জলপাইগুড়ির বিস্ফোরণের পরে মালদহের পাকুয়াহাটে বাসে হামলার ঘটনাতেও কেএলও-র হাত রয়েছে বলে অনুমান করছে পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “স্বয়ংক্রিয় রাইফেল থেকে গুলি চালানো হয়েছে। উদ্ধার করা গুলির খোল ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হচ্ছে। রাতে প্রচণ্ড কুয়াশা থাকার কারণে হামলাকারীদের কেউ দেখতে পারেনি। পাঁচ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনার ধরন দেখে মনে হচ্ছে এই ঘটনায় কেএলও-র হাত থাকতে পারে।” এই ঘটনায় কেএলও-র ফেরার জঙ্গি মালখান সিংহের সঙ্গীরা জড়িত বলে পুলিশের অনুমান। ঘটনাস্থল থেকে সাত কিলোমিটার দূরে কাংসা গ্রামে মালখানের বাড়ি। |
গুলিতে জখম বাসের খালাসি কার্তিক সাহা। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়। |
শুক্রবার রাতে হবিবপুর থানার ১১ মাইল কালীপুকুরের কাছে রাজ্য সড়কের উপরে মালদহ-নালাগোলামুখী বেসরকারি বাসে ওই হামলায় তিন জন গুলিবিদ্ধ হন। শনিবার সকালে ঘটনাস্থল থেকে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল ও নাইন এমএম পিস্তলের ১৬ টি খালি কার্তুজ পুলিশ উদ্ধার করেছে। দুই ধরনের গুলির খোল উদ্ধারের পর পুলিশের অনুমান, হামলাকারীরা কম পক্ষে দু’জন ছিল।
পুলিশি সূত্রের খবর, একই ভাবে গত ১৬ জুন হবিবপুরের বিজেপি নেতা নৃপেন মণ্ডলের গাড়ি ঘিরে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে তাঁকে খুন করা হয়। তখনও কেএলও-র বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। পুলিশের অনুমান, শুক্রবারের ঘটনার পিছনেও কেএলও রয়েছে। প্রতিবাদে এদিন পাকুয়াহাটের মানুষ ব্যবসা বন্ধ করে পথ অবরোধ করেন। হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে কাল, সোমবার পাকুয়াহাট বন্ধের ডাকা দিয়েছেন স্থানীয়রা। মালদহ বাস ও মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বেশ কিছু শ্রমিক সংগঠন আজ, রবিবার একদিনের জেলা জুড়ে বেসরকারি পরিবহণ ধমর্ঘটের ডাক দিয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, নৃপেনবাবুকে খুনের পরে পুলিশ কেএলও জঙ্গিদের ধরতে বিশেষ টাক্স ফোর্স গঠন করে বামনগোলা, হবিবপুর, গাজল ও পুরাতন মালদহে চিরুনি তল্লাশি শুরু করে। টানা এক মাস ধরে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ ১০ জন কেএলও লিঙ্কম্যানকে গ্রেফতার করে। তাদের মধ্যে মালখানের ঘনিষ্ঠ কয়েকজনও রয়েছে বলে পুলিশের দাবি।
শনিবার সকালে বাসচালক পরিমল তরফদার বলেন, “রাতে প্রচন্ড কুয়াশা ছিল। আস্তে গাড়ি চালাচ্ছিলাম। ১১ মাইল থেকে গাড়ি ছাড়ার কিছুক্ষণ পরেই একটা বিকট শব্দ হয়। চাকা ফেটেছে ভেবে বাস থামিয়েছিলাম। তখন বাসের ভিতর থেকে যাত্রীরা চিৎকার করে বলেন, গুলি চলছে। গতি বাড়িয়ে সোজা পাকুয়াহাট ফাঁড়ির সামনে বাস থামিয়েছি।” মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভর্তি বাসের খালাসি গুলিবিদ্ধ কার্তিক সাহা বলেন, “১২ মাইলে যাত্রী নামবে বলে গেটের কাছে দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ শব্দ। এরপরই দেখি আমার ডান পা দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে। প্রচণ্ড যন্ত্রণা। বুঝতে পারি, গুলি লেগেছে।”
ওই বাসেই বাড়ি ফিরছিলেন বাসের মালিক গণেশ সমাজপতি। তিনি বলেন, “ঘটনাস্থল থেকে ৫০০ মিটার দূরে রাস্তার ধারে যাত্রাগান হচ্ছিল। সেখান প্রচুর লোকজন ছিল। কিন্তু কেউ কিছুই বুঝতে পারেনি।” তাঁর কথায়, “আমি অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছি। ঘটনার কিছুক্ষণ আগেই আসন ছেড়ে সামনে ড্রাইভারের পাশের আসন চলে গিয়েছিলাম।”
ঘটনার পরে রাতে পাকুয়াহাট-নালাগোলা রুটে বাস চালাতে ভয় পাচ্ছে চালকরা। বাস চালকেরা জানিয়েছেন, পুলিশি নিরাপত্তা না পেলে রাতে নালাগোলা রুটে বাস চালাবেন না।
|