ধর্ষিতার মৃত্যুতে ডাক পায়নি ফরেন্সিক, গোয়েন্দারা হতবাক
ঠিক ১১ দিন আগে বিমানবন্দরের আড়াই নম্বর গেটের কাছে নিজের বাড়িতে অগ্নিদগ্ধ হয়েছিল মধ্যমগ্রামের ধর্ষিতা কিশোরী। কিন্তু শুক্রবার পর্যন্ত ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা নমুনা সংগ্রহের জন্য ঘটনাস্থলে যাননি। কারণ, স্থানীয় পুলিশ তাঁদের ওই ঘটনার তদন্তে যেতেই বলেনি বলে ফরেন্সিক বিভাগ সূত্রের খবর। আগুনে পুড়ে মেয়েটির মৃত্যুর পরে তদন্তভার হাতে নিয়ে স্থানীয় পুলিশের এই গাফিলতির কথা জেনে বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দারা রীতিমতো বিস্মিত।
ওই কিশোরী নিজেই গায়ে আগুন দিয়েছিল, নাকি কেউ তার গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল, তা নিয়ে পুলিশের ধন্দ কাটেনি এখনও। ঠিক সময়ে ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আনলে সেই ধন্দ কিছুটা কাটত বলে মনে করছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। কিন্তু পুলিশ তদন্তে যেতে বললে তবেই কোনও অকুস্থলে নমুনা সংগ্রহে যায় ফরেন্সিক বিভাগ। এটাই দস্তুর। স্থানীয় পুলিশ কেন ওই ঘটনার ফরেন্সিক তদন্তের ব্যবস্থা করেনি, বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দারা তা খতিয়ে দেখবেন। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় পুলিশের যে গাফিলতি রয়েছে, গোয়েন্দা বিভাগের তদন্তকারীরা তা স্বীকার করছেন।
গোয়েন্দারা তদন্তভার নেওয়ার আগে পর্যন্ত ওই ঘটনায় তদন্তের মূল দায়িত্বে ছিলেন বিধাননগর কমিশনারেটের এয়ারপোর্ট ডিভিশনের এডিসি সন্তোষ নিম্বলকর। তাঁকে এ দিন প্রশ্ন করা হয়েছিল, এত দিনেও ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের ঘটনাস্থলে ডাকা হয়নি কেন?
নিম্বলকরের জবাব, “বিষয়টি এখন বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা দফতরে চলে গিয়েছে। যা বলার, ওই বিভাগের কর্তারাই বলবেন। এ ব্যাপারে আমি আর কিছু বলব না।” রাজ্য ফরেন্সিক সায়েন্স দফতরের এক কর্তা বলেন, “পুলিশ আমাদের ঘটনাস্থলে যেতে বললেই আমরা পৌঁছে যাই। তবে ঘটনার পরে যত তাড়াতাড়ি পৌঁছনো যায়, তত বেশি প্রমাণ সংগ্রহ করা যায়।”
তাড়াতাড়ি ফরেন্সিক বিভাগকে ডাকা তো দূরের কথা, ১১ দিনেও তাদের খবর না-দেওয়ায় মৃতার পরিবারও ক্ষুব্ধ। তাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, এখনও ফরেন্সিক তদন্ত না-হওয়ায় বহু সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাট হয়ে গিয়েছে। পুলিশ ইচ্ছে করে তদন্তে ঢিলেমি করেছে। বৃহস্পতিবারেই মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছিলেন, রাজ্য সরকার মৃতার পরিবারকে সব রকম সাহায্য করবে। কিন্তু মৃতার পরিবারের প্রশ্ন, পুলিশই যেখানে ঠিকঠাক তদন্ত করছে না, ফরেন্সিক বিভাগকে ডাকছে না, সেখানে এই আশ্বাসের দাম কী?
শুধু তদন্তে ঢিলেমির অভিযোগই নয়। ওই কিশোরীর পরিবার মধ্যমগ্রাম থেকে বিমানবন্দর থানা এলাকায় উঠে আসার পরে স্থানীয় থানা তাদের যথাযথ নিরাপত্তা দিয়েছিল কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশকর্তাদের কেউ কেউ। তাঁদের বক্তব্য, ঠিকমতো নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলে এ ভাবে রোজ রোজ মেয়েটিকে নিয়ে ওই এলাকায় অশান্তি হত না। যে-দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তারাও ঢুকতে পারত না মেয়েটির বাড়িতে। ওই ধর্ষণের ঘটনায় মধ্যমগ্রাম থানার ভূমিকা কী ছিল, গোয়েন্দারা তা-ও খতিয়ে দেখবেন বলে কমিশনারেট সূত্রের খবর।
পুলিশের সঙ্গে সঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা শিশু কল্যাণ সমিতির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। মধ্যমগ্রামের বাড়ি ছেড়ে ওই কিশোরীর পরিবার যে কলকাতা বিমানবন্দরের কাছে ভাড়া বাড়িতে উঠে এসেছে, জেলা শিশু কল্যাণ সমিতির অফিসারেরা তা জানতেনই না। রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজাকে দেওয়া রিপোর্ট থেকেই এই তথ্য জানা গিয়েছে। নাবালিকা মেয়েটিকে যে দু’-দু’বার ধর্ষণ করা হয়েছে, সমিতি তা জানা সত্ত্বেও কেন তাঁকে বা তাঁর সচিবকে সেটা জানানো হল না, প্রশ্ন তুলেছেন মন্ত্রী নিজেই।
শশীদেবী এ দিন জানান, জেলা শিশু কল্যাণ সমিতির কর্তারা দু’মাস আগেই ধর্ষণের বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে গিয়ে কিশোরীর কাউন্সেলিং করেন। সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দেন। কিন্তু হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে মেয়েটির পরিবার মধ্যমগ্রাম ছেড়ে চলে যায়। পরিবারটি কোথায় গিয়েছে, জেলা শিশু কল্যাণ সমিতির কর্তারা তা জানতেন না।
নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী এ দিন শিশু কল্যাণ সমিতির গাফিলতির কথা স্বীকার করে নিলেও পুলিশের গাফিলতির কোনও অভিযোগকেই আমল দিতে চাইছেন না রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। দু’জনেরই বক্তব্য, ওই ধর্ষণে অভিযুক্তেরা বামপন্থী কর্মী। আর তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, পুলিশ চার্জশিট দিয়েছে। তবু আন্দোলন কেন?
সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির প্রতিনিধিরা এ দিন বিধাননগর রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়ের কাছে ডেপুটেশন দেন। তাঁদের অভিযোগ, গোটা ঘটনায় পুলিশও সমান ভাবে দায়ী। তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত করুক রাজ্য সরকার। সুনন্দাদেবী ওই প্রতিনিধিদলের দাবি বিবেচনা করবেন বলে জানিয়েছেন।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.