খাস জমি দখল ঘিরে ধুন্ধুমার চাপড়ায়
লেজ তৈরির জন্য খাস জমির দখল নিতে গিয়ে চাষিদের একাংশের বাধার মুখে পড়লেন প্রশাসনের কর্তারা। বৃহস্পতিবার ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়াল চাপড়ার শিকড়া এলাকায়। এ দিন প্রশাসনের কর্তারা ওই এলাকায় জমির মাপজোক করতে গেলে অনিচ্ছুক চাষিরা বাধা দেন। খবর পেয়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে চাষিদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়ে। চাষিদের অভিযোগ, পুলিশ লাঠি চালিয়েছে। অন্য দিকে চড়াও হওয়ার পাশাপাশি তাঁদের লক্ষ করে ইট, পাটকেলও ছোড়া হয়েছে বলে পাল্টা অভিযোগ পুলিশেরও। তিন জন মহিলা পুলিশকর্মী সহ মোট সাত জন জখম হয়েছেন বলে দাবি পুলিশের।
চাপড়ার সীমান্ত লাগোয়া গ্রাম শিকড়া। সেখানে খাস জমিতে একটি আইটিআই কলেজ ও একটি ডিগ্রি কলেজ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। সেই মতো জায়গা চিহ্নিতও করা হয়েছে। ১৭ ডিসেম্বর জেলা সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পানিঘাটার সভা থেকে ওই দু’টি কলেজের শিলান্যাস করেন। কিন্তু ওই জমিতে যাঁরা এতদিন চাষ করছিলেন তাঁরা জমি দিতে রাজি নন। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে ওই অনিচ্ছুক চাষিরা দফায় দফায় বৈঠকও করেন। কিন্তু তাতেও অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি। নদিয়ার জেলাশাসক পি বি সালিম বলেন, “আমি নিজেও ওই গ্রামে গিয়ে চাষিদের সঙ্গে কথা বলেছি। আলোচনায় ঠিক হয়, দু’মাস পরে জমির পাট কেটে নেওয়ার পরে ওঁরা জমি দিয়ে দেবেন। কিন্তু পরে আবার তাঁরা বেঁকে বসেন। আমরা ওই চাষিদের ক্ষতিপূরণের কথাও বলেছি। কিন্তু এ দিন ওই গ্রামে খাস জমির দখল নিতে গেলে চাষিদের একাংশের বাধার মুখে পড়েন ব্লক প্রশাসনের কর্তারা।”
অবরোধ ঠেলে গ্রামে ঢুকছে পুলিশ।
জেলা প্রশাসনের তরফে এই জমি চিহ্নিত করতে পারলেও মাপজোকের জন্য প্রশাসনের লোকজন বারবার গিয়েও ফিরে এসেছেন। বৃস্পতিবার চাপড়ার বিডিও রিনা ঘোষের নেতৃত্বে প্রশাসনের লোকজন ফের জমি মাপতে যান। এ দিনও অনিচ্ছুক চাষিরা তাঁদের বাধা দেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। প্রতিরোধকারীদের সঙ্গে পুলিশের বচসা শুরু হয়। সেই সময় পুলিশ লাঠি চালিয়ে তাঁদের সরিয়ে দিয়ে জোর করে ওই জমিতে ঢুকে পড়ে বলে অভিযোগ। এই ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার ২৪ ঘণ্টা চাপড়া ব্লক বন্ধের ডাক দিয়েছে এসইউসিআই। দলের নদিয়া জেলা সম্পাদক মৃণাল দত্ত বলেন, “চাষিদের জমি জোর করে দখল করে নিচ্ছে এই সরকার। আমাদের দলের কর্মীরা তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুললে তাঁদের উপর পুলিশ লাঠি চালায়। এই ঘটনায় ১৫ জন জখম হয়েছেন।”
