|
|
|
|
এ বার বৃদ্ধাকে পিষে দিল হাতির দল
নিজস্ব সংবাদদাতা • সারেঙ্গা |
বিষ্ণুপুর থেকে দক্ষিণ বাঁকুড়ার জঙ্গলে ঢুকে পড়া হাতির পাল আরও এক জনকে পিষে মারল। সিমলাপালের পর এ বার সারেঙ্গা। শুক্রবার সকালে সারেঙ্গা থানার সিদি গ্রামের মাঠে প্রাতঃকৃত্য সারতে গিয়ে হাতির আক্রমণে ভানুমতী ডাঙর (৬০) নামে ওই বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। ওই গ্রামেই তাঁর বাড়ি। বৃহস্পতিবার সকালে এলাকায় ঢুকে পড়া হাতির পাল দেখতে গিয়ে সিমলাপাল থানার হাতিবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মঙ্গল মাহাতো নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয় হাতির হানাতেই। এই নিয়ে গত কয়েকদিনের মধ্যে বাঁকুড়া জেলায় হাতির আক্রমণে চার জনের মৃত্যু হল।
স্থানীয় সূত্রের খবর, শুক্রবার ভোরে সিদি গ্রাম লাগোয়া কুচিলা সিনির মাঠে প্রাতঃকৃত্য সারতে গিয়েছিলেন ভানুমতীদেবী। সেই সময় হাতির ওই দলটি মাঠ দিয়ে যাচ্ছিল। তখন একটি হাতি তাঁকে সামনে পেয়ে শুঁড়ে তুলে আছাড় মারে। তারপর পা দিয়ে পিষে দেয়। ভানুমতীদেবীর স্বামী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছেন। তাঁর ছেলে তরুণ ডাঙর বলেন, “প্রতিদিনের মতো এ দিন ভোরেও মা মাঠে গিয়েছিল। গ্রামের পাশ দিয়ে যে হাতির দল পেরিয়ে যাচ্ছে কুয়াশার জন্য মা তা ঠাহর করতে পারেনি। মাকে সামনে পেয়ে একটা হাতি মেরে ফেলে।” |
|
সারেঙ্গার সিদি গ্রামে শুক্রবার সকালে ছবিটি তুলেছেন উমাকান্ত ধর। |
বাঁকুড়ার ডিএফও (দক্ষিণ) দেবাংশু মল্লিক জানান, বিষ্ণুপুর রেঞ্জের জঙ্গল থেকে বৃহস্পতিবার ভোরে হাতির যে দলটি শিলাবতী নদী পেরিয়ে সারেঙ্গা রেঞ্জের শালডাঙার জঙ্গলে ঢুকে মঙ্গল মাহাতোকে মেরেছিল। সেই দলটি এ দিন ভোরে সারেঙ্গার চিলতোড় পঞ্চায়েত এলাকায় ঢুকে পড়ে। সিদি গ্রামের কাছে ভানুমতী ডাঙর নামে এক বৃদ্ধাকে কাছে পেয়ে মেরে ফেলে ওই দলের একটি হাতি। ডিএফও বলেন, “সরকারি নিয়ম অনুযায়ী মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। হাতির ওই দলটিকে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে তাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন বনকর্মীরা।”
ডিএফও-র দাবি, “হাতির দলকে খুব কাছ থেকে দেখার জন্য গ্রাম উজাড় করে দলে দলে মানুষ হাতির পিছনে ধাওয়া করছেন। এর ফলে হাতিরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে। হাতির দল তাই পাল্টা হামলা শুরু করেছে। এতে হাতি তাড়ানোর কাজই শুধু ব্যহত হচ্ছে তাই নয়, বিপত্তি ঘটছে।” সাধারণ মানুষকে হাতিদের পিছনে ধাওয়া না করার জন্য এলাকায় মাইকে প্রচার করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। কিন্তু তাতেও মানুষকে হাতিদের থেকে দূরে রাখা যাচ্ছে না বলে বনকর্মীদের অভিযোগ। এতে আরও প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বন দফতর সূত্রের খবর, ওই দলে তিনটি শাবক-সহ ৯টি হাতি রয়েছে। প্রথমে তারা বড়িচ্যা বিটের জঙ্গলে ঢুকে পড়ে। বৃহস্পতিবার থেকেই হাতিদের পিছু নেয় স্থানীয় বাসিন্দারা। তাতেই ওরা ক্ষেপে ওঠে। একটি হাতি হঠাৎ পিছু ফিরে সে দিন মঙ্গল মাহাতো নামের এক প্রৌঢ়কে পিষে মারে। এ দিন ভোরের আলো ফোটার আগেই তারা সারেঙ্গার চিলতোড় পঞ্চায়েত এলাকার ভিতর দিয়ে কংসাবতী নদী পার হওয়ার চেষ্টা করে। সেই পথেই ওই বৃদ্ধাকে মারে একটি হাতি।
সারেঙ্গার রেঞ্জ অফিসার শুকদেব মাহাতো বলেন, “হুলাপার্টি আর পুলিশের সাহায্যে হাতির দলটিকে নির্দিষ্ট রাস্তায় ফেরত পাঠানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু গ্রামের মানুষ অত্যুৎসাহী হয়ে তাদের ঘিরে ধরছেন। এর ফলে হাতির দলটি এদিক ওদিক ঘুরে খেপে উঠেছে। আমাদের কাজেরও ভীষণ অসুবিধা হচ্ছে।
গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাতির হানায় দু’জনের মৃত্যুর ঘটনায় দক্ষিণ বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। অবিলম্বে হাতির দলটিকে অন্যত্র সরানোর দাবি জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। বন দফতর সূত্রের খবর, হাতির দলটিকে তাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এ দিন বিকেলে মটগোদা রেঞ্জের জঙ্গলে তারা ঢুকে পড়েছে। বন কর্মীরা তাদের উপর নজর রাখার চেষ্টা করছে।
|
পুরনো খবর: পিছু ফিরে প্রৌঢ়কে পিষে মারল হাতি |
|
|
|
|
|