কালিয়াচকের নওদা যদুপুর এলাকায় শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে গোষ্ঠীর কোন্দল চরম আকার নিয়েছে বলে অভিযোগ। দলের সংখ্যালঘু সেলের এক নেতার ভাইকে না পেয়ে তাঁর বাড়িতে পেট্রল ঢেলে সমস্ত আসবাপত্র ও গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সেই সঙ্গে হামলাকারীরা লক্ষাধিক টাকা ও সোনার গয়না লুঠ করে নিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার সকালে কলিয়াচক থানা থেকে মাত্র ২ কিলেমিটার দূরে দারিয়াপুরে ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ জানায়, তৃণমূলের ব্লকের সাধারণ সম্পাদক তথা সংখ্যালঘু সেলের নেতা আসাদুল সেখের বাড়িতে দলের অঞ্চল সভাপতি বকুল শেখ এবং তাঁর অনুগামীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোদ উঠেছে। মালদহ জেলা পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আসাদুল শেখের অভিযোগের ভিত্তিতে বকুল শেখ-সহ বাকিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তদের ধরতে তল্লাশি শুরু হয়েছে।” |
|
|
(বাঁ দিকে) পোড়া বাড়ি ও (ডান দিকে) গাড়ি। বৃহস্পতিবার মনোজ মুখোপাধ্যায়ের তোলা ছবি। |
|
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাতে বকুল শেখের ঘনিষ্ঠ জাইদুল শেখকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূল কংগ্রেসের সংখ্যালঘু সেলের নেতা আসাদুল শেখের ভাই বারেক শেখের বিরুদ্ধে। সেই হামলার বদলা নিতেই বকুল শেখর দলবল নিয়ে এদিন আসাদুল শেখের ভাইকে মারতে হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে। দলীয় সূত্রের খবর, বকুল শেখ জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভানেত্রী তথা রাজ্যের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। আর উল্টোদিকে আসাদুল শেখ রাজ্যের পযর্টন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীর ঘনিষ্ট বলে দলের মধ্যে পরিচিত।
এদিন সাবিত্রী দেবী বলেন, “গতকাল রাতে দলের এক কর্মীকে আসাদুল শেখের ভাই বারেক শেখ গুলি করেছিল। এই ক্ষোভেই স্থানীয় গ্রামবাসীদের একাংশ আসাদুলের বাড়িতে হামলা করেছে বলে শুনেছি। বারেক শেখ আমাদের দলের কেউ নয়। হামলার সঙ্গে বকুল শেখ ও তার দলবল জড়িত নয়।” আর কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, “হামলার ঘটনার পুলিশ তদন্ত চলছে। প্রকাশ্যে যদি যেভাবে হামলা হয়েছে। তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। অভিযুক্তরা আমাদের দলের হলেও পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। আইন আইনের পথে চলবে।”
আসাদুল শেখ জানান, আমি কালিয়াচক ১ নম্বর ব্লকের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সংখ্যালঘু সেলের সাধারণ সম্পাদক। দলের অঞ্চল সভাপতি বকুল শেখ এবং ওর দলবল এলাকায় সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছে। আমি বিরোধিতা করায় এদিন বকুল শেখে দলবল নিয়ে আমার বাড়িতে হামলা চালায়। আসবাবপত্র এবং গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। লক্ষাধিক টাকা এবং সোনার গয়না লুঠ করা হয়েছে। আমি থাকলে আমাকেই হয়ত পুড়িয়ে মারত। বাবাকে ধরে নিয়ে চলে গিয়েছে। পুলিশকে সব লিখিতভাবে জানিয়েছি।
তাঁর স্ত্রী বিউটি বিবি বলেন, “স্বামী সকালবেলা কালিয়াচকে চলে যান। বাড়িতে আমি, শাশুড়ি ও ছোট ছেলে ছিলাম। বাড়ির কাজ করছিলাম। সকালে কড়া নাড়তেই দরজা খুলেই দেখি বকুল শেখ ৫০-৬০ যুবককে নিয়ে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। প্রত্যেকের হাতে বন্দুক। আমার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে বারেক শেখের খোঁজ শুরু করে। বারেক এখানে থাকে বলতেই, বাড়িতে আগুন ধরিয়ে লুঠপাট চালায়। আমরা পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে বাঁচি।”
অভিযুক্ত নওদা যদুপুর অঞ্চল সভাপতি বকুল শেখ অবশ্য বলেন, “আমি কিছুই জানি না। বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলাম। আসাদুলের ভাই বারেক এখনও অবধি পাঁচজনকে গুলি করেছে। কিন্তু পুলিশ ওকে গ্রেফতার করছে না। এতেই গ্রামের মানুষ ক্ষেপে গিয়ে ওর বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বলে শুনেছি।” |