|
|
|
|
আস্থা কেজরিওয়ালেই, আজ স্পিকার ভোট
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
২ জানুয়ারি |
সংশয়ে ছিলেন তিনি নিজেই। একাধিক বার প্রকাশ্যেও সেই সংশয় জানিয়েছেন তিনি। যদিও আজ সমস্ত সংশয়-শঙ্কা উড়িয়ে দিনের শেষ হাসিটা হাসলেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালই। কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে অনায়াসে প্রথম আস্থা ভোটে উতরে গেল তাঁর দল। কংগ্রেস সমর্থন তুলে না নিলে ছ’টা মাস দিল্লির মসনদে থাকছে আম আদমি পার্টি (আপ)-র সরকার।
গত শনিবার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন অরবিন্দ। তবে তাঁর আশঙ্কা ছিল, কংগ্রেস ও বিজেপি শেষ মুহূর্তে হাত মিলিয়ে আস্থা ভোটে সরকার ফেলে দিতে পারে। তাই এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করার সিদ্ধান্ত নেয় আপ। হাতে যে পাঁচ দিন সময় পেয়েছিলেন কেজরিওয়াল, তার মধ্যেই বিনামূল্যে জল, অর্ধেক দামে বিদ্যুতের মতো বড় মাপের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালনে তৎপর হন। দলের পরিকল্পনা ছিল, কোনও কারণে সরকার পড়ে গেলেও পাঁচ দিনের খতিয়ান তুলে ধরে ফের জনতার দরবারে হাজির হবে দল। যদিও আজকের পরে এখনই আর সে প্রয়োজন পড়ছে না। বিজেপি ও শিরোমণি অকালি দলের মোট ৩২ জন বিধায়কের ভোট বিরুদ্ধে পড়া সত্ত্বেও দলের ২৮ জন এবং কংগ্রেসের ৭, জেডিইউ ও নির্দলের ২ বিধায়কের সমর্থন নিয়ে আস্থা ভোটে জিতে যান কেজরিওয়াল। ভোটের পর মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, “সরকার জনহিতে যে ভাবে কাজ করছে ভবিষ্যতেও জারি থাকবে।”
সংবিধান বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, আস্থা ভোটে জয়ী হওয়ায় আগামী ছয় মাসের মধ্যে আনাস্থা আনতে পারবে না বিরোধীরা। কংগ্রেস যদি সমর্থন তুলে নেয়, তবে অনাস্থা প্রস্তাব আনা সম্ভব। আর তা না হলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে সরকার হারানোর বিপদ থাকছে না আপের সামনে। |
দিল্লি বিধানসভায় অরবিন্দ কেজরিওয়াল। বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই। |
আর সেই জন্যই মনে করা হচ্ছে, অরবিন্দের মূল চ্যালেঞ্জ শুরু হল আজ থেকে। কংগ্রেস ও বিজেপি দু’দলই মনে করে, বিরোধী দল হিসাবে নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দেওয়া যতটা সোজা, ক্ষমতা হাতে পাওয়ার পর তা পূরণ করা ততটাই কঠিন। তাই বিরোধী দল বিজেপি তো বটেই, সরকার-সমর্থক কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা অরবিন্দ সিংহ লাভলি আজ বলেন, “সরকার যত দিন মানুষের জন্য কাজ করবে, প্রতিশ্রুতি পালন করবে, তত দিন কংগ্রেস আপের সঙ্গে রয়েছে। সেটা না হলে সমর্থন নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা করবে দল।”
সুতরাং বল এখন অরবিন্দের কোর্টে। যে আম আদমির স্বার্থ রক্ষার দাবি করে তিনি ক্ষমতায় এসেছেন, তাদের স্বার্থরক্ষার দায় অরবিন্দেরই । তা ছাড়া দিল্লি বিধানসভার পর আসন্ন লোকসভা নির্বাচনেও দেশব্যাপী ভাল ফল করতে আগ্রাসী নীতি নিয়েছে দল। চলছে সদস্য সংগ্রহ অভিযান। আপ প্রথমে ১০০ লোকসভা নির্বাচনে লড়ার কথা ভাবলেও দিল্লির পরে সেই সংখ্যা বাড়িয়ে তিন গুণ করতে চাইছেন দলীয় নেতৃত্ব। তাগিদ রয়েছে অরবিন্দদের পক্ষ থেকেও। তিনি ভাল করেই জানেন, আগামী ছয় মাস অর্থাৎ লোকসভা ভোটের আগে যদি সুশাসনের ছবিটি তুলে ধরেন, তবে আখেরে দলেরই লাভ। সে ক্ষেত্রে দিল্লি মডেলকে তুলে ধরে দেশবাসীর সামনে ভোট চাওয়াটা সোজা হবে।
