বসে যাচ্ছে রাস্তা, খলনায়ক ইঁদুর
কৌশিক ঘোষ • কলকাতা |
হ্যামলিনের সেই বাঁশিওয়ালা থাকলে সমস্যাটার সমাধান এত দিনে হয়ে যেত। উত্তর কলকাতার আহিরীটোলা স্ট্রিট ধরে বি কে পাল অ্যাভিনিউয়ের দিকে এগোলেই চোখে পড়বে রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় গর্ত ভরাট করা হয়েছে মাটি দিয়ে। গর্তের কারণ ইঁদুর। রাস্তার নীচে ইঁদুর সুড়ঙ্গ করায় বসে গিয়েছে রাস্তার বিভিন্ন অংশ।
পুরকর্তৃপক্ষের দাবি, ছ’মাস আগে এই এলাকায় যে সব রাস্তা তৈরি হয়েছিল সেগুলি ফের বসে গিয়েছে। এর ফলে অসুবিধায় পড়েছেন পথচারীরাও। যে সব জায়গায় রাস্তা বসে গিয়েছে সেখানে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মাটি দিয়ে গর্ত ভরাট করা হয়েছে। কিন্তু এতেও সমস্যার
সমাধান হয়নি।
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (রাস্তা) সুশান্তকুমার ঘোষ বলেন, “উত্তর কলকাতার অনেক জায়গাতেই ইঁদুরের উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় রাস্তা সরাইয়ের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। রাস্তা সারানোর কয়েক দিনের মধ্যেই তা ফের বসে যাচ্ছে। রাস্তা খারাপের খবর পেলেই পুরসভা ফের রাস্তা সারিয়ে তুলছে। কারণ, ইঁদুর মারার কোনও বিকল্প ব্যবস্থা পুরসভার নেই।” |
|
ইঁদুরের উৎপাতে বসে গিয়েছে রাস্তা। |
গঙ্গার ঘাট থেকে শুরু হয়েছে আহিরীটোলা স্ট্রিট। গঙ্গার ঘাট এবং আশপাশের অঞ্চলে প্রচুর ডালকল এবং গুদাম থাকায় এখানে ইঁদুরের উৎপাত বেশি। এই সব অঞ্চলের বিভিন্ন রাস্তার গর্তে রয়েছে ইঁদুরের বাসা। ভূগর্ভস্থ প্রায় কয়েক কিলোমিটার রাস্তা জুড়েই তাদের বসবাস। এর ফলে ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালা সহ টেলিফোনের লাইনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়াও, এলাকার অনেক পুরনো বাড়িতেও এরা ঢুকে সমস্যার সৃষ্টি করে।
এলাকার বাসিন্দা কৌশিক রায় বলেন, “ইঁদুরের উৎপাত এই অঞ্চলে বেড়েই চলেছে। আর তার একমাত্র কারণ হল, এলাকায় প্রচুর সংখ্যায় গজিয়ে ওঠা ডালকল।” শুধু আহিরীটোলা বা শোভাবাজারই নয়, বড়বাজারের সমগ্র এলাকাই এই ইঁদুরকুলের কবলে। রাস্তা ছাড়াও টেলিফোন এবং বিদ্যুতের মতো জরুরি পরিষেবাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। লোক এসে সারিয়ে গেলেও আবার ইঁদুর কেটে দিচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা ইতস্তত ভাবে ইঁদুর মারলেও নির্দিষ্ট ভাবে ইঁদুর মারার কোনও ব্যবস্থা কলকাতা পুরসভার নেই বলে স্বাস্থ্য বিভাগের এক আধিকারিক জানান। আর এক বাসিন্দা শুভাশিস সাহার কথায়: “কয়েকটি জায়গায় রাস্তা বসে গিয়েছে। রাতে বোঝা যায় না। দু’চাকা নিয়ে যাতায়াত করার সময়ে অসতর্ক হলেই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কয়েক বার দুর্ঘটনা ঘটেওছে। তা ছাড়া বয়স্ক মানুষদের যাতায়াতেও সমস্যা হয়।” |
|
পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের শিখা সাহা বলেন, “এই ওয়ার্ডে ইঁদুরের উপদ্রব প্রচন্ড বেড়েছে। রাস্তাঘাটের রক্ষণাবেক্ষণে সমস্যা হচ্ছে। পুরসভাকে এই ব্যাপারে আগে জানানো হয়েছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট ভাবে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়নি। আবারও পুরকর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে বলব।”
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ইঁদুরের উৎপাত শহরের অন্যতম সমস্যা। ইঁদুরের উৎপাত বন্ধ করতে তাদের উৎস খুঁজে বংশ
নির্মূল করা অসম্ভব। তবে কিছু সচেতনতা বাড়ালে অবশ্যই এই উৎপাত কিছু কমবে বলে আশা করি। নাগরিকরা বিক্ষিপ্ত ভাবে রাস্তায় বা বাড়ির আশপাশে যেন খাবার না ছড়ান। তাতে রাস্তা এবং সেতুর পরিকাঠামোও অপেক্ষাকৃত ভাল থাকবে।” |
ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
|
পুরনো খবর: পাতাল জুড়ে সংসার পেতেছে গণেশের বাহন, সঙ্কটে শহর |
|