যদিও পুলিশের লাঠি চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করে জেলার পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র বলেন, “কলেজ তৈরির জন্য জমির মাপজোকের জন্য প্রশাসনের লোকজন গিয়েছিলেন। এলাকার কেউ কেউ তাঁদের বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। পুলিশ তাঁদের বুঝিয়ে সরিয়ে দিয়েছে। লাঠি চালানো হয়নি।” পুলিশের পাল্টা দাবি, প্রতিরোধকারীরা পুলিশকে লক্ষ করে ইট ছুড়তে থাকে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শিকড়া গ্রামের ওই এলাকায় ২৩ একর খাস জমি আছে। তার মধ্যে আইটিআই কলেজের জন্য সাড়ে তিন একর, ডিগ্রী কলেজের জন্য পাঁচ একর এবং ছাত্রী আবাসনের জন্য দেড় একর জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে আইটিআই কলেজের জন্য সাড়ে চার কোটি, ডিগ্রি কলেজের জন্য সাত কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। আর পঞ্চাশ আসনের ছাত্রী আবাসনের জন্য আরও এক কোটি টাকা অনুমোদন করা হবে বলে জেলাশাসক জানিয়েছেন। ওই দু’টি কলেজের জন্য শিকড়া গ্রামের রাস্তা বিএডিপি প্রকল্পের টাকায় নতুন করে তৈরি করা হবে। জেলাশাসক পি বি সালিম বলেন, “আমরা পরিস্কার বলে দিয়েছি যাঁদের ওই খাস জমি ছাড়া আর কোথাও জমি নেই তাঁদের অন্যত্র জমি দেওয়া হবে। কিন্তু দেখা যাছে প্রায় ৯৫ শতাংশ লোকের ওই এলাকার বাইরে জমি আছে। মূলত তাঁরাই বাধা দিচ্ছেন।”

অবরোধকারীদের হঠাতে লাঠিচার্জ পুলিশের। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।
যদিও প্রতিরোধকারীদের মধ্যে আবু বক্কর মণ্ডল, প্রভুদান মণ্ডলরা বলছেন, “আমরা গরিব চাষি। এই খাস জমি এলাকাতেই আমাদের কারও এক বিঘা, কারও ১৫ কাঠা, কিংবা ৭ কাঠা জমি আছে। এর বাইরে আমাদের আর কোথাও জমি নেই। বংশানুক্রমে ৩০-৪০ বছর ধরে চাষ করে আসছি। অথচ এমন অনেকেই আছেন যাঁদের এর বাইরেও জমি রয়েছে। তাঁরা তৃণমূল করেন বলে তাঁদের জমি বেছে বেছে বাদ দিয়ে সরকার আমাদের মতো প্রায় ৬০ জন গরিব চাষির কাছ থেকে জমি কেড়ে নিচ্ছে।” তাঁরা বলেন, “আমরাও চাই গ্রামে কলেজ হোক। কিন্তু সেটা আমাদের ও আমাদের সন্তানদের পথে বসিয়ে নয়।” তাঁদের অভিযোগ, “শুধু প্রশাসন তৃণমূলের গুণ্ডাবাহিনী সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল। তারাও হুমকির পাশাপাশি আমাদের উপরে চড়াও হয়েছে।” এলাকার বিধায়ক তৃণমূলের রুকবানুর রহমান বলেন, “আমরা কাউকে বঞ্চিত করে কলেজ করতে চাই না। কারও উপরে জোর খাটাতেও চাই না। চাইলে সেটা আগেই করতে পারতাম। এলাকার মানুষ চাইছেন কলেজ হোক। এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য পুলিশের যা করণীয় পুলিশ তাই করেছে।” জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, “চাপড়ার মানুষ শিক্ষা চাইছেন। সব ধরণের ক্ষতিপুরণের ব্যবস্থা করা সত্ত্বেও জমি দিতে না চাওয়ায় এলাকার মানুষ ক্ষেপে গিয়েছিলেন।” তাঁর অভিযোগ, “সিপিএমের পরোক্ষ মদতে মুষ্টিমেয় কয়েক জন মানুষ চাপড়ার উন্নয়নকে আটকে দিতে চাইছে।” চাপড়ার প্রাক্তন বিধায়ক সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সামশুল ইসলাম মোল্লা বলেন, “শিকড়ার ঘটনার সঙ্গে আমাদের দলের কেউ জড়িত নেই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.