গত দু’বছরে সীমিত পরিকাঠামো নিয়েও রেফার না করে একের পর এক জটিল অস্ত্রোপচার করে রাজ্যের স্বাস্থ্য মানচিত্রে নজির তৈরি করেছে পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতাল। এই হাসপাতালেরই শল্য চিকিৎসক পবন মণ্ডলকে ‘বঙ্গ চিকিৎসক’ সম্মানে ভূষিত করার রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত যেন হাসপাতালের সেই কাজের স্বীকৃতি।
|
চিকিৎসক পবন মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র। |
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার নবান্নে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে পবনবাবুর হাতে স্মারক ও মানপত্র তুলে দেওয়া হয় ওই সম্মান তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কলকাতার টাউন হলে এই অনুষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও নেলসন ম্যান্ডেলার মৃত্যুর কারণে তা পিছিয়ে যায়। পবনবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী এ দিন আমাদের সঙ্গে ছবি তুলেছেন। আমাদের আরও দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে বলেছেন।”
পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না ব্লকের আড়নকিয়ারানা গ্রামের বাসিন্দা পবনবাবু আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাশ করে ২০০৭ সালের জুন মাসে পুরুলিয়ার জয়পুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগ দেন। তখন থেকেই এই জেলার সঙ্গে তাঁর যোগ। বছরখানেক ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাটিয়ে তিনি আসেন সদর হাসাপাতালে। কিশোরের পেটে গেঁথে যাওয়া কাটারির অংশ সফল ভাবে বার করাই হোক বা মহিলার পেট থেকে শাবল বার করা এই হাসপাতালে এমন একাধিক জটিল অস্ত্রোপচার করেছেন শল্য চিকিৎসক পবনবাবু। গত নভেম্বরে বাঘমুণ্ডির আট বছরের এক বালকের চোখে বাঁশের কঞ্চি ঢুকে গিয়েছিল। চোখ দিয়ে গলগল করে রক্ত ঝরছিল তার। জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ দেবাশিস প্রমাণিক পবনবাবুকে সঙ্গে নিয়েই ওই বালকের চোখে জটিল ও সফল অস্ত্রোপচার সারেন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, “আমাদের জেলা থেকে পবনবাবুই এই সম্মান পাচ্ছেন। তাঁর এই সম্মান অন্য স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের অনুপ্রাণিত করবে।” তিনি জানান, কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা, নিষ্ঠা, রোগীদের নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর ব্যবহার-সহ নানা মাপকাঠির ভিত্তিতে এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।
পবনবাবু অবশ্য বলেছেন, “এটা আমার একার কৃতিত্ব নয়। অবশ্যই এটা টিমওয়ার্ক। এখানে দেখেছি, গরিব মানুষ অসহায় অবস্থায় হাসপাতালে এসেছেন। তাঁদের হাতে রোগীকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার সময় বা আর্থিক সামর্থ্য নেই। তখন সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। আর নিজের কর্তব্য করেছি মাত্র।” তিনি যখন ডাক্তারি পড়া শুরু করেন, তখনই তাঁর বাবার মৃত্যু হয় ক্যানসারে। এই সম্মান প্রয়াত বাবাকেই উৎসর্গ করছেন পবনবাবু। |