শিক্ষকের দেহ উদ্ধারের ছ’মাস পরে খুনের মামলা
ক্যাম্পাস থেকে এক শিক্ষকের মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার ছ’মাস পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য এবং রেজিস্ট্রার-সহ আট জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করলেন মৃতের পরিবার। গত বছর জুলাই মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতের শিক্ষক অভিজিৎ ঘোষের (৬০) মৃতদেহ কলা শাখার ভবনের চারতলায় সংস্কৃত বিভাগের শৌচাগার থেকে উদ্ধার করা হয়। সেই ঘটনার সূত্রেই খুনের মামলা দায়ের করেছেন ওই শিক্ষকের পরিবার। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তের প্রয়োজনে অভিযুক্তদের সকলকেই ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।
পুলিশ সূত্রের খবর, মাসখানেক আগে অভিজিৎবাবুর পরিবারের পক্ষ থেকে খুনের মামলা দায়ের করার জন্য আলিপুর আদালতে একটি মামলা করা হয়। বৃহস্পতিবার আদালত যাদবপুর থানাকে এই ঘটনায় আট জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করে তদন্তের নির্দেশ দেয়। মৃত শিক্ষকের স্ত্রী ছন্দা ঘোষ ওই দিনই পুলিশের কাছে তৎকালীন উপাচার্য, বর্তমানে খড়্গপুর আইআইটি-র উপ অধিকর্তা শৌভিক ভট্টাচার্য, রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ, সংস্কৃত বিভাগের প্রাক্তন প্রধান তপনশঙ্কর ভট্টাচার্য, ওই বিভাগের শিক্ষক চিন্ময় মণ্ডল, বিজয় গোস্বামী, ললিতা সেনগুপ্ত ও সর্বাণী গঙ্গোপাধায় এবং এক কেয়ারটেকারের বিরুদ্ধে লিখিত ভাবে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন।
গত বছর ১৬ জুলাই সকালে অভিজিৎবাবুর দেহ উদ্ধার হয়। ওই দিন শৌচাগার পরিষ্কার করতে গিয়ে এক সাফাইকর্মী দেখেন দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। বিষয়টি তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানান। কর্তৃপক্ষ খবর দেন যাদবপুর থানায়। পুলিশ গিয়ে দরজা ভেঙে দেখে মেঝেয় চিৎ হয়ে পড়ে রয়েছেন অভিজিৎবাবু। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জানান, অনেক আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার আগের রাত থেকে নিখোঁজ ছিলেন ওই শিক্ষক। পরিবারের তরফে গরফা থানায় লিখিত ভাবে তা জানানোও হয়।
পুলিশের দাবি, ময়না-তদন্তের রিপোর্টে জানা গিয়েছে, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয়েছে অভিজিৎবাবুর। কিন্তু শুক্রবার ছন্দাদেবী বলেন, “আমার স্বামীর মৃত্যু স্বাভাবিক ভাবে হয়নি। মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতেই আমরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলাম।” তিনি জানান, অভিজিৎবাবুর মৃত্যুর ঠিক কোন সময়ে হয়েছে, তা নিয়ে হাসপাতাল এবং পুলিশের মধ্যে মতের ফারাক রয়েছে। তাই আদালতের মাধ্যমে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তাঁর স্বামী সারা রাত বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকলেও কর্তৃপক্ষ এই ঘটনায় নিজেদের দায় সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ ছন্দাদেবীর।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই অভিযোগ মানতে চাননি। খুনের মামলা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তৎকালীন উপাচার্য শৌভিকবাবু। তিনি শুধু বলেন, “ওই শিক্ষকের মৃত্যু দুঃখের এবং দুর্ভাগ্যজনক। সেই সময় যা যা করণীয় ছিল, তার গোটা প্রক্রিয়াতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আমরা পাশে ছিলাম।” রেজিস্ট্রার প্রদীপবাবুও খুনের মামলা বা অভিযোগ সম্পর্কে কোনও কথা বলতে চাননি। তবে খুনের সম্ভাবনা কার্যত খারিজ করে এ দিন তিনি বলেন, “ঘটনাটি ঘটেছে কলা শাখার ভবনের চারতলায়। শৌচাগারের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। তাই অন্য কেউ ভিতরে ঢুকে তাঁকে খুন করেছেন, এটা সম্ভব বলে মনে হয় না।” আর প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান জানিয়েছেন, ওই দিন তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গিয়েছিলেন। পরের দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে উপাচার্যের কাছ থেকেই ঘটনার কথা শোনেন।
এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ এ বার কী করবে? কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষকর্তা জানান, ময়না-তদন্তের বিস্তারিত রিপোর্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং ওই বিভাগে সেই দিন ডিউটিতে থাকা কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রয়োজনে অভিযুক্তদের ডেকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.