৭২ ঘণ্টা জলের তলায় দেহ, উদ্ধারে উদাসীন রাজ্য সরকার

৩ জানুয়ারি
বাহাত্তর ঘন্টা ধরে জলে ডুবে রয়েছে দেহ। গোতাখোরদের (জলে ডোবা দেহ যারা উদ্ধার করে) দাবি, তিরিশ হাজার টাকা না পেলে দেহ খুঁজতে তারা জলে নামবে না। অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে পুলিশও। আর দিনভর চরম হেনস্থার শিকার পশ্চিমবঙ্গের এক বাঙালি পরিবার। শ্মশানে চিতাভস্ম থেকে নাভিমূল ও অস্থি নিয়ে ডোমেদের দাদাগিরির সঙ্গে অনেকেই পরিচিত। কিন্তু দেহ খোঁজাতে গিয়ে গোতাখোরদের হাতে হেনস্থা হওয়ায় স্তম্ভিত ওই পরিবারটি।
রাঁচির অশোকনগরের বাসিন্দা সুমন মন্ডল গত পয়লা জানুয়ারিবন্ধুদের সাথে বেড়াতে গিয়েদশম জলপ্রপাতে পাহাড়ের উপর থেকে পড়ে যান। পেশায় বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের সরবরাহকারী সুমন আসলে পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার বাসিন্দা। পেশার জন্য তিনি এখানে থাকেন। তাঁর পরিবারের সন্দেহ জলে ডুবেই সুমনের মৃত্যু হয়েছে। দশমের মন্দিরে যেতে গিয়ে পাথরের উপর থেকে সুমন পা পিছলে জলপ্রপাতে পড়ে গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর বন্ধু গোপাল ভৌমিক। পুলিশ জানিয়েছে, গোতাখোরেরা পয়সা না পাওয়ায় দুর্ঘটনার দিন থেকেই দশমে একটি দেহ ডুবে রয়েছে। কিন্তু পরিবারের লোককে দিয়ে শনাক্ত না করিয়ে মৃতদেহটি সুমনের কিনা তা নিয়ে নিশ্চিত নয় পুলিশ। আর গোতাখোরেরা জল থেকে মৃতদেহ না তোলায় দেহ সনাক্ত করতে এসেও কিছু করতে পারছে না সুমনের পরিবার লোকজন। প্রায় বাহাত্তর ঘন্টা ধরে এমনই দড়ি টানাটানির মতো পরিস্থিতি চলছে দশম জলপ্রপাতে। উদাসীন ছিল প্রশাসনও।
এমনিতেই সুমনের দুর্ঘটনার খবর তাঁর পরিবার দেরিতে পেয়েছে। অশোকনগরে তাঁর প্রতিবেশী প্রদীপ ঘোষের কথায়, “সুমনের বন্ধুরা ভয়ে প্রথমে কিছু বলেনি। আমরা বৃহস্পতিবার সব কথা জেনেছি। আজ সকালে যখন আমাদের লোকজন দশমে গিয়ে গোতাখোরদের দেহ তোলার জন্য অনুরোধ করে তখন তারা তিরিশ হাজার টাকা চায়। কোনও অবস্থাতেই তারা দর কমাতে রাজি হয়নি। শেষে পর্যটন সচিবের দ্বারস্থ হই। তখন তিনি জামশেদপুর থেকে গোতাখোর আনানোর ব্যবস্থা করেন।” তবে আজ বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ বুণ্ডু থানার পুলিশ জানিয়েছে, জামশেদপুর থেকে গোতাখোর এসে না পৌঁছনোয় দেহ উদ্ধারের কাজ বিকেল পর্যন্ত শুরু করা যায়নি। শনিবার সকাল থেকে কাজ শুরু করা যাবে বলেই আশা পুলিশের।
জলে ডোবার ঘটনা ঘটলে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের তরফ থেকে ডুবুরি নামানোর ব্যবস্থা ঝাড়খণ্ডে নেই। স্থানীয় গ্রামের মানুষরাই জলে ডুব দিয়ে মৃতদেহ খুঁজে উপরে তুলে নিয়ে আসে। যারা এই কাজ করে স্থানীয় ভাষায় তারা এখানে গোতাখোর বলে পরিচিত। দশম জলপ্রপাতের নিচে গর্ত আর পাথর থাকার দরুন মৃতদেহ বেশিরভাগ সময়ই জলের তলায় আটকে যায়, ভেসে ওঠে না। সেই দেহ গোতাখোররা ছাড়া কেউ তুলতেও পারে না। ফলে দেহ তোলা নিয়ে মৃতের পরিবারের কাছ থেকে যত বেশি সম্ভব টাকা আদায়ের চেষ্টা করে গোতাখোররা। দাবি মতো মোটা টাকা না পাওয়ায় গিরিডির রাজধনোয়ার ব্লকে নলাখা বাঁধে ডুবে যাওয়া এক যুবকের দেহ তুলতে চায়নি গোতাখোরেরা। প্রশাসন সেখানে অসহায় হয়ে পড়ায় গ্রামবাসী কাল ওই ব্লকের বিডিওর গাড়ি জ্বালিয়ে দেন।
গোতাখোরদের এই আচরণের জেরে বিরক্ত স্থানীয় প্রশাসনের আধিকারিকরাও। কারণ এই ধরনের যে কোনও ঘটনায় পরবর্তী সমস্যাগুলির মুখোমুখি তাঁদেরই হতে হয়। বুণ্ডু ব্লক প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, “যখনই জলে ডোবার ঘটনা ঘটে তখনই এমন হয়। এ বার এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানে সরকারের উদ্যোগী হওয়া উচিত।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.