জলপাইগুড়ি ও মালদহ-কাণ্ডে গ্রেফতার তিন
লপাইগুড়িতে বিস্ফোরণ ও মালদহে বাসে হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য তল্লাশি জারি রয়েছে উত্তরবঙ্গের নানা জেলায়। সেই সুবাদে বৃহস্পতিবার ডুয়ার্সের সলসলাবাড়ি থেকে এক মহিলা সহ ২ জনকে ও মালদহ জেলায় এক আরেকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, ডুয়ার্সে ধৃতদের নাম সন্তোষ রায় ও জয়মতি রায়। দু’জন সম্পর্কে ভগ্নিপতি ও শ্যালিকা। পুলিশের দাবি, ধৃত সন্তোষ কেএলও শিবিরে চতুর্থ দফায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। সন্তোষের শ্যালিকার নাম জয়মতি। জয়মতির দাদা নারায়ণ রায় ওরফে তরুণ থাপা বর্তমানে আত্মগোপন করে রয়েছেন।
(বাঁ দিকে) জলপাইগুড়িতে সন্তোষ রায় ও (ডান দিকে)
মালদহে ছোটন রায়। বৃহস্পতিপার তোলা নিজস্ব চিত্র।
পুলিশ জানিয়েছে, গত ২৬ ডিসেম্বর জলপাইগুড়ির বিস্ফোরণের পর বেলাকোবার মন্থনীর বাড়ি ছেড়ে জয়মতী আলিপুরদুয়ারে ভগ্নিপতির বাড়িতে গিয়ে থাকতে শুরু করেন। সম্প্রতি শিলিগুড়ি থেকে দীপক রায় নামে এক কেএলও সদস্যকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। জেরার পরে পুলিশ দাবি করে, আত্মগোপনকারী কেএলও সদস্য নারায়ণের সঙ্গে দীপকের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। জলপাইগুড়ি বিস্ফোরণ কাণ্ডের সঙ্গেও দীপক জড়িত বলে পুলিশের সন্দেহ। পুলিশের তদন্তকারী অফিসারদের কয়েকজন জানান, নারায়ণের বোন এবং ভগ্নিপতিকে গ্রেফতার করায় জলপাইগুড়ি বিস্ফোরণ কাণ্ডে টম অধিকারীর সঙ্গে নারায়ণ তরফে তরুণ থাপার নামও জড়িয়ে গেল। পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে দুজনকে গ্রেফতারের পরে নারায়ণের অবস্থান সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য মিলেছে। বিস্ফোরণের দু’দিন আগে জলপাইগুড়ির জেলাশাসকের দফতরেও দু’জন উপস্থিত হন বলে পুলিশ দাবি করেছে।
এ দিনই মালদহে বাসে হামলা চালানোর অভিযোগ পুলিশ ছোটন রায় নামে এক কেএলও সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে হবিবপুরের মেহেন্দিপাড়ায় একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে হানা দিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। মালদহের পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, গত ২৭ ডিসেম্বর হবিবপুরের কালীপুকুরে বাসে হামলার সঙ্গে ধৃত কেএলও জঙ্গি ছোটন রায় জড়িত ছিল। ধৃত ছোটন ফেরার কেএলও জঙ্গি মালখান সিংহের ঘনিষ্ঠ। এ দিন মালদহ জেলা আদালত ধৃতকে ৫ দিনের পুলিশি হেপাজতের নির্দেশ দেয়।
জলপাইগুড়িতে ধৃত দুজনকে ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের রাখার আর্জি মঞ্জুর করেছে জেলা আদালত। তাঁদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, বোমা রাখা ও বিস্ফোরণ ঘটানো, অপহরণ, তোলা আদায়ের মতো অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে। জয়মতি পুলিশের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “বেলাকোবার বাজারে ঘুগনি বিক্রি করি। দাদা কোথায় আছে, কী করে কিছুই জানি না। দিদি অসুস্থ শুনে আলিপুরদুয়ারে গিয়েছিলাম।” ধৃত সন্তোষের কথায়, “খবরের কাগজেই বিস্ফোরণের কথা জানি। ২০১২ সালে আলোচনা চেয়ে যে সভা করেছিলাম, সেই কাগজ পুলিশ আটক করেছে। আত্মসর্মপণ করে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে, দিনমজুরি করে খাই। বিস্ফোরণের সঙ্গে কোনওভাবেই জড়িত নই।” সন্তোষের স্ত্রী নীরবালাদেবী জানান, “পুলিশ ওদের কেন ধরে নিয়ে গেল বুঝতে পারছি না।”
জেলা পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “তদন্ত সঠিক পথে এগোচ্ছে। বিভিন্ন সূত্রে খবর পেয়ে আরও দুজনকে ধরা হয়েছে।” এ দিকে পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৫ জন সদস্য এদিন সভা করে বিস্ফোরণে নিহত ছয় জনের পরিবার পিছু ১০ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান রাহেনা খাতুন বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নিহতদের পরিবার পিছু আর্থিক সাহায্য ২ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লক্ষ করা এবং পরিবার পিছু একজনের চাকরির ব্যবস্থা করার আর্জি জানানো হবে।” এ দিনের গ্রেফতারির পরে জলপাইগুড়ি বিস্ফোরণ কাণ্ডের মোট গ্রেফতারের সংখ্যা হল ৫ জন।
এ দিকে, কেএলও কার্যকলাপ কঠোর হাতে দমনের দাবি তুলল দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্ট। তাদের অভিযোগ, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের একাংশের সঙ্গে কেএলও’র যোগাযোগ রয়েছে। অশোকবাবুর অভিযোগ, “লোক দেখানো গ্রেফতারি চলছে। আসলে কেএলও’দের আড়াল করতে চায় রাজ্য সরকার। যখন কেএলও দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে বাম নেতাদের মেরেছে তখনও তৃণমূলের সঙ্গে কেএলও’র বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। এখনও রয়েছে।” দার্জিলিং জেলা সিপিএমের কার্যনির্বাহী সম্পাদক জীবেশ সরকার, সিপিআই’য়ের জেলা সম্পাদক উজ্জ্বল চৌধুরীর প্রশ্ন, বজরাপাড়ার ঘটনায় যে কেএলও যুক্ত, রাজ্য সরকার সে কথা এখনও একবারও বলছে না কেন?

নেতাদের নিরাপত্তা বাড়ল
উত্তরবঙ্গে কেএলও’র তপরতা বৃদ্ধির জেরে শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীদের কয়েকজনের নিরাপত্তা বাড়ানো হল কোচবিহারে। পুলিশ সূত্রের খবর, রাজ্যের পূর্ত দফতরের পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ও বনমন্ত্রী বিনয় বর্মনের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। কোচবিহার জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথবাবু এতদিন ‘এক্স’ পর্যায়ের নিরাপত্তা পেতেন। এখন থেকে তিনি ‘ওয়াই’ পর্যায়ের নিরাপত্তা পাবেন। কোচবিহারের বাসিন্দা রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মনের জন্যও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। পুলিশ কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়াল বলেন, “গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।”

পুরনো খবর






First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.