সমকামী সম্পর্ক নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা যে ভাবে সরব হয়েছিলেন, এ দিন তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করল শীর্ষ আদালত। মাস খানেক আগেই এক রায়ে সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছিল, সমকামিতা আইন বিরুদ্ধ। এর প্রতিক্রিয়া জানাতে সময় ব্যয় করেননি দেশের নেতা-মন্ত্রীরা। সমালোচনায় মুখ খোলেন আইনমন্ত্রী থেকে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী, জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী অনেকেই। তাঁদের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে এক জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন দিল্লির বাসিন্দা পুরুষোত্তম মুল্লোলি। শুক্রবার তারই শুনানিতে প্রধান বিচারপতি পি সদাশিবম ও বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বেঞ্চ বলে, এ জাতীয় মন্তব্য কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
সমকামিতা আইনি বৈধতা পাবে কি না, তা নিয়ে টানাপোড়েন শুরু বহু দিন আগেই। ২০০৯-এর জুলাই মাসে দিল্লি হাইকোর্ট এক রায়ে জানায়, স্বেচ্ছায় কেউ সমকামী সম্পর্কে জড়ালে তা অপরাধ নয়। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারায় বলা আছে কোনও ব্যক্তি প্রকৃতির নিয়মবিরুদ্ধ যৌন ক্রিয়ায় লিপ্ত হলে ১০ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে তাঁর। তাদের রায়ে এই ধারাকে সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী বলেই তখন ঘোষণা করেছিল দিল্লি হাইকোর্ট। কিন্তু এই রায় খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, ৩৭৭ ধারাকে অসাংবিধানিক নয়। বিচারপতিরা অবশ্য বিষয়টির নৈতিকতা নিয়ে মন্তব্য করেননি। তাই সে দিন বিচারপতি এস জে মুখোপাধ্যায় ও জি এস সিঙ্ঘভির বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, সংসদ চাইলে ৩৭৭ ধারা সংশোধন বা বাতিল করতেই পারে।
এত দিন পর শীর্ষ আদালতের এই রায় মেনে নিতে পারেননি অনেকেই। খোদ আইনমন্ত্রী কবিল সিব্বল মন্তব্য করেছিলেন, “আইনের সাংবিধানিকতা খতিয়ে দেখা সুপ্রিম কোর্টের কাজ। তারা সেটা করেছে। আইন তৈরি করা আমাদের কাজ। আমরা সেটাই করব।” জয়রাম রমেশ এই রায়কে পশ্চাদমুখী বলতেও দ্বিধা করেননি। ওমর আবদুল্লা বলেছিলেন, “কোর্ট সাম্যে সায় দেয়, অথচ ৩৭৭ ধারায় নয়।”
পুরুষোত্তম মুল্লোলি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা এ ভাবে শীর্ষ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলে আইন ভেঙেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা জরুরি। বিচারপতিরা এ দিন ওই মন্তব্যের কড়া নিন্দা করেছেন। “তাঁরা সকলেই গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। এ জাতীয় মন্তব্য বাজে মানসিকতার পরিচয়। এই সব কথা বলার আগে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত” মন্তব্য বিচারপতি গগৈয়ের। তবে এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেও মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করবেন
না বলে জানিয়ে দিয়েছে বিচারপতিদের বেঞ্চ। |