বিভিন্ন বিষয়ে কেজরিওয়াল ও তাঁর দলের নীতি নিয়ে আজ প্রশ্ন তোলেন বিজেপি নেতা হর্ষবর্ধন। কাশ্মীরে গণভোট, বাটলা হাউস সংঘর্ষে মৃত পুলিশকর্মীর মৃত্যুকে ঘিরে আপ নেতৃত্বের বিতর্কিত মন্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে কেজরিওয়ালকে আক্রমণ করেন তিনি।গুরু অণ্ণা হজারের সঙ্গে কেজরিওয়ালের দূরত্বকে কেন্দ্র করেও প্রশ্ন তোলা হয়। ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ কংগ্রেসের সাহায্য নিয়ে সরকার গড়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন হর্ষবর্ধন।
নিজের বক্তৃতায় সে সব অভিযোগের উত্তর দেওয়ার কোনও চেষ্টাই করেননি কেজরিওয়াল। রাজনীতিতে কার্যত নতুন হলেও পরিণতমনস্ক নেতার মতোই তিনি বলেন, “কোনও দলের বিরুদ্ধে আমার কিছু বলার নেই। আমি চাই দিল্লির উন্নতিতে দলের ১৭ দফা প্রকল্প রূপায়ণে সকলে এগিয়ে আসুক।” একই সঙ্গে কোন পরিস্থিতির শিকার হয়ে শেষ পর্যন্ত তাঁর মতো এক জন আম আদমিকে রাজনীতিতে নামতে হল, বা দল দিল্লিতে কী করতে চায়, সেই বিষয়গুলি ব্যাখ্যার দিকেই জোর দেন তিনি। কেজরিওয়াল বলেন, “দুর্নীতি দূর করতে আমার সকলের সাহায্য প্রয়োজন। শুধু সাত মন্ত্রী বা ৭০ জন বিধায়ক নয়। দেড় কোটি দিল্লিবাসীর সাহায্য লাগবে আমার।”
আপাতত প্রথম লড়াই শেষ। কাল স্পিকার নির্বাচন। কংগ্রেস আপের প্রার্থীকে সমর্থন না করলে বিজেপি প্রার্থীর জয় অনিবার্য। কিন্তু তার পরেও কংগ্রেস নেতৃত্বের মধ্যে আপের প্রার্থীকে সমর্থন করা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। একাংশের বক্তব্য, সব বিষয়ে সমর্থন না জানিয়ে আপের সঙ্গে দর কষাকষির রাস্তা খুলে রাখা দরকার। অন্য অংশের যুক্তি, আপ প্রার্থীকে সমর্থন না করে কংগ্রেসের কোনও লাভ নেই।
কারণ বিজেপির হাতে বিধানসভার নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে সে ক্ষেত্রে।
এই পরিস্থিতিতে কাল সকালেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে কংগ্রেস। তবে তা আপ-এর পক্ষে যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
|
বিতর্কে এ বার আপের টুপি |
দিল্লি বিধানসভায় এ বার বিতর্ক হল আম আদমি পার্টির (আপ) গাঁধী টুপি নিয়ে। ঝাড়ু চিহ্ন আঁকা গাঁধী টুপি ওই দলের পরিচিতি। বুধবার সেই টুপি পরেই আপ বিধায়করা বিধানসভায় আসেন। আপত্তি জানিয়ে বিজেপি বিধায়করা বলেন, ঝাড়ু চিহ্ন বা ম্যায় হুঁ আম আদমি লেখা গাঁধী টুপি পরে আসা বিধানসভার নিয়মবিরুদ্ধ। সেই আপত্তি মেনে বৃহস্পতিবার টুপি না পরেই আসেন আপ বিধায়করা। কিন্তু অধিবেশন দেখতে আসা আপ সমর্থকদের মাথায় ওই টুপি ছিল। স্পিকারের কাছে আপত্তি জানান বিজেপি বিধায়ক আর পি সিংহ। আপ বিধায়করা কিছু বলেননি। কিন্তু বিজেপির যুক্তির বিরুদ্ধে সরব হন জেডিইউ বিধায়ক শোয়েব ইকবাল। স্পিকারের মধ্যস্থতায় সে যাত্রা গোলমাল মিটলেও পরে ফের ঝামেলা হয়। |
পুরনো খবর: গৃহহীনদের রাত্রিবাসের ব্যবস্থা করল আপ সরকার
|
|
|
|
|
|