|
|
|
|
প্রতিশ্রুতির ফাঁদে ডুপ্লেও ছোঁবেন না অরবিন্দ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
৪ জানুয়ারি |
বাংলো নেবেন না বলেছিলেন আগেই। প্রতিশ্রুতির ফাঁদে পড়ে এ বার ডুপ্লে ফ্ল্যাটও হাতছাড়া হল দিল্লির নয়া মুখ্যমন্ত্রীর।
শুক্রবার পর্যন্ত ঠিক ছিল মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নতুন ঠিকানা হতে চলেছে মধ্য দিল্লির ভগবানদাস রোডের সরকারি ফ্ল্যাট। ঠিক হয়েছিল, পাঁচ কামরার ডুপ্লে ওই দু’টি ফ্ল্যাটের একটিতে সপরিবার থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল। অন্যটি ব্যবহৃত হবে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর হিসেবে। ফ্ল্যাটটি কেমন, তাতে কেমন সুবিধা রয়েছে, আর কী থাকা দরকার সে সব খতিয়ে দেখতে শুক্রবারই ওই ফ্ল্যাটটি দেখতে আসেন কেজরিওয়ালের বাবা-মাও। এমনকী গতকাল তিনি কেন চার কামরার ফ্ল্যাটের পরিবর্তে পাঁচ কামরার ফ্ল্যাটে চলে আসবেন তার পক্ষে যুক্তিও তুলে ধরেন দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “এখন চার কামরার ফ্ল্যাটে থাকি। নতুন বাড়িতে থাকবে পাঁচ কামরা। মাত্র একটি ঘর বেশি। অন্য বাড়িটিতে দফতর খোলা হবে। এতে মানুষের জন্য কাজ করতে সুবিধে হবে।”
কিন্তু চব্বিশ ঘন্টা পরেই বিভিন্ন শিবির থেকে প্রশ্ন ওঠায় আজ ওই ডুপ্লে ফ্ল্যাটে থাকার সিদ্ধান্ত খারিজ করে দেন কেজরিওয়াল। |
মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নতুন ঠিকানা হওয়ার কথা ছিল
এই ডুপ্লে ফ্ল্যাটই। শনিবার প্রেম সিংহের তোলা ছবি। |
কেজরিওয়াল ও তাঁর দলের নেতারা আম আদমির প্রতিনিধি। আমজনতার সঙ্গে তাঁদের কোনও পার্থক্য নেই। নির্বাচনের আগে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েই দিল্লিতে ক্ষমতায় এসেছে আম আদমি পার্টি (আপ)। আর এখন ক্ষমতা পেতেই আপের শীর্ষ নেতার ভোলবদল নিয়ে গুঞ্জন ওঠে দলের মধ্যেই।
কেজরিওয়ালকে ওই ফ্ল্যাট না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন তাঁর একাধিক শুভার্থী। সমালোচনা শুরু হয় বিরোধী শিবির থেকেও। আজ কেজরিওয়াল বলেন, “আমার শুভার্থীরা ওই ফ্ল্যাট নিতে নিষেধ করেছেন। আমি তাঁদের কথা শুনে ওই সিদ্ধান্ত বাতিল করেছি।” দিল্লি প্রশাসন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই আর কে পুরম, লোদী রোড ও ইন্ডিয়া গেট সংলগ্ন পান্ডারা রোডের মতো একাধিক জায়গায় কেজরিওয়ালের জন্য ছোট বাড়ি দেখা হচ্ছে।
অনেকের মতে, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালন করা কঠিন তা কেজরিওয়ালকে আগেই বলেছিল কংগ্রেস ও বিজেপি। এখন আপ নেতা নিজেই তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। ভবিষ্যতেও কেজরিওয়ালের প্রতিটি পদক্ষেপের উপর বিরোধী দল, সংবাদমাধ্যম ও আম-জনতা নজর রাখবে বলেই মনে করছেন আপ নেতৃত্ব। তাই লোকসভা ভোটের আগে মেপে পা ফেলতে চাইছেন তাঁরা।
ডুপ্লে ফ্ল্যাট নিয়ে সমালোচনা একেবারে এড়াতে পারেননি কেজরিওয়াল। বিজেপি সাংসদ বলবীর পুঞ্জ ইতিমধ্যেই বলেছেন, আপ নেতার কথা ও কাজের ফারাক রয়েছে।
অন্য রাজ্যে চিত্রটি কেমন? বিহারে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেও বেশ কিছু দিন লালু প্রসাদ প্রথমে তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে সরকারি আবাসনে থাকতেন। কিন্তু পরে তিনি চলে যান ১, অ্যানে মার্গের সরকারি বাংলোয়। ক্ষমতায় আসার পরে নীতীশ কুমারকে ওই বাংলো ছেড়ে দিতে হলেও বিরোধী নেত্রী হিসাবে লালুপত্নী রাবড়ীর জন্য যে বাংলোটি বরাদ্দ হয়েছে সেটিও কম বড় নয়। কম যান না গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। গাঁধী নগরে বিশাল সরকারি বাংলো বরাদ্দ রয়েছে তাঁর জন্য।
পশ্চিমবঙ্গে পরিস্থিতি কিছুটা আলাদা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম থেকেই স্থায়ী ঠিকানা কালিঘাটের হরিশ চ্যাটার্জী স্ট্রিটের ছোট্ট ঘর। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও তাঁর পাম অ্যাভিনিউয়ের দু’কামরার ফ্ল্যাট থেকে অন্যত্র উঠে যাননি।
বিজেপি সাংসদ শাহনওয়াজ হুসেনের মতে, “এ ধরনের উদাহরণ অনেক রয়েছে। আমাদের দলেও রয়েছে। গোয়ার বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পারিকর অত্যন্ত সাদামাটা ভাবে থাকেন। ন্যূনতম নিরাপত্তারক্ষী বরাদ্দ রয়েছে তাঁর জন্য।” তাঁর কটাক্ষ, “সাধারণ মানুষের মতো থাকাকে যে প্রচারের হাতিয়ার করে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা যায় তা দেখিয়েছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। আর তা করতে গিয়ে নিজের ফাঁদেই পড়েছেন।”
শুধু বাড়িই নয়। বিতর্ক তৈরি হয়েছে সরকারি গাড়ি ব্যবহার নিয়েও। নির্বাচনের আগে আপের দাবি ছিল, তাঁর দলের কোনও মন্ত্রী বা বিধায়ক সরকারি গাড়ি ব্যবহার করবেন না। মুখ্যমন্ত্রী এখনও পর্যন্ত ব্যক্তিগত গাড়িই ব্যবহার করেছেন। কিন্তু মণীশ সিসৌদিয়া বা রাখি বিড়লার মতো মন্ত্রিসভার সদস্যদের দেখা গিয়েছে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করতে। যা নিয়েও ফের বিতর্কের মুখে পড়তে হয়েছে আপকে। পরিস্থিতি সামলাতে শেষ পর্যন্ত হাল ধরেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। কেজরিওয়াল দাবি করেছেন, “আমরা বলেছিলাম লাল বাতি গাড়ি ব্যবহার করব না। কিন্তু সরকারের কাজে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করা হবে।”
কেজরিওয়াল বিতর্ক মেটাতে চেষ্টা করেছেন বটে। কিন্তু অনেকেই মনে করছেন, আপনি আচরি ধর্ম পালন করতে গিয়ে বেশ ফ্যাসাদে পড়ে গিয়েছেন কেজরিওয়াল।
|
পুরনো খবর: ডুপ্লে ফ্ল্যাটে অরবিন্দ |
|
|
|
|
|