লোকসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে খড়গ্রাম ব্লকে দল বদলের দাপটে বড়সড় ধাক্কা খেল মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস। কলকাতায় তৃণমূল ভবনে গিয়ে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের হাত থেকে বৃহস্পতিবার তৃণমূলের পতাকা গ্রহণ করেন মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের এক সদস্য, ৩ জন কর্মাধ্যক্ষ-সহ খড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির বেশ কয়েক জন সদস্য, এবং ওই ব্লকের তিন জন প্রধান-সহ ৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কয়েক জন সদস্য। পঞ্চায়েত সমিতি ও পঞ্চায়েতের দলত্যাগী সদস্য সংখ্যা নিয়ে অবশ্য কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মধ্যে চাপান-উতোর শুরু হয়েছে।
দলত্যাগীদের নেতা তথা খড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির তিন বারের প্রাক্তন সভাপতি আবুল কাসেমের দাবি, “৪ জন কর্মাধ্যক্ষ-সহ পঞ্চায়েত সমিতির আমরা মোট ৭ জন সদস্য এ দিন কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলাম। এ ছাড়াও এ দিন ১৭ আসনের মাড়গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান-সহ মোট ৯ জন সদস্য, ১৩ আসনের খড়গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ৯ জন সদস্য ১৬ আসনের পারুলিয়া পঞ্চায়েতের প্রধান-সহ মোট ১১ জন সদস্য দলবদল করে কংগ্র্সে থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তার ফলে ওই তিনটি পঞ্চায়েতই তৃণমূলের দখলে চলে এল। এ ছাড়াও সিপিএমের দখলে এড়োয়ালি পঞ্চায়েতের কংগ্রেসের সব ক’জন সদস্যই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।”
স্থানীয় বিধায়ক তথা কংগ্রেসের খড়গ্রাম ব্লক সভাপতি আশিস মার্জিত বলেন, “৭ জন নয়, ৩ জন কর্মাধ্যক্ষ-সহ পঞ্চায়েত সমিতির মোট ৪ জন সদস্য কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।” কংগ্রেসের দখলে থাকা ৩৬ আসনের খড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির মোট ২১টি আসন ছিল কংগ্রেসের দখলে। বাকি ১৫টি আসন রয়েছে সিপিএমের দখলে। কংগ্রেসের ২১ আসনের মধ্য দল বদলের ফলে ৭টি আসন তৃণমূলের দখলে গেলে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা ১৪তে গিয়ে ঠেকবে। তার ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবে কংগ্রেস। অন্য দিকে ৩ জন সদস্য দল বদল করে থাকলে পঞ্চায়ত সমিতিতে কংগ্রেস সংখ্যা গরিষ্ঠতার ‘ম্যাজিক ফিগার’ থেকে একটি আসন দূরে থাকবে।
তবে তখন তৃণমূলে যোগ দেওয়া সদস্যরা দলত্যাগ আইনের কোপে পড়বে। আশিস মার্জিত বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতির দলত্যাগী সদস্যদের প্রথমে শোকজ করা হবে। তারপর তাঁদের দল থেকে বহিস্কার করার পর দলত্যাগ আইনে সদস্যপদ বাতিলের জন্য মহকুমাশাসকের কাছে আবেদন করা হবে।” আবুল কাসেম বলেন, “কংগ্রেস আগে সদস্যপদ খারিজের জন্য পদক্ষেপ করুক তখন আমরা তার জবাব দেব।” দলত্যাগী গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যদের ব্যাপারে অবশ্য আশিস মার্জিত বলেন, “গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই সদস্যদের বুঝিয়ে দলে ফেরানোর চেষ্টা করা হবে।”
খড়গ্রাম বিধানসভাটি জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের অর্ন্তগত। ওই কেন্দ্রের একদা সাংসদ ছিলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। বর্তমানে ওই কেন্দ্রের সাংসদ রাষ্ট্রপতিপুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। রাষ্টপতির পরিবারের সঙ্গে আবুল কাসেমের ঘনিষ্ঠতা সর্বজনবিদিত। সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি ভবনে আবুল কাশেম বেশ কয়েকদিন ধরে আতিথেয়তা গ্রহণ করেন। দিল্লি থেকে ফিরে আসার কয়েকদিন পরই তিনি দলবদল করায় রাজনৈতিক কারবারিদের মধ্যে নানান প্রশ্ন উঠেছে। আবুল কাসেম অবশ্য বলেন, “রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ও রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীকে আজও আমি শ্রদ্ধা করি। তাঁদের প্রতি আমার কোন ক্ষোভ নেই। তৃণমূলে না গেলে খড়গ্রামের উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। এ কারণে অনুগামীদের নিয়ে দলবদল করলাম।”
রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী কিন্তু ওই ব্যাখ্যা মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “আবুল কাসেম ও মফিজুদ্দিন মণ্ডলের সাপে নেউলে সর্ম্পক ছিল। বহু চেষ্টা করেও সেই ঝামেলা মিটাতে পারিনি। রাজনীতির ভুজঙ্গ গতিতে তাঁরা আজ দু’জনে এক হয়েছেন। মফিজুদ্দিন জেলাপরিষদের কর্মাধ্যক্ষ হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ৪২ জন সদস্যের মধ্যে ৯ জনের বেশি কর্মাধ্যক্ষ করা যায় না। তাই তাঁকে কর্মাধ্যক্ষ করা যায়নি। আর আবুল কাসেম পঞ্চায়েত সমিতির সহকারি সভাপতি হতে চেয়ে ছিলেন। কিন্তু পঞ্চায়েত সমিতির কংগ্রেসের ২১ জন কংগ্রেস সদস্যের মধ্যে ১৮ জনই তার বিরোধিতা করেছিলেন। তাই তাঁকে সহকারী সভাপতি করা যায়নি।” |