|
|
|
|
লড়বেন না কেজরিওয়াল, লোকসভায় ৩০০ আপ প্রার্থী
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
৪ জানুয়ারি |
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে তাঁর দল গোটা দেশে তিনশোটি আসনে লড়বে। তবে তার মধ্যে কোনওটিতেই তিনি নিজে যে প্রার্থী হয়ে দাঁড়াবেন না, আজ তা সরাসরি জানালেন আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী জানান, আপ প্রার্থীদের জেতাতে দেশ জুড়ে প্রচার চালাবেন তিনি।
দিল্লিতে ক্ষমতা দখলের পর আপ-এর পরবর্তী লক্ষ্য, লোকসভা নির্বাচনে ভাল ফল করা। সে জন্য ইতিমধ্যেই দেশ জুড়ে সদস্য সংগ্রহ অভিযানে নেমেছেন আপ নেতৃত্ব। দলীয় সূত্রের খবর, ওই কাজে বিশেষ ভাবে নজর দেওয়া হয়েছে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাতে। ইতিমধ্যেই ওই রাজ্যে মোদী ঘনিষ্ঠ মন্ত্রী আনন্দীবেন পটেলের স্বামী মফতলাল পটেল আপ-এ যোগ দিয়েছেন। মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে আনন্দীবেন গুজরাতের দায়িত্ব নিতে পারেন বলে ধারণা অনেকের। ফলে তাঁর স্বামীর যোগদানে শুধু আপ নেতৃত্ব নন, উৎসাহিত বিরোধী কংগ্রেস শিবিরও। ওই রাজ্যে বিজেপি-বিরোধী শিবিরের অন্যতম মুখ মল্লিকা সারাভাইকে আপ-এ টানতে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু করেছেন অরবিন্দরা। দলীয় সূত্রের দাবি, গুজরাতে ইতিমধ্যেই প্রায় ৭০ হাজার মানুষ আপ-এর সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। লোকসভা নির্বাচনে গুজরাতের সবক’টি আসন জেতার অঙ্ক কষছে বিজেপি। কিন্তু আপ নেতৃত্ব যে ভাবে মোদীর রাজ্যে থাবা বসাতে সক্রিয়, তাতে রীতিমতো আশঙ্কায় তারা। বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, কংগ্রেস-বিরোধী ভোটে ভাগ বসিয়ে আসলে বিজেপিকেই বিপাকে ফেলতে চায় কেজরিওয়ালের দল।
আপ নেতৃত্ব অবশ্য এই মুহূর্তে দলের বিস্তারেই বেশি গুরুত্ব দিতে চান। শুধু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নয়, দলের ভাবমূর্তির কথা মাথায় রেখে সমাজের বিভিন্ন স্তরে প্রতিষ্ঠিতদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা শুরু করেছেন আপ নেতৃত্ব। দলের এক নেতা জানান, “ইতিমধ্যেই ইনফোসিসের প্রাক্তন কর্তা ভি বালকৃষ্ণন ও শিল্পজগতের অন্যতম পরিচিত ব্যক্তিত্ব ক্যাপ্টেন গোপীনাথ আমাদের সঙ্গে এসেছেন। দল চাইছে, এ ধরনের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা যাতে স্বেচ্ছায় সমাজ পরিবর্তনে এগিয়ে আসেন।”
আপ নেতারা জানিয়েছেন, প্রথমে ১০০টি লোকসভা আসনে লড়ার কথা ভেবেছিলেন তাঁরা। কিন্তু দিল্লির ফলের পর সমর্থকদের চাপ বেড়েছে। তাই তিন গুণ আসনে লড়ার কথা ভাবছেন তাঁরা। আপ নেতা প্রশান্ত ভূষণ বলেন, “দিল্লির ফল মানুষের মধ্যে উৎসাহের সৃষ্টি করেছে। নতুন বিকল্পের সন্ধান দিয়েছে। তাই ঠিক হয়েছে, যত বেশি সম্ভব রাজ্যে ভোটে লড়বে দল।”
রাজ্য স্তরে কী ভাবে প্রার্থী বাছাই হবে, তা নিয়ে এখনও মুখ খুলতে রাজি নন দলের রাজনীতি বিষয়ক কমিটির সদস্য সঞ্জয় সিংহ। তাঁর কথায়, “বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। রাজ্যস্তরে কী ভাবে এগোনো হবে তা নিয়ে আগামিকাল চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি হবে। আগামী এক মাসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবে দল।”
কেজরিওয়ালকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী করার দাবি উঠেছিল দলের মধ্যেই। আজ এ নিয়ে সকালে যোগেন্দ্র যাদব বলেন, “আমি চাই কেজরিওয়াল প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হন। কারণ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সব যোগ্যতা তাঁর আছে।” পরে আবার প্রশান্ত বলেন, “এ বিষয়ে আজ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না।”
আপ সূত্রে খবর, শনিবার সন্ধ্যায় দলীয় বৈঠকে অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, তিনি লোকসভা ভোটে প্রার্থী হবেন না। কংগ্রেস ও বিজেপি, দু’দলকে সরিয়ে আম আদমির সরকার গড়তে কৌশল তৈরি ও প্রচারের কাজ করতে চান তিনি। তবে দলীয় সূত্রে খবর, ভোটের ফল অনুকূল হলে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিষয়ে অরবিন্দের উপরে চাপ বাড়াতে পারে আপ নেতৃত্বের একটি অংশ।
এই পরিস্থিতিতে বিজেপির দাবি, প্রতিষ্ঠান-বিরোধী ভোটে ভাগ বসিয়ে আসলে কংগ্রেসেরই সুবিধে করে দেবে আপ। এক বিজেপি নেতার মতে, আপ দিল্লিতে যতটা শীলা দীক্ষিতের বিরুদ্ধে সরব ছিল, সার্বিক ভাবে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ততটা সরব হয়নি। তা ছাড়া দেখা যাচ্ছে, কংগ্রেসের পথ ধরেই মোদী তথা বিজেপি নেতৃত্বকে আক্রমণ করছে আপ। ওই নেতার কথায়, “আসলে কংগ্রেসের হাতে তামাক খাচ্ছেন কেজরিওয়াল। তাই দিল্লিতে দু’দল এক সঙ্গে সরকারও গড়েছে।”
প্রত্যাশিত ভাবেই এই যুক্তি উড়িয়ে দিচ্ছেন আপ নেতৃত্ব। প্রশান্ত ভূষণের কথায়, “রাহুল গাঁধী বা নরেন্দ্র মোদীর লাভ বা লোকসান দেখতে আপ নির্বাচনে নামেনি।”
তবে অনেকের মতে, বিজেপির আশঙ্কা অমূলক নয়। আপ কংগ্রেস-বিরোধী ভোটে ভাগ বসালে আখেরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে বিজেপিরই। কংগ্রেস-বিরোধী অনেকে আবার বিজেপি তথা মোদীকে পছন্দ করেন না। তাঁরা বিকল্প হিসেবে আপকে বেছে নিতেই পারেন।
সব মিলিয়ে আপ যে ভোটের মুখে মোদীর উদ্বেগ বাড়াবে, তাতে সন্দেহ নেই সংশ্লিষ্ট কোনও শিবিরেরই। |
পুরনো খবর: আস্থা কেজরিওয়ালেই, আজ স্পিকার ভোট |
|
|
|
|
|