চা-বিস্কুট খেয়ে থানায়, বললেন স্ত্রীকে খুন করেছি
নিজে চা নিলেন। সঙ্গে বিস্কুট।
দু’টো বিস্কুট দিলেন সঙ্গে থাকা দুই ছেলেকে। একটা নিজে খেলেন। তার পর বেশ আয়েশ করে চায়ে চুমুক। আট টাকা বিল। দোকানদারকে ১০ টাকা মিটিয়ে দু’টাকা ফেরত নিয়ে পকেটে পুরে দুই ছেলেকে নিয়ে সোজা হাঁটা দিলেন থানার দিকে।
বৃহস্পতিবার সকালে তখন সবে চায়ে চুমুক দিয়ে ফরাক্কা থানার চেয়ারে গুছিয়ে বসেছেন এএসআই অরুণ সরকার। দুই ছেলেকে নিয়ে ধীরপায়ে থানায় ঢুকলেন আব্দুল নুর। অরুণবাবুর সামনে গিয়ে ভাবলেশহীন ভাবে আব্দুল বললেন, “স্ত্রীকে খুন করেছি। আমাকে গ্রেফতার করুন!” সাতসকালে স্ত্রীকে খুন করার এমন স্বীকারোক্তি শুনে হতভম্ব অরুণবাবু। বলে কী লোকটা?
অরুণবাবুর ভাবনায় বাধ সাধল অব্দুলের সঙ্গে থাকা তাঁর এক ছেলে। সে-ও জানাল, ঘুমন্ত অবস্থায় মাকে শাবল দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলেছেন তার বাবা। চা খাওয়া তখন মাথায় উঠেছে এএসআইয়ের। থানায় প্রবল আলোড়ন। আত্মসমর্পণকারী ব্যক্তিকে নিয়ে পুলিশ রওনা দেয় তাঁর বাড়ির দিকে। দোতলার ঘর থেকে উদ্ধার হয় আব্দুলের স্ত্রী রেজিনা পরভিনের (৩৩) রক্তাক্ত দেহ। পাশেই পড়ে শাবল।
ততক্ষণে খবর ছড়িয়েছে থানার বাইরেও। খবরটা শুনে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না ওই চায়ের দোকানের মালিক অরবিন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, “ভ্যানরিকশা থেকে নেমে চালককে টাকা মিটিয়ে ধীরেসুস্থে ওই ভদ্রলোক দোকানে এসে বসলেন। এক কাপ চা চাইলেন। সঙ্গের ৫-৭ বছরের দুই ছেলের জন্য চাইলেন বিস্কুট। মিনিট দশেক দোকানে ছিলেন। তবে ওঁর সঙ্গে সে ভাবে কথাও হয়নি আমার।” ওই সময় দোকানে ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল শেখ। তাঁর কথায়, “সকালের খদ্দের ভেবে আমিই যেচে তাঁকে জিজ্ঞেস করি, ‘দাদা আপনার কে আছে? উকিল, মুহুরি লাগবে? অভিযোগ লিখতে হবে’? শুনে তিনি ঘাড় নেড়ে বলেন, ‘না। আমি একটা অন্য কাজে এসেছি’। একটু পরেই দেখি, থানায় হাজির পুলিশের দু’টো গাড়ি। হন্তদন্ত হয়ে থানায় ঢুকছেন আইসি উত্তম দালাল। তার পরে এক পুলিশকর্মীর মুখে শুনলাম লোকটি বাড়িতে স্ত্রীকে খুন করে, থানায় এসেছেন ধরা দিতে।” অরবিন্দবাবু বলছিলেন, “থানার পাশে দোকান তো। এত দিন ধরে অনেক ‘ক্রিমিনাল’ দেখেছি। এঁকে দেখে কিছুই আঁচ করতে পারিনি!”
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘পেশায় হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক আব্দুল নুর অত্যন্ত বদমেজাজি। স্ত্রী-কে সব সময় সন্দেহ করতেন। আব্দুল পুলিশের কাছে কবুল করেছেন, পরিকল্পনা করেই তিনি স্ত্রীকে ঘুমন্ত অবস্থায় শাবল দিয়ে খুন করেছেন। স্ত্রীকে নির্যাতন ও খুনের অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, ভোরের দিকে কোনও এক সময় ওই খুনের ঘটনা ঘটেছে।
বছর পঁয়তাল্লিশের আব্দুল নুরের বাড়ি ফরাক্কার আমতলা গ্রামে। বছর ষোলো আগে বিয়ের পর থেকে এনটিপিসি মোড়ের কাছে নজরুলপল্লিতে বিশাল বাড়ি তৈরি করে সেখানেই থাকা শুরু করেন। দম্পতির তিন ছেলের মধ্যে বড় জন থাকে বাইরে এক স্কুলের হস্টেলে। সাত ও পাঁচ বছরের দুই ছেলে থাকত বাবা-মায়ের সঙ্গে। এই বাড়ির সামনে থাকেন প্রাক্তন সাংসদ আবুল হাসনাত খান। তিনি বলেন, ‘‘সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি, বাড়ির সামনে পুলিশ। খোঁজ নিয়ে জানলাম, পড়শি তাঁর স্ত্রীকে খুন করে থানায় ধরা দিয়েছেন। পাড়ার কেউ কিচ্ছু টের পাননি। কোনও চেঁচামেচিও প্রতিবেশীরা শোনেননি।” এলাকার বাসিন্দারা জানান, চিকিৎসক হিসাবে এলাকায় আব্দুলের নামডাক যথেষ্টই। পসার ভাল। তবে, অত্যন্ত বদরাগী ও ঝগড়ুটে স্বভাবের বলে লোকে তাঁকে জানে। তাই পাড়ার অনেকেই এড়িয়ে চলেন ওই পরিবারকে। স্ত্রী-র সঙ্গেও ইদানীং ওই ডাক্তারের তেমন বনিবনা ছিল না বলে অনেকের দাবি।
রেজিনার বাপের বাড়ি সুতি থানার দেবীপুর গ্রামে। খবর পেয়ে ফরাক্কায় ছুটে আসেন তাঁর ভাই বদরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘‘মাঝেমধ্যেই দিদির উপর নির্যাতন হত। বহু বার বাপের বাড়ি পালিয়ে আসতে হয়েছে দিদিকে। পরে মিটমাট করে ‘আর হবে না’ আশ্বাস দিয়ে দিদিকে জামাইবাবু বাড়ি নিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু, দিদিকে যে খুন করা হতে পারে, তা কল্পনাই করতে পারিনি কেউ!”
এ দিন দুপুরে থানায় গিয়ে দেখা গেল, আব্দুল-রেজিনার দুই নাবালক ছেলের চোখে-মুখে আতঙ্কের ছায়া। সাত বছরের জাভেদ ইকবাল থানায় বসে বলে, ‘‘মায়ের চিৎকারে ঘুম ভেঙে দেখি মাকে শাবল দিয়ে মাথায় মারছে বাবা। মাকে আমি জাপটে ধরি। তার পরেও বাবা মাকে মারতে থাকে। মা বিছানায় পড়ে গেল!” পুলিশ সুপার বলেন, “আব্দুলের দুই ছেলেই খুনের প্রত্যক্ষদর্শী। তাই তাদের নিরাপদ হেফাজতে রাখা হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.