সেই মনোনয়ন এবং তপ্ত সেই হরিমোহন
যে ধরনের পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে এক বছর আগে রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজ, ছাত্র সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন তোলা নিয়ে শুক্রবার প্রায় একই পরিস্থিতি ফিরে এল সেখানে। পুলিশ আগাম সতর্ক থাকায় এ বার ঘটনাপ্রবাহ হাতের বাইরে না বেরোলেও উস্কে দিয়েছে আগের বারের স্মৃতি।
গত বছর ১২ ফেব্রুয়ারি হরিমোহন কলেজে ছাত্র নির্বাচনের মনোনয়ন জমা দেওয়া নিরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিলেন স্থানীয় তৃণমূল ও কংগ্রেস নেতারা। সংঘর্ষ ঘিরে গুলি ও বোমাবাজি হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় তাপস চৌধুরী নামে এক পুলিশকর্মীর। ওই ঘটনায় কংগ্রেস নেতা মোক্তার আহমেদ ও তৎকালীন ১৫ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্না গ্রেফতার হন। ঘটনার পরেই রাজ্য জুড়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছিল।
যে হেতু হরিমোহন ঘোষ কলেজ, তাই পুলিশ এ বার আগে থেকেই ব্যবস্থা নিয়েছিল। এ দিন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ও ছাত্র পরিষদ সমর্থকেরা যাতে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে না পড়েন, সে ব্যাপারে সচেষ্ট ছিল পুলিশ। তবে একেবারে শান্তিপূর্ণ হয়নি মনোনয়ন-পর্ব। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিরুদ্ধে ছাত্র পরিষদের প্রার্থীদের কাছ থেকে মনোনয়নপত্র ছিনিয়ে নেওয়া অভিযোগ ওঠে। দুই পক্ষে ধস্তাধস্তিও হয়। পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় প্রথমে তিন জন আটক হয়। পরে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃত বি কম তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মহম্মদ শাহেনশাহ আনসারি এবং মহম্মদ ইমরান জামিনে ছাড়া পান।
কলেজে পুলিশের ধরপাকড়। শুক্রবার।—নিজস্ব চিত্র।
এ দিন সকাল থেকেই কলেজ চত্বর ঘিরে রেখেছিল বিরাট পুলিশবাহিনী। ডি সি (বন্দর) সলমন নেশা ও এ সি মহম্মদ কাদেরের নেতৃত্বে পুলিশ ও র্যাফ মোতায়েন করা হয়েছিল। পরিচয়পত্র পরীক্ষা করে তবেই পড়ুয়াদের কলেজে ঢোকার অনুমতি দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু মনোনয়পত্র তোলার পরে কলেজের ভিতরে দু’দলের সদস্যেরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। ছাত্র পরিষদের এক মহিলা প্রার্থীর কাছ থেকে মনোনয়পত্র ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠে। ওই প্রার্থী কলেজের বাইরে এসে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। তার পরেই পুলিশ কলেজের ভিতরে গিয়ে উভয় পক্ষের তিন জনকে আটক করে। তবে কলেজের টিচার ইন-চার্জ বিজয় চক্রবর্তী অবশ্য মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে ফেলার বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তিনি বলেন, “আমি মনোনয়নপত্র ছেঁড়ার ঘটনা দেখিনি।”
নির্বাচনে ৩১টি আসন রয়েছে। এ দিন বেলা ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে ৩১টি আসনের মনোনয়পত্র তোলা হয়। ছাত্র পরিষদের অভিযোগ, এর পরে কলেজ চত্বরেই তাদের প্রার্থীদের উপরে হামলা চালায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। ২২ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে ফেলা হয়। মারধর করা হয় এক মহিলা প্রার্থীকে। গার্ডেনরিচ থানায় অভিযোগ দায়ের করে ছাত্র পরিষদ। বিকেলে প্রতিবাদ-মিছিলও হয়।
কংগ্রেস নেতা মোক্তার আহমেদের অভিযোগ, এ দিন সকাল থেকেই কলেজের কিছুটা দূরে ১৫ নম্বর বরো তৃণমূল চেয়ারম্যান রঞ্জিত শীল বহিরাগত তৃণমূল সমর্থকদের জড়ো করেছিলেন। ছাত্র পরিষদের প্রার্থীদের নানা ভাবে শাসানিও দিয়েছেন রঞ্জিতবাবু।” কলেজে ছাত্র পরিষদের প্রার্থীরা ছাড়া কেউ ভিড় করেনি বলেই দাবি মোক্তারের। তাঁর আরও দাবি, তিনি এ দিন সকাল থেকে মুদিয়ালি রোডে নিজের বাড়িতেই ছিলেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে বরো চেয়ারম্যান রঞ্জিত শীল বলেন, “আমি কলেজের ধারেকাছে ছিলাম না। আর কলেজে কী ঘটেছে, তা-ও জানি না। কংগ্রেস মিথ্যা অভিযোগ করছে। ওরা গুন্ডা।” তবে স্থানীয়দের অনেকেরই দাবি, এ দিন সকাল থেকেই কয়েক জন স্থানীয় তৃণমূল নেতার সঙ্গে পাহাড়পুর রোডে দেখা যায় রঞ্জিতবাবুকে।
এ দিনের ঘটনার প্রেক্ষিতে আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা মোক্তার আহমেদ। তিনি বলেন, “পরিকল্পনা করে মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কলেজ সংসদ দখল করার চেষ্টা করছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। আমরা আদালতে বিষয়টি নিয়ে বোঝাপড়া করব।”
ডি সি (বন্দর) সলমন নেশা বলেন, “পুলিশের তরফে সব ঘটনার ভিডিও রেকর্ডিং করা হয়েছে। তার ফুটেজ দেখলেই সব পরিষ্কার হবে।”

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.