|
|
|
|
তারুণ্যের ভাবনায় এক বিন্দুতে তৃণমূল ও আম আদমি পার্টি
সন্দীপন চক্রবর্তী |
বেশ তো ছিলেন ক্যুইজ মাস্টার! রাজনীতিতে আসতে হল কেন?
আইআইএম কলকাতার ক্লাসরুমে প্রশ্নটা শুনে প্রায় লুফে নিলেন ক্যুইজ মাস্টার-সাংসদ। প্রথমে একটু রসিকতা। তার পরে সিরিয়াস উত্তর, “আমার মনে হতো, বাম শাসনের অবসান দরকার। কংগ্রেস, বিজেপি আর তৃণমূল এই তিনটে রাস্তা সামনে ছিল। কংগ্রেস মনে হল, দিল্লির পোস্ট অফিস! ব্যক্তিগত কিছু বিশ্বাসের কারণে বিজেপি-র দিকে যাওয়া সম্ভব ছিল না। তখন তিন-চার বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল। মনে হয়েছিল, রাজনীতিতে এলে এই রকম বস-ই আমি চাইব!” |
|
আইআইএম কলকাতার ক্লাসে ক্যুইজ মাস্টার-সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। শুক্রবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী। |
তার আগেই ডেরেক ও’ব্রায়েনের বোঝানো হয়ে গিয়েছে, যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতার যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে হারানো আসলে ভারতীয় তথা বঙ্গ রাজনীতিতে অকুতোভয় তারুণ্যেরই উত্থান। প্রত্যাশিত ভাবে আগাগোড়া তাঁর দলনেত্রীর উপাখ্যান সামনে রেখে জোকার আইআইএম ক্যাম্পাসে শুক্রবার রাজনীতির সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের সেতু বন্ধনের চেষ্টা চালিয়ে গেলেন রাজ্যসভায় তৃণমূলের সাংসদ। নিজেই বললেন, “আমি যে বয়সে সাংসদ, ওই বয়সটাকে রাজ্যসভায় টিন এজ ধরা হয়!” কখনও অবিমিশ্র রসিকতা, কখনও পেশাদার ক্যুইজ-কুশলীর মোড়ক কাজে লাগিয়ে ম্যানেজমেন্ট পড়ুয়াদের কাছে ডেরেকের আবেদন থাকল, রাজনীতির স্রোতে তরুণ প্রজন্ম নৌকো ভাসালে সকলেরই মঙ্গল। এমন নয় যে, শ্রোতাদের সকলে বাংলার রাজনীতির হালচাল সম্পর্কে দারুণ অবহিত। তবু গীত কিরণ, অনির্বাণ, প্রায়াংশু, মায়াঙ্কেরা তৃণমূলের তরফে এমন আবেদনে যথেষ্টই উৎসাহিত।
তাদের উৎসাহের রেশ বজায় থাকতে থাকতেই ডেরেক বলে গিয়েছেন, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের সময় কয়েক মাস তৃণমূল ভবনে দলের কমিউনিকেশন বিভাগে কাজ করার জন্য আইআইএমের গোটাকয়েক পড়ুয়াকে কাজে
|
আপ নেত্রী মীরা সান্যাল |
লাগাতে চান। ঠিক যেমন বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল ভবনে কাজ করে গিয়েছিলেন অধুনা মাল্টি ন্যাশনালে কর্মরত হরিহরণ ও মানসা। যাঁরা কাজ করতে আসবেন, আদর্শগত ভাবে তাঁদের তৃণমূল সমর্থক না-হলেও চলবে। কাজটা হবে একেবারেই পেশাদারি কায়দায় এবং তৃণমূলের সঙ্গে সব প্রান্তে সব মানুষের যোগাযোগ আরও যুগোপযোগী করার জন্য। এবং হাতে-গরম আবেদনকারী জুটেও গেল ডেরেকের কাছে! তরুণ নেতৃত্বের থিম নিয়ে ‘ইনট্যাগলিও’ শীর্ষক আলোচনা-আসরের প্রথম পর্বের শেষে।
তরুণ প্রজন্ম যখন, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি তাদের মাথায় এখন ঘোরা স্বাভাবিক। আইআইএমেরই ছাত্র অনির্বাণ জানতে চেয়েছিলেন, আপ সম্পর্কে তৃণমূলের ভাবনা কী? প্রাথমিক ভাবে ডেরেক বলেছেন, এখনই আপ সম্পর্কে মন্তব্য করার সময় আসেনি। তবে তার সঙ্গেই বলেছেন, “এটা ভেবে ভাল লাগছে, আপ-ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অনুপ্রেরণা পায়! দিল্লির মানুষ আপ-এর কাছে যা দেখছেন, বাংলার মানুষ দিদির কাছে তা তো আগেই দেখেছেন!”
দু’জনে দেখা হয়নি। তবু ঘটনাচক্রে, একই ক্যাম্পাসের কয়েক ফুট দূরত্বে একই কথার প্রতিধ্বনি এ দিনই যে শোনা গিয়েছে মীরা সান্যালের গলায়! বিদেশি ব্যাঙ্কের ভারতীয় কর্মকাণ্ডের প্রধান-পদ তিন দিন আগে ছেড়ে-আসা, মুম্বই-নিবাসী মীরা সদ্য মনোনিবেশ করছেন আপ-এর প্রচারে। আইআইএমের ফ্যাকাল্টি লাউঞ্জে বসে আনন্দবাজারকে মীরা বললেন, “দুর্নীতি আর পরিবারতন্ত্রের বাইরে সাধারণ মানুষের উঠে আসার কথা এখন চর্চা হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিশ্চয়ই ‘আম আউরত’-এর বড় উদাহরণ। পরিবারের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ছিল না, পরিবারতন্ত্র থেকেও আসেননি। রাজনীতিতে সাধারণ মানুষেরও জায়গা আছে, এই কথাটাই আমরা বলতে চাইছি।” এবং ঠিক এই জায়গায় দিল্লির কেজরিওয়াল-কাহিনি কাজে লাগবে বলে মনে করছেন মীরা। তাঁর কথায়, “টাকা নেই, দাদাগিরি নেই, এমন মানুষ রাজনীতিতে জায়গা পেতে পারেন, এটা ভাবতে পারছিলেন না কেউ। দিল্লির পরে এখন মানুষ দেখছেন, তাঁরাও ভোটে জিতে আসতে, এমনকী, সরকার গড়তেও পারেন! এর একটা ইতিবাচক প্রভাব বিশেষত তরুণ প্রজন্মের উপরে তো পড়বেই।”
কেজরিওয়ালের ঝাঁটা-যাদু বাংলার চৌহদ্দিতে আদৌ কাজ করবে কি না, সন্দিহান তৃণমূল নেতারা।
তবু ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে এ রাজ্যের শাসক আর দেশের রাজধানীর নবীন শাসক দলের ভাবনা বাঁধা পড়ল ওই একই সেতুতে তারুণ্যে ভরসা।
সঙ্গে আরও এক সাদৃশ্য তারুণ্যের কথা বলতে গিয়ে কারও ভাবনাতেই এক বারও এল না রাহুল গাঁধীর নাম! |
|
|
|
|
|