প্রত্ন নিদর্শন ও পুরনো ইতিহাসের এক ভাণ্ডার বছরের পর বছর ধরে চাপা পড়ে আছে বাণগড়ে। দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর থানার রাজীবপুর এলাকার বাণগড় দুর্গনগরী অসম্পূর্ণ খনন হয়ে অবহেলায় পড়ে রয়েছে।
রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাণগড় একটি প্রাচীন নগরী। মৌর্য আমল থেকে মধ্যযুগ পর্যন্ত জনবসতি ছিল। পুনর্ভবা নদীর ধারে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রত্নস্থলের প্রাচীন নাম ছিল কোটিবর্ষ। এই এলাকা থেকে তাম্র-প্রস্তর যুগের সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। এই এলাকায় প্রথম উত্খনন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে কুঞ্জগোবিন্দ গোস্বামী। পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ উত্খনন করেছে তারপরে। তখন অবশ্য তাঁরা যতটা জায়গা ধরে খননকার্য করতে চেয়েছিলেন, ততটা এলাকা উত্খনন করতে পারেননি। রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতরের উপ অধিকর্তা অমল রায় বলেন, “এই প্রত্নস্থল রক্ষা করতে বাসিন্দাদেরও এগিয়ে আসতে হবে।” |
এ ভাবেই পড়ে রয়েছে বাণগড়ের প্রত্নস্থল। ছবি: অমিত মোহান্ত। |
এই এলাকা থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রচুর তামার পাত্র, অলঙ্কার, পোড়ামাটির পাত্র ও মূর্তি। বাণগড় আর্কিওলজি সোসাইটির সম্পাদক পার্থ মৈত্র বলেন, “মাটি খুঁড়লেই এখানে পাওয়া যায় নানা প্রত্নসামগ্রী। কিন্তু প্রত্ন নিদর্শনে ঠাসা এমন একটি দুর্গনগরী খননের অভাবে ইতিহাসের বহু তথ্য অজানা থেকে গিয়েছে।”
এই এলাকা থেকে পাওয়া একটি শিলালিপি থেকে জানা যায়, বৌদ্ধ পাল রাজাদের অন্যতম প্রথম মহীপালের পুত্র নয়পাল শৈবধর্মের প্রতিও অনুরাগ দেখিয়েছিলেন। সেই সময়ে এই এলাকার বাসিন্দারা অনেকেই শৈব ছিলেন বলে স্থানীয় মানুষের ধারণা। স্থানীয় ইতিহাসবিদেরা জানাচ্ছেন, আগে জানা ছিল, পাল বংশের শেষ রাজা মদন পাল ১৮ বছর রাজত্ব করেছিলেন, কিন্তু গঙ্গারামপুরের রাজীবপুরে জমি চাষ করতে গিয়ে আবিষ্কৃত দু’টি তাম্রশাসন থেকে জানা গিয়েছে তৃতীয় গোপালকে সিংহাসনচ্যুত করে মদন পাল আসলে ৩২ বছর রাজত্ব করেছিলেন। ওই শিলালিপির পাঠোদ্ধার করেন বালুরঘাট কলেজের সংস্কৃতের তত্কালীন অধ্যাপক তথা কিউরেটর প্রয়াত অচিন্ত্যকৃষ্ণ গোস্বামী। আরও অনেক নতুন তথ্য বাণগড়ের মাটির ঢিবির নীচে চাপা পড়ে রয়েছে।
বাণগড়কে কেন পর্যটন মানচিত্রে জায়গা দিয়ে সম্পূর্ণ খনন করা হবে না, জেলাবাসীও সেই প্রশ্ন তুলেছেন। |