ডাকাতিতে বাধা দিতে গিয়ে যুবক খুন হোগলবেড়িয়ায়
রাত তখন সাড়ে এগারোটা। পৌষের কনকনে শীতে অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়েছিল পাড়া। আচমকা রাতের নিস্তব্ধতা খানখান করে পাশের বাড়ি থেকে সমস্বরে ভেসে এল‘কে আছো, বাঁচাও! বাড়িতে ডাকাত পড়েছে গো।’ সেই সঙ্গে মহিলাদের চিৎকার, শিশুদের কান্না। বুধবার হোগলবেড়িয়ার গরিবপুরের বছর কুড়ির ইংরাজ মালিথ্যা এরপর আর বাড়িতে চুপ করে বসে থাকতে পারেননি। মায়ের নিষেধ, স্ত্রীর অনুনয় উপেক্ষা করে ডাকাত তাড়াতে একাই বেরিয়ে এসেছিলেন বাড়ির বাইরে। কিন্তু দুষ্কৃতীদের আগ্নেয়াস্ত্রর সামনে কার্যত তিনি কিছুই করতে পারেননি। একটা গুলিতেই নিথর হয়ে যায় তরতাজা ওই যুবকের দেহ। ততক্ষণে পাড়ার আরও লোকজন ছুটে আসাতে চম্পট দেয় ওই দুষ্কৃতীরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন রাতে জনা পনেরোর একটি ডাকাত দল হানা দেয় গরিবপুরের সম্পন্ন কৃষক এক্রাম মালিথ্যার বাড়িতে। বাড়িতে ঢোকার আগে রাস্তার ওপর ঝুলতে থাকা বাল্ব ভেঙে দেয়। তারপর বাড়ির গেট ভেঙে বাড়িতে ঢুকে অবাধে লুঠপাট চালায়। এক্রাম বলেন, “সকলের মুখ ঢাকা ছিল। হাতে ছিল আগ্নেয়াস্ত্র। বাড়িতে রাখা নগদ কয়েক হাজার টাকা ও সোনার গয়না নিয়ে তারা বেরিয়ে যায়।” দুষ্কৃতীরা বাইরে বেরোতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন এক্রামের পরিবারের লোকজন। কান্নার রোল শুনেই বিছানা ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন ইংরাজ। চিৎকার করে প্রতিবেশীদের ডাকতে থাকেন তিনি। এমন পরিস্থিতির জন্য দুষ্কৃতীরাও তৈরি ছিল না। বেগতিক দেখে ইংরাজের বুকে গুলি করে তারা।
ঘটনায় এলাকা শোকস্তব্ধ। চাষআবাদের পাশাপাশি সম্প্রতি তিনি একটি জুতোর দোকানও করেছিলেন। এলাকায় ভদ্র ও প্রতিবাদী ছেলে হিসেবে পরিচিতি ছিলেন ইংরাজ। বছর দেড়েক আগে তিনি বিয়ে করেন। স্ত্রী আঙ্গুরা বিবি অন্তঃসত্ত্বা। আঙ্গুরা বলেন, “ওকে একা বেরোতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু আমার কথা শুনলে এমনটা কিছুতেই হত না।” বাবা জালাল মালিথার কথায়, ‘‘পাড়ার কেউ বিপদে পড়লে ও ঝাঁপিয়ে পড়ে। এর জন্য যে জীবন যাবে ভাবিনি।’’
সীমান্তঘেঁষা এই এলাকায় বছর কয়েক আগেও ডাকাতি ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। তারপর পরিস্থিতি বদলে যায়। কিন্তু আচমকা এই ঘটনায় মানুষ আবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করেছেন। স্থানীয় হরেকৃষ্ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিএমের জমশের মণ্ডল বলেন, ‘‘সেইসব আতঙ্কের দিন আজও ভুলতে পারিনি। এই ঘটনার পর নিরাপত্তা নিয়ে একটা প্রশ্ন তো থেকেই যাচ্ছে।’’ তেহট্টের এসডিপিও সুনীল শিকদার বলেন, ‘‘পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হবে।’’
যাঁর বাড়িতে ডাকাত হানা দিয়েছিল সেই এক্রাম বলছেন, “কোথা থেকে যে কী হয়ে গেল কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। ওর পরিবারের সামনে কীভাবে দাঁড়াব?” ছেলের মৃত্যুর পর থেকে মাঝে মধ্যেই সংজ্ঞা হারাচ্ছেন মা মুক্তি বিবি। জ্ঞান ফিরলে তাকিয়ে থাকছেন উঠোনের প্রান্তে বাঁশের বেড়াটার দিকে। ওই পথ দিয়েই তো ছুটে বেরিয়ে গিয়েছিলেন ইংরাজ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.