বক্তব্য, এখন বিজেপির লক্ষ্য, কংগ্রেসের বিকল্প বলতে মানুষ যাতে মোদীর কথা ভাবেন, তা নিশ্চিত করা। সে জন্য এখন আসন ধরে ধরে কৌশল তৈরি করছেন মোদী।
আসন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মোদীর কৌশল কী? এক, গত লোকসভা ভোটের ফল পর্যালোচনা করে মোদী দেখেছেন, ১৮টি রাজ্যে বিজেপি খাতাই খোলেনি! যার মধ্যে দিল্লি, হরিয়ানা, উত্তরাখণ্ড, জম্মু-কাশ্মীর-সহ উত্তর-পূর্বের সিংহভাগ রাজ্য রয়েছে। এই সব রাজ্যে খাতা খোলাই এখন বড় দায় মোদীর। মোদীর সঙ্গে পরামর্শ করে এই সব রাজ্যের নেতাদের রাজনাথ সিংহ নির্দেশ দিয়েছেন, ৪-৫টি আসন বেছে জোর দিতে। যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যও রয়েছে।
দুই, প্রতিটি আসনে প্রার্থী তালিকা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঘোষণা করতে। যাতে সেই প্রার্থীরা জনতার কাছে যাওয়ার যথেষ্ট সময় পান। একই লক্ষ্যে আপ-এর মতো অনেক দলই দ্রুত প্রার্থী ঘোষণা করতে চাইছে। নেতাদের মতে, আপ-এর সংগঠন নেই। তবু হাওয়া আছে। কিন্তু বিজেপির সংগঠন রয়েছে। প্রয়োজন ঘরে ঘরে গিয়ে মোদীর কথা বলা, ভোটারদের বুথমুখী করে তোলা দরকার। ইতিমধ্যেই ঐক্যের দৌড়, গ্রামে গিয়ে লোহা ও মাটি সংগ্রহের মতো কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। সেগুলি বুথ স্তর পর্যন্ত বাস্তবায়িত করাই এখন চ্যালেঞ্জ।
তিন, নতুন ভোটারদের যত বেশি সম্ভব নিজেদের দিকে টানা। বিজেপির হিসেব, গত পাঁচ বছরে প্রায় বারো কোটি নতুন নাম ভোটার তালিকায় উঠেছে। এদের সঙ্গে পেলেই ভোটের অঙ্ক বদলে যাবে। বিজেপির এক নেতার কথায়, “যে জনতা কোনও রাজনৈতিক দলকেই আর বিশ্বাস করছেন না, তাঁরা এখন ভোটযন্ত্রে ‘নোটা’র বোতাম না টিপে কেজরিওয়ালকে ভোটটা দিতেই পারেন। আমাদের লক্ষ্য, সেটা আটকানো এবং একই সঙ্গে মোদীর প্রতি মানুষের আস্থা ফেরানো।”
চার, বহু কেন্দ্রেই বিজেপির বর্তমান সাংসদদের উপরে মানুষের ক্ষোভ রয়েছে। তাঁদের বদলে নতুন মুখ আনার নির্দেশ দিয়েছেন মোদী। এই অঙ্কেই সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা ভোটে বাজিমাত করেছেন শিবরাজ সিংহ চৌহান। প্রাথমিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, গোটা দেশে এ রকম অন্তত ৩০-৪০ শতাংশ প্রার্থীকে বদল করা দরকার। বিজেপি চায়, এ বারের ভোট হোক পুরোপুরি মোদীকেন্দ্রিক। যেমন দিল্লি বিধানসভায় আপ-এর সিংহভাগ প্রার্থীকেই কেউ চিনতেন না। সেখানে ভোট হয়েছে শুধুই কেজরিওয়ালের নামে। রাজনাথের কথায়, “আমরা জনতার কাছে আবেদন জানাব, কোথাও কোনও প্রার্থী বিচার না করে শুধু মাত্র মোদীর নামে ভোট দিন।”
পাঁচ, দুশোর বেশি আসন পেতে মোদীর বড় ভরসা দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক ও গুজরাত। এই সব রাজ্যে বিজেপির আসন বাড়ার সম্ভাবনা আছে, মনে করছেন দলেরই অনেকে। এই রাজ্যগুলিতে জোর দিতে চান মোদী। সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়ের জয়কেও কাজে লাগাতে চান। দলের লক্ষ্য, গত লোকসভায় জেতা আসনগুলি ধরে রেখে নতুন অন্তত একশো আসন দখল করা।
ছয়, এর পাশাপাশি চলবে রাজনৈতিক প্রচার। মনমোহন যতই রাহুলের জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করুন, বিজেপি দুর্নীতি থেকে মূল্যবৃদ্ধি রোধে কেন্দ্রের ব্যর্থতার দায় কংগ্রেসের যুবরাজের ঘাড়েও ঠেলতে চায়। একই সঙ্গে অরবিন্দ কেজরিওয়াল কেন কংগ্রেসের দুর্নীতি প্রসঙ্গে নীরব, তা নিয়েও প্রচার চালাবে তারা। কংগ্রেস-আপ যোগসাজশ নিয়ে প্রচার শুরু করেছে বিজেপি। লোকসভা ভোটে আপ তিনশো আসনে লড়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। তাকে কটাক্ষ করে বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “হিম্মত থাকলে সাড়ে পাঁচশো আসনেই লড়ুক না ওরা! বাকি আসন কি কংগ্রেসের জন্য ছেড়ে রাখছে আপ?”
আগামিকাল দিল্লি আসছেন মোদী। যোগগুরু রামদেবের মঞ্চ থেকে তিনি ও রাজনাথ সভা করবেন। এই মঞ্চে কংগ্রেসের দুর্নীতি নিয়ে সরব হবেন মোদী। হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংহের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে মনমোহন ও রাহুল যে ভাবে নীরব, তা নিয়েও মুখ খুলতে পারেন তিনি। আর দাঙ্গা নিয়ে মোদী সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মোকাবিলায় শাহনওয়াজ হোসেনের মতো সংখ্যালঘু মুখকে আজ থেকেই কাজে লাগাতে শুরু করেছে বিজেপি।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.