|
|
|
|
শুঁড়ে তুলে পিষে মারল হাতি
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
বাড়ির সামনে থেকে শুঁড়ে করে তুলে নিয়ে গিয়ে এক ব্যক্তিকে পিষে মারল দলছুট হাতি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে শালবনি থানার বেঁউচ্যায়। মৃতের নাম শালকাম হেমরম (৪০)। ক্ষুব্ধ স্থানীয় গ্রামবাসীরা শুক্রবার সকালে বিট অফিসার শঙ্কর বাউরিকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। হাতি তাড়াতে বন দফতর কোনও পদক্ষেপ করছে না বলে অভিযোগ তাঁদের।
বন দফতর অবশ্য জানিয়েছে, এলাকা থেকে হাতি তাড়ানোর সব রকম চেষ্টা চলছে। মেদিনীপুরের ডিএফও বিজয় সালিমঠ বলেন, “হাতির হামলায় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। ওই এলাকা থেকে হাতি তাড়ানোর সব রকম চেষ্টা চলছে। পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হয়েছে।” তিনি আরও জানান, ক্ষতিপূরণ হিসেবে বন দফতরের কাছ থেকে ১ লক্ষ টাকা পাবে মৃতের পরিবার। এদিন পরিবারকে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে ৮০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। দেহটি উদ্ধার করে ওই রাতে ময়না-তদন্তের জন্য মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। শুক্রবার সকালে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যান শালবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নেপাল সিংহ। সন্ধ্যায় মৃতের বাড়িতে যান তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায়। |
|
কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পরিজনরা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
স্থানীয় সূত্রে খবর, দলমার দলটি ক’দিন ধরে আড়াবাড়ি রেঞ্জ এলাকায় ঘোরাঘুরি করছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ৪-৫টি হাতি দলছুট হয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। শালকাম সন্ধ্যায় বাড়ির বাইরে বেরিয়েছিলেন। সামনেই যে একটি দলছুট হাতি দাঁড়িয়ে রয়েছে, তা নজরে আসেনি। তাঁকে শুঁড়ে করে তুলে নিয়ে কিছু দূর চলে যায় হাতিটি। পরে পিষে মারে। অন্যের জমিতে চাষ করে কোনও ভাবে সংসার চালাতেন শালকাম। এখন কী ভাবে সংসার চলবে, দুই যমজ ছেলের পড়াশোনারই বা কী হবে, ভেবে পাচ্ছেন না শালকাম হেমরমের স্ত্রী মালতীদেবী।
এ দিন ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। খবর পেয়ে বন দফতরের কর্মীরা এলাকায় পৌঁছন। শুক্রবার সকালে বেঁউচ্যায় যান ঘাঘরাশোলের বিট অফিসার শঙ্কর বাউরি। গ্রামবাসীরা তাঁকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। নন্দরাম হেমরম, মোহন টুডু, সুবল টুডু, রাজু মাণ্ডিদের বক্তব্য, “হুলা জ্বালানোর তেল পর্যন্ত দিচ্ছে না বন দফতর। ৫০ টাকা প্রতি লিটার দরে পোড়া মোবিল কিনে হুলা জ্বালাতে হচ্ছে।” গ্রামবাসীদের বক্তব্য, ইতিমধ্যে হাতির হানায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কিছু বাড়ি যেমন ভেঙেছে, তেমন ফসল নষ্ট হয়েছে। অথচ, বন দফতর এলাকা থেকে হাতি তাড়ানোর কোনও পদক্ষেপ করছে না।
দফতরের অবশ্য বক্তব্য, তেল বিলি করা হচ্ছে। ক’দিন আগে দলমার ১৩০টি হাতির দল শালবনি ব্লকে ঢুকে পড়ে। তার আগে দলটি ওড়িশা থেকে নয়াগ্রাম, নয়াগ্রাম থেকে সাঁকরাইল-খড়্গপুর গ্রামীণ-মেদিনীপুর সদর ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় দাপিয়ে বেড়িয়েছে। দলটিতে দু’টি সদ্যোজাত ছিল। তার একটি মঙ্গলবার ভোরে মারা গিয়েছে। অন্যটি অবশ্য দলের সঙ্গে রয়েছে। বন দফতর সূত্রে খবর, দলটি ধীরে ধীরে গোয়ালতোড়ের দিকে এগোচ্ছে। গতিবিধি দেখে দফতরের কর্তারা মনে করছেন, দলটি গোয়ালতোড় হয়ে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে পৌঁছবে। শুক্রবার দিনভর দলটি আঁধারনয়ন, আড়াবাড়ি এলাকায় ছিল। ১৩০টি হাতির দলটি সন্ধ্যা হলে দু’-তিন ভাগ হয়ে যাচ্ছে। ফলে, সমস্যা বাড়ছে। |
|
|
|
|
|