হোমেই মারা গেল রুগ্ণ কংসাবতী
ংসাবতীর ধার থেকে মাস চারেক আগে যখন তাকে উদ্ধার করা হয়েছিল, তখনই তার শরীর ছিল অশক্ত। মূক ও বধির সেই মেয়েটির ঠাঁই হয়েছিল পুরুলিয়া শহরের উপকন্ঠে আনন্দমঠ হোমে। বৃহস্পতিবার হোমেই মিলল তার নিথর দেহ।
এ ব্যাপারে হোম কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট চেয়েছেন পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) সবুজবরণ সরকার। এ দিন তিনি বলেন, “ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। উদ্ধার হওয়ার পর থেকেই মেয়েটি খুব রুগ্ণ ছিল। তবু ঠিক কী কারনে তার মৃত্যু হয়েছে, তা নিয়ে আমি হোম কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট চেয়েছি।”
গত অগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে পুরুলিয়া-জামশেদপুর ৩২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে কংসাবতী নদীর চর থেকে পুলিশ বছর তেরোর ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে। তার কোনও পরিচয় জানতে পারেনি পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছিল, কেউ বা কারা মেয়েটিকে বিকেলের দিকে সেতুর উপর থেকে নদীতে ফেলে দিয়ে যায়। কংসবাতীর ধারে পাওয়া গিয়েছিল বলে আনন্দমঠ হোমে তার নাম রাখা হয়েছিল কংসাবতী। হোমের সুপার অর্চনা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মেয়েটি মূক ও বধির হওয়ায় আমরা আনেক চেষ্টা করেও ওর পরিচয় জানতে পারিনি। লেখাপড়াও জানত না। না হলে হয়তো লিখে বোঝাতে পারত। কোনও প্রশ্ন করলে চেয়ে থাকত।”
উদ্ধারের পরে। —ফাইল চিত্র।
বৃহস্পতিবার সকালে হোমের অন্য আবাসিকদের কাছ থেকে সুপার খবর পান, কংসাবতীর কোনও সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। অর্চনাদেবীর কথায়, “আমি গিয়ে দেখি, মেয়েটি নড়াচড়া করছে না। তখনই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানান, ওর মৃত্যু হয়েছে।” তিনি জানান, মেয়েটি অত্যন্ত রুগ্ণ ছিল। হাঁটাচলা করতে পারত না। বসেই থাকত। শক্ত খাবার বড় একটা খেতে পারত না। বুধবারও কলা-মুড়ি খেয়েছিন। তাই ওর জন্য বেশি দুধের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সুপারের আরও দাবি, “ওকে হাসপাতালে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত বুধবারই নিয়েছিলাম। কিন্তু, তার কোনও সুযোগই দিল না মেয়েটা!”
কিছুদিন আগে এই মেয়েটিকে একবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সুস্থ হওয়ার পরে ফিরেও আসে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ধরনের সমস্যা যাদের রয়েছে, তাদের সাধারণত মানসিক ভারসাম্যহীনদের (মেন্টালি রিটার্টেড) হোমে রাখা হয়। আনন্দমঠ হোমের সুপার বলেন, “আমাদের হোমে সে-রকম পরিকাঠামো নেই।” তাহলে ওই মেয়েটিকে কেন ওই বিশেষ ধরনের হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়নি? সুপারের জবাব, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। এই মেয়েটি নাবালিকা হওয়ায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ার রয়েছে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির। আমি কমিটিকেও বিষয়টি জানিয়েছিলাম।”
জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন অমিতা মিশ্র বলেন, “ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। তবে, মেয়েটি মূক ও বধির। প্রথম থেকেই মেয়েটি অত্যন্ত রুগ্ণ ছিল। নিজে খেতে পারত না, খাইয়ে দিতে হত। এই ধরনের মেয়েকে বা আবাসিকদের এম আর হোমে রাখা দরকার। কিন্তু এটা তো এম আর হোম নয়।” কংসাবতীকে তা হলে বিশেষ ধরনের হোমে পাঠানো হয়নি কেন? অমিতাদেবী বলেন, “হাওড়া ও মেদিনীপুরের এম আর হোমে আমরা একাধিকবার যোগাযোগ করেছি। ওরা বলেছে, জায়গা নেই।” তাঁর দাবি, এখানেই ওই বিশেষ ধরনের হোমের ন্যূনতম পরিকাঠামো গড়ার চেষ্টা চলছে। এ জন্য জমিও চিহ্নিত হয়েছে।
আনন্দমঠ হোমে সপ্তাহে এক দিন করে মেডিক্যাল অফিসারের অসুস্থ আবাসিকদের পরীক্ষা করার বিধি রয়েছে। সেই পরীক্ষায় মেয়েটিকে হাসপাতালে ভর্তির সুপারিশ করা হয়েছিল কি না, তা জনাতে চাওয়ায় অতিরিক্ত জেলাশাসক বলেন, “সে-সব খতিয়ে দেখা হবে। তার জন্যই সমাজকল্যাণ দফতরের মাধ্যমে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.