একশো দিনের কাজ প্রকল্পে সাফ
ঝোপঝাড়, বেঘর বেজি-বনবিড়াল
গ্রামীণ এলাকার গরিব মানুষদের জন্য ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে জোর দিচ্ছে সরকার। স্থায়ী সম্পদ সৃষ্টিতেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেই প্রকল্পে অপ্রয়োজনে রাস্তার ধারের বেশ কিছু ঝোপঝাড় কেটে বন্যপ্রাণীদের নিরাশ্রয় করা এবং ওষধি গাছ নষ্ট করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল হুগলির দু’টি পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে স্থানীয় কয়েক জন পরিবেশপ্রেমী ওই অভিযোগ নিয়ে প্রশাসনের কাছে দরবারও করেছেন।
যে দু’টি পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ উঠেছে, সেগুলি হল আঁইয়া এবং নালিকুল পূর্ব। দু’টিই তৃণমূল পরিচালিত। সম্প্রতি দু’টি পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে দিয়ে যাওয়া রাস্তার ধারের বেশ কিছু ঝোপঝাড় কেটে সাফ করা হয় ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে। স্থানীয় পরিবেশপ্রেমীদের পক্ষে হিন্দোল আহমেদের অভিযোগ, “সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনে ওই ঝোপঝাড় সাফ করা হয়েছে। ওখানে দীর্ঘদিন ধরে বেজি, মেছোবিড়াল, বনবিড়ালের মতো প্রাণীদের আস্তানা ছিল। ওরা বেঘর হয়েছে।
তা ছাড়া, নষ্ট হয়ে গিয়েছে সর্পগন্ধা, কালমেঘ, বাসক, বনতুলসির মতো ওষধি গাছও।” তাঁর দাবি, “কেন্দ্রীয় প্রকল্পে খালবিল সংস্কার-সহ বহু কাজ করা যেত। কিন্তু তা না করে ঝোপঝাড় কেন কাটা হল বুঝতে পারলাম না। ওই ঝোপঝাড়ের জন্য কারও অসুবিধা হচ্ছিল না।” নালিকুলের বাসিন্দা পরিবেশপ্রেমি প্রশান্ত বাগাল বলেন, “পূর্ব নালিকুল পঞ্চায়েতের বড়গাছিয়ায় অকারণে ঝোপঝাড় পরিস্কার করা হয়েছে ১০০ দিনের কাজে। বিভিন্ন জায়গায় খালের ধারেও একই কাজ করা হয়েছে। বাধ সংস্কারের জন্য সেগুলি কাটার কোনও প্রয়োজনই ছিল না।” চণ্ডীতলায় ঝোপঝাড় কাটার বিষয়টি হিন্দোলবাবুদের সংগঠনের পক্ষ থেকে বিষয়টি বিডিওকে জানানো হয়।
চণ্ডীতলা ১ এর বিডিও পৃত্থীশ সামন্তের আশ্বাস, “বন্যপ্রাণীদের ক্ষতি হয়, এমন কাজ করা হবে না। কোথায় কোথায় ঝোপঝাড় কাটা হচ্ছে, তার নির্দিষ্ট তালিকা ওই পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের কাছে চাওয়া হয়েছে।” আঁইয়া পঞ্চায়েতের প্রধান সুনন্দা মণ্ডল বলেন, “বিকল্প কোনও রকম কাজ না থাকায় ঝোপঝাড় কাটাতে হয়েছে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে। এতে বন্যপ্রাণ এবং পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছিল, একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার লোকজন আমাদের সেটা বুঝিয়েছেন। তার পরেই ওই কাজ আমরা বন্ধ করে দিয়েছি।” অন্য পঞ্চায়েত সূত্রেও দাবি করা হয়েছে, বন্যপ্রাণীর ক্ষতি হয়, এমন কোনও রকম কাজ তাঁরা করেননি।
জেলার ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প আধিকারিক তথা জেলাশাসক মনমীত নন্দা অবশ্য বলেন, “যেখানে ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা হয়েছে, সেখানে মাটি ফেলে গাছ বসানো হবে সৌন্দর্যায়নের জন্য।” বন্যপ্রাণীদের নিরাশ্রয় হওয়া নিয়ে তাঁর বক্তব্য, “ওরা নিশ্চয়ই নতুন বাসস্থান খুঁজে নেবে।” ফি-বছর শীতে হুগলির বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে বন্যপ্রাণী শিকারের অভিযোগ ওঠে। তার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয় বলে জানিয়েছেন পরিবেশপ্রেমীরা। কিন্তু পঞ্চায়েতের উদ্যোগেই যে ভাবে বন্যপ্রাণীদের নিরাশ্রয় করা হয়েছে, তাতে কিছুটা অবাক রাজ্য জীব বৈচিত্র্য পর্ষদ। পর্ষদের রিসার্চ অফিসার অনির্বাণ রায় বলেন, “নানা কারণে বাসস্থান নষ্ট হওয়ায় গ্রাম বাংলায় বহু বন্যপ্রাণী এমনিতেই বিপন্ন। মানুষ সচেতন না হলে সমস্যা মেটার নয়।”
হুগলি জেলা বনাধিকারিক চিত্তরঞ্জন প্রামাণিক পঞ্চায়েতের বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য এড়িয়ে গিয়েছেন। তবে বন্যপ্রাণ শিকারের প্রবণতার বিষয়টি অস্বীকার করেননি।
তিনি বলেন, “আমাদের কানে খবর এলেই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে বিষয়টি পুরোপুরি আটকানোর মতো পরিকাঠামো আমাদের নেই।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.