সংরক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদ ব্লকের কসবা মহেশো এলাকার একাধিক প্রাচীন ঐতিহাসিক নির্দশন। জেলার ইতিহাসবিদদের একাংশ জানিয়েছেন, স্থানীয় কমলাবাড়ি গ্রামের এক রাজা মহেশ ওই এলাকায় একটি রাজবাড়ি তৈরি করেন। ষোড়শ শতকের বিখ্যাত স্বাধীন নবাব হুসেন শাহও এক সময়ে রাজবাড়িটির দখল নিয়েছিলেন। রাজ আমলের অবসানের পরে বংশ পরম্পরায় জমিদাররা ওই রাজবাড়িটি নিয়মিত সংস্কার করতেন। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে সংরক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে নিদর্শনগুলি ধীরে ধীরে ধ্বংস হতে শুরু করে।
বাসিন্দারা জানান, এলাকায় ৭ ফুট উঁচু পাথরের তৈরি চারটি স্তম্ভ থাকলেও কিছু দিন আগে তার মধ্যে দু’টি স্তম্ভ ভেঙে পড়েছে। দু’টি স্তম্ভের উপরে সমান্তরাল ভাবে থাকা পাথরের তৈরি প্রায় ১০ ফুট লম্বা একটি খিলানও কয়েক বছর আগে ভেঙে পড়ে। |
হেমতাবাদে অবহেলায় পড়ে রয়েছে পুরাকীর্তি। ছবি: তরুণ দেবনাথ। |
খিলানটির সামনের ও পিছনের পাথরের গায়ে খোদাই করে গণেশ মূর্তি রয়েছে। স্তম্ভ ও খিলানগুলির গায়েও খোদাই করে বিভিন্ন কারুকার্য ও নকশা রয়েছে। রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের বাস্তুকার শিবতোষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “কেউ ওই রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ ও সংলগ্ন এলাকার ছবি, ঐতিহাসিক গুরুত্ব, বিবরণ-সহ সংরক্ষণ ও সংস্কারের আবেদন পাঠালে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বাসিন্দারা জানান, ইতিমধ্যেই ভেঙে পড়া খিলান ও স্তম্ভগুলি চুরির চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের তত্পরতায় সেগুলি নিয়ে পালাতে পারেনি দুষ্কৃতীরা। চার দশক আগে স্তম্ভ ও খিলান সংলগ্ন প্রায় দেড় একর জমিকে খাসজমি হিসেবে চিহ্নিত করে রাজ্য সরকার। ওই জমির বিভিন্ন জায়গায় প্রাচীন আমলে তৈরি দেওয়াল ও পাথরের চাঁইয়ের ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। খাস জমিটির চারদিকে প্রায় ৩০০ বিঘা জমিতে এলাকার প্রায় ১৫০টি পরিবার চাষাবাদ করেন।
ইতিহাসবিদদের অভিযোগ, মাঝে মধ্যেই দুষ্কৃতীরা খাসজমিটির মাটি খুঁড়ে প্রাচীন আমলের ইট, পাথরের চাঁই, কাঠ, লোহা-সহ মাটি ও পাথরের তৈরি বিভিন্ন বাসনপত্র এবং হাঁড়ি চুরি করে পালাচ্ছে। রাজ্য হেরিটেজ কমিশন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার চিঠি পাঠিয়ে ওই রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষণ ও সংস্কারের দাবি জানানো হলেও লাভ হয়নি। ইতিহাসবিদদের মতে, হেরিটেজ কমিশন রাজবাড়িটির সংস্কার করে মাটির নীচের নিদর্শনগুলি উদ্ধার করে তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠতে পারে।
কসবা মহেশো এলাকার বাসিন্দা ধীরেন শিকদার, সত্য সরকার ও মাজিল টুডু জানান, খাস জমিটির মধ্যে জনবসতি না থাকার সুযোগে মাঝে মধ্যেই গভীর রাতে দুষ্কৃতীরা সেখানে মুদ্রা, অলঙ্কার ও সোনাদানা পাওয়ার আশঙ্কায় মাটি খোঁড়াখুড়ি করছে। তা ছাড়া, সংলগ্ন এলাকার জমিতে চাষাবাদ করার সময়ে মাটির নীচে থেকে প্রাচীন আমলের ইট, পাথরের চাঁই, কাঠ, লোহা-সহ মাটি ও পাথরের তৈরি বিভিন্ন বাসনপত্র এবং হাঁড়ি উঠে আসছে। কিছু বাসিন্দা সেগুলি নিয়ে গিয়ে বাড়িতে রাখলেও অনেকে বিক্রিও করে দিচ্ছেন।
জেলার দুই ইতিহাসবিদ বৃন্দাবন ঘোষ ও সনত্ অধিকারী জানান, অবিলম্বে সংরক্ষণ ও সংস্কার করা না হলে রাজবাড়িটির ধ্বংসাবশেষের অস্তিত্ব হারিয়ে যাবে। বৃন্দাবনবাবু বলেন, “আমরা হেরিটেজ কমিশনকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। মাটি খুঁড়ে ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলি উদ্ধার করে সংরক্ষণ করারও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।” |