ছাত্রসংসদ নির্বাচনের দিন এগিয়ে আসার সঙ্গেই কলেজগুলিতে বাড়ছে উত্তেজনা। আগামী ২০ জানুয়ারি মুর্শিদাবাদের ১৮টি কলেজে ছাত্রসংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে বৃহস্পতিবার সকালে পোস্টার ছেঁড়া নিয়ে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে ছাত্র পরিষদ ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকদের মধ্যে দু’দফায় সংঘর্ষ হয়। ধস্তাধস্তি থেকে দু’পক্ষের মধ্যে চলেছে কিল-ঘুষি। এতে দু’পক্ষের চার জন জখম হন। পরে লাঠি উঁচিয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ দিন কৃষ্ণনাথ কলেজে সকাল ১১টার পরে ফের দুপুর দেড়টা নাগাদ দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
একই ভাবে দু’পক্ষের মিছিলকে কেন্দ্র করে এদিন সকালের দিকে বহরমপুর কলেজেও সাময়িক উত্তেজনা তৈরি হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ শেষ পর্যন্ত দুপুর ২টোয় কলেজ বন্ধ করে দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের বাড়ি পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হয়। বহরমপুর থানার আইসি মোহায়মেনুল হক বলেন, “ওই দুটি ঘটনাতেই পুলিশ দ্রুত হস্তক্ষেপ করায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। ঘটনার তদন্ত চলছে। তবে কেউ গ্রেফতার হয়নি।” |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কলেজের মধ্যে কোনও রাজনৈতিক পোস্টার-ব্যানার টাঙানো যাবে না বলে সাত দিন আগে বিজ্ঞপ্তি জারি করে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ওই নির্দেশ উপেক্ষা করে কলেজের মধ্যেই তৃণমূল ছাত্রপরিষদের পক্ষ থেকে পোস্টার টাঙানো হয় বলে অভিযোগ। এ দিন হাতে লেখা ওই পোস্টার ছাত্রপরিষদের এক জন সমর্থক ছিঁড়ে দেয় বলে অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ জানায় তৃণমূল ছাত্রপরিষদ। কলেজ অধ্যক্ষ সোমেশ রায় বলেন, “এ দিন কৃষ্ণনাথ কলেজে পার্ট-১ পরীক্ষার শংসাপত্র বিলির কাজ চলছিল। সেই সময়ে পোস্টার ছিঁড়ে ফেলাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে বিবাদ থেকে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। তখন তাদের থামানোর চেষ্টা করি। কিন্তু দু’পক্ষই মারমুখী হয়ে ওঠায় শেষ পর্যন্ত গেটের বাইরে প্রহরায় থাকা পুলিশ এসে তাদের কলেজ থেকে বের করে দেয়।”
এ দিকে বিবাদমান ছাত্র সংগঠনের সমর্থকদের উদ্দেশে পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন শংসাপত্র নিতে আসা কলেজ ছাত্রীরা। তার মধ্যে অধিকাংশই আতঙ্কিত হয়ে কলেজ অধ্যক্ষের ঘরে আশ্রয় নেন। ওই ছাত্রীদের অনেকেই বিশেষ একটি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের সমর্থক হওয়ায় অধ্যক্ষ তাঁদের ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেও বলেন। কিন্তু অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে তাঁদের ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করেন বহরমপুর থানার এক পুলিশ অফিসার। পরে অবশ্য তা নিয়েও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ‘পক্ষপাতমূলক’-এর অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। |
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি পার্থ পাল বলেন, “এ দিন দু’পক্ষের সমর্থক কলেজ জমায়েত হওয়ায় সাময়িক উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই ঘটনায় আমাদের দুজন সমর্থক জখম হন।” পাল্টা ছাত্রপরিষদের জেলা সভাপতি সরফরাজ রুবেল শেখ বলেন, “পার্ট-১ পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকরা গণ্ডগোল পাকায়। তারা আমাদের সমর্থকদের মারধর করেছে। ওই ঘটনায় আমাদেরও দুই সমর্থক জখম হন।”
বহরমপুর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শশাঙ্কশেখর ভৌমিক বলেন, “এদিন পার্ট-১ পরীক্ষার্থীদের মধ্যে শংসাপত্র বিলির কাজ চলছিল। সেই সময়ে দু’পক্ষই কলেজের মধ্যে মিছিল করা নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার আগেই দ্রুত শংসাপত্র বিলি করেই কলেজে ছুটি ঘোষণা করা হয়। পরে পুলিশ প্রশাসনের সাহায্যে সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের কলেজের বাইরে বের করে দেওয়া হয়।” ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, “শুক্রবার থেকে পরিচয়পত্র দেখিয়ে ছাত্রছাত্রীদের কলেজে ঢোকানো হবে।” |