|
|
|
|
বামেদের মতোই ভাবমূর্তি আপের, বলছেন কারাট
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
২ জানুয়ারি |
দিল্লির ভোটের আগেও আম আদমি পার্টিকে (আপ) নিয়ে সিপিএমের নেতাদের মুখে ছিল তাচ্ছিল্যের সুর। এখন সেই আপের সঙ্গে তুলনা টেনেই নিজেদের গরিমা প্রচারে নামতে হচ্ছে সিপিএমকে। সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের যুক্তি, অরবিন্দ কেজরিওয়ালদের সাধারণ জীবনযাত্রা, দুর্নীতিমুক্ত ভাবমূর্তি এবং কাজের ধরন আসলে কমিউনিস্ট নেতাদের মতোই।
বামেরা বরাবর দাবি করেছেন, কংগ্রেস ও বিজেপির বাইরে একমাত্র তাঁরাই বিকল্প নীতির সন্ধান দিতে পারেন। শুধু দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসা নয়, অরবিন্দের দল যে নিজেদের কংগ্রেসের ও বিজেপির বাইরে ‘নির্ভরযোগ্য বিকল্প’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে, সে কথা মানছে সিপিএম। পাশাপাশি যে গরিব, মধ্যবিত্ত মানুষের দল হিসেবে সিপিএম নিজেদের দাবি করে, অরবিন্দ যে তাদেরও সমর্থন নিয়েই মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসেছেন, তা-ও মেনে নিয়েছেন কারাট।
কেবল দিল্লিতে সরকার গড়েনি আপ। বিদ্যুৎ বিল কমানো নিয়ে তাদের পদক্ষেপের ফলে একই ধরনের দাবি শুরু হয়েছে অন্য রাজ্যে। এখানেও সেই গরিব ও মধ্যবিত্তের স্বার্থ নিয়েই আপের রাজনীতি অন্য দলগুলির উপরে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে, আপকে নিয়ে নতুন ভাবে ভাবনাচিন্তা করচ্ছেন সিপিএম নেতৃত্ব।
আপ নিয়ে কলম ধরেছেন কারাট। দলীয় মুখপত্রে প্রকাশিতব্য এক নিবন্ধে স্বীকারোক্তি, “আপের উত্থান অনন্য। কারণ তারা প্রথমে মধ্যবিত্ত শ্রেণির সমর্থন জোগাড় করেছে, পরে মেট্রোপলিটন শহরের মধ্যেই গরিবদের মধ্যে প্রভাব ছড়িয়েছে। এই জায়গাটা তৈরি করেছে দিল্লিতে, যেখানে ৫ দশক কংগ্রেস ও বিজেপির দ্বিমেরুর রাজনীতি চলেছে।” বামপন্থী নেতা অশোক মিত্রের মতো অনেকেই বলছেন, কমিউনিস্টদের যে জায়গাটা নেওয়ার কথা ছিল, আপ আসলে সেই জায়গাটা দখল করেছে। এ জন্য দলীয় নেতৃত্বের ভাবনাচিন্তার অভাবকেই দায়ী করছেন অশোকবাবু।
কিন্তু সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক আপের উত্থানকে ইতিবাচক সঙ্কেত হিসেবেই দেখছেন। কারাটের যুক্তি, “সাধারণত রাজনীতিবিমুখ মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে জড়িয়ে ফেলা এবং আদর্শের টানে তরুণদের সক্রিয় রাজনীতিতে নিয়ে আসাটা অন্যতম সাফল্য।”
সিপিএমের মধ্যেই প্রশ্ন উঠছে, আপ যে কাজ করে দেখাতে পারছে, তা সিপিএম পারছে না কেন? মূল্যবৃদ্ধি থেকে শুরু করে দুর্নীতির মতো সমস্যা নিয়ে আন্দোলন করেই আপের উত্থান। এ বিষয়ে মানুষ সিপিএমের উপর ভরসা করতে পারছেন না কেন, সেই প্রশ্নও উঠেছে। তা নিয়ে গত মাসে আগরতলায় কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকেও বিমান বসুরা বলেন, আপের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে হবে বামপন্থীদেরও।
আপের তুলনায় সিপিএমের ব্যর্থতা নিয়ে কারাট নিরুত্তর। তিনি নিবন্ধে জানিয়েছেন, সিপিএম বরাবরই পার্টির সদস্যদের লেভি এবং জনগণের থেকে অল্প অল্প করে তোলা চাঁদার টাকায় নির্ভর করেছে। অরবিন্দরা সরকারি বাংলো নিচ্ছেন না। ইএমএস নাম্বুদিরিপাদ, নৃপেন চক্রবর্তীরাই উদাহরণ তৈরি করেছেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের উদাহরণ টেনে কারাট বলেছেন, তিনি মন্ত্রী থাকাকালীন এবং পরে মুখ্যমন্ত্রী হয়েও দু’কামরা ফ্ল্যাটে থেকে এসেছেন। ভি এস অচ্যুতানন্দনের ভাবমূর্তিতে দুর্নীতির আঁচড় পরেনি। ত্রিপুরার মাণিক সরকার ‘দরিদ্রতম মুখ্যমন্ত্রী’ হিসেবে গোটা দেশে পরিচিত।
যাদের সঙ্গে তুলনা টেনে নিজেদের গরিমান্বিত করছেন সিপিএম নেতৃত্ব, সেই আপ নেতৃত্ব সিপিএম সম্পর্কে এতটা সদয় নন। আপ নেতা প্রশান্ত ভূষণ বলেন, “সিপিএম নেতৃত্বে দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে। অতীতে পশ্চিমবঙ্গে বাম সরকার কীভাবে কাজ করেছে, তা দেখেছি।” তাই জাতীয় স্তরে সিপিএমের সঙ্গে হাত মেলানোর সম্ভাবনাও খারিজ করে দিয়েছেন প্রশান্ত। সম্প্রতি কেরলে গিয়ে সিপিএমের প্রবীণ নেতা ভি এস অচ্যুতানন্দনের সঙ্গে বৈঠক করে এসেছেন তিনি। দলীয় নেতৃত্বের প্রতি বিরক্ত ভি এস আপে যোগ দেবেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। প্রশান্ত সেই জল্পনা উড়িয়ে দিয়েছেন।
আপের সঙ্গে জাতীয় স্তরে বোঝাপড়া নিয়ে এখনই ভবিষ্যৎবাণীতে যেতে নারাজ কারাটও। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আপের অবস্থান কী? নয়া উদারবাদের বিরুদ্ধে আপের বিকল্প নীতি কোথায়? কারাট মনে করছেন, যেহেতু আপের সমর্থকদের মধ্যে ধনী-গরিব সব শ্রেণিই রয়েছে, তাই তাঁরা এ বিষয়গুলি এড়িয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আপ নেতৃত্বের যুক্তি, তাঁরা খুচরো ব্যবসায়ে বিদেশি বিনিয়োগের বিরুদ্ধে। কৃষকদের জমি জোর করে অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে। কোনও সমস্যার সমাধান যদি বামপন্থায় থাকে, তা হলে তাঁরা সেটাই নেবেন। দক্ষিণপন্থায় থাকলেও সেটা গ্রহণ করবেন। |
|
|
|
|
|