|
|
|
|
সারমেয়-উৎপাতে জেরবার সল্টলেক
কাজল গুপ্ত • কলকাতা |
কুকুরের উপদ্রবে আতঙ্কিত সল্টলেকের বাসিন্দারা।
মেয়েকে স্কুলে পৌঁছতে সবে রিকশায় উঠেছেন তন্ময় ঘোষ, রিকশা চলা মাত্রই চালককে ঘিরে ধরল এক দল কুকুর। ভয়ে তাড়াতাড়ি রিকশা ছোটাতে থাকেন চালক। আর কুকুরগুলিও দৌড়ে এসে রিকশা চালকের পা কামড়ে ধরার চেষ্টা করতে থাকে। অবশেষে স্থানীয় কিছু বাসিন্দা সেই কুকুরগুলিকে তাড়াতে যেন প্রাণ ফিরে পেলেন রিকশা চালক। তন্ময়বাবুর অভিযোগ, কুকুরের ভয়ে হাঁটাচলা করা দায় হয়ে উঠেছে সল্টলেকে। দিন দিন বাড়ছে কুকুরের সংখ্যা। প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও লাভ হচ্ছে না।
এমনকী প্রাতর্ভ্রমণ করতে বেরিয়েও বিপদে পড়ছেন অনেকে। সকালে বনবিতানের (সেন্ট্রাল পার্ক) মূল ফটক দু’টি খোলা থাকে। যে কারণে কুকুর ভিতরে ঢোকে। এ ছাড়াও বনবিতানের ভিতরের কুকুর তো আছেই। ফলে কুকুরের উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন প্রাতর্ভ্রমণকারীরা।
বার বার অভিযোগ জানালেও বনদফতরের আধিকারিকরা নাকি তাঁদের অভিযোগে আমল দিচ্ছেন না। এমনটাই তাঁদের অভিযোগ। |
|
রাস্তায় কুকুর-রাজ। ছবি: শৌভিক দে। |
প্রবীণ বাসিন্দা রঞ্জন রায় বলেন, “কুকুরের জ্বালায় রাস্তায় হাঁটাই দায়। রাতে ওদের চিৎকারে ঘুমনো যায় না। প্রশাসনকে বার বার বলেও কোনও লাভ হচ্ছে না।”
কুকুরের উৎপাতের এ ছবি সল্টলেক জুড়ে দেখা যায়। বাসিন্দাদের এমনটাই অভিযোগ। বিরোধীদের অভিযোগ, যে ভাবে পুরসভা চলছে তাতে এটাই স্বাভাবিক। নির্বীজকরণের কাজ তো দূর অস্ত্। দু’বছর ধরে এই কাজ বন্ধ। কুকুর ধরার পরিকাঠামো কোনও দিনই ছিল না, তা ঠিক। কিন্তু বাম আমলে নিয়মিত ভাবে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির মাধ্যমে সেই কাজ করা হত। বাজেটেও সেই ব্যয় ধরা থাকত। কিন্তু বর্তমান শাসকদলের তেমন পরিকল্পনাই নেই।
বিধাননগর পুরসভা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে এ ব্যাপারে দায়িত্ব দিয়েছে। সংস্থার কর্মকর্তা অরিজিৎ মুখোপাধ্যায় জানান, সল্টলেকে প্রায় চার হাজার কুকুর রয়েছে। ইতিমধ্যে পঞ্চাশ ভাগ কাজ করা সম্ভব হয়েছে। তবে পুরসভার উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই। কিছুটা জমি পেলে কাজের সুবিধা হয়। অস্থায়ী ভাবে হলেও কোনও জমি পাইনি। পাশাপাশি এই কাজ ব্যয়বহুল। তাই সময় লাগছে। তবে সংস্থার অভিযোগ, অনেকে বাইরের কুকুর এনে সল্টলেকে ছেড়ে দিচ্ছেন, সেটাও সমস্যার আর এক দিক।
যদিও বাসিন্দারা এই দাবি মানতে নারাজ। তাঁদের অভিযোগ, যদি কাজই হয়ে থাকে, তবে কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার পরিবর্তে বেড়েছে কেন? সল্টলেকের বাসিন্দা এবং একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মকর্তা তাপস সেনগুপ্ত বলেন, “প্রথমত কুকুর নিয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে সচেতনতার প্রয়োজন। তাহলে অনেকটাই সমস্যা কমবে। নির্বীজকরণ কিংবা নির্বিষকরণের কাজ সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। কাজগুলি ঠিক ভাবে করা হচ্ছে কি না, তার নজরদারিরও ব্যবস্থা নেই। ফলে সমস্যা কমছে না।”
অভিযোগের জবাবে বিধাননগর পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের নিজস্ব পরিকাঠামো না থাকলেও, একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। পাশাপাশি আরও কয়েকটি সংস্থাও কাজ করছে। আমি পশুপ্রেমী, তবে কুকুরের সংখ্যা বাড়ায় অনেকেই সমস্যা পড়ছেন। ভবিষ্যতে আমরা এই সংক্রান্ত পরিকাঠামো তৈরি করব।” |
|
|
|
|
|