|
|
|
|
অ্যান্টনির রংমশালে পিছিয়ে গেল ইস্টবেঙ্গলের লিগ জয়
রতন চক্রবর্তী • কলকাতা
ইস্টবেঙ্গল ০
মহমেডান ০ |
মিনি ডার্বি কে জিততে পারত?
আর্মান্দো কোলাসো বললেন, “সুয়োকার বলটা পোস্টে না লাগলে জিততে পারতাম। তবে ড্র তে আমি অখুশি নই। হেরে তো যাইনি।”
সঞ্জয় সেনের মন্তব্য, “ইস্টবেঙ্গল তো জেতার চেষ্টাই করল না। আমরা যা সুযোগ পেয়েছিলাম তাতে ম্যাচটা কিন্তু মহমেডানেরই জেতা উচিত ছিল।”
ম্যাচের পর ইস্টবেঙ্গল গ্যালারিতে আশঙ্কালিগ খেতাব জেতার জন্য ডার্বি পর্যন্ত না অপেক্ষা করতে হয়! মহমেডান গ্যালারিতে অবশ্য বাজছিল ব্যান্ড, ফাটছিল বাজি।
সাত ম্যাচ টানা জেতা ইস্টবেঙ্গলকে আটকে দেওয়ার পর, সাদা-কালো সমর্থকদের উচ্ছ্বাস দেখানোটা স্বাভাবিক। ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের হতাশাও।
তবে যেটা চমকপ্রদ ব্যাপার তা হল, সঞ্জয় সেনের হাতে পড়ে জোসিমার-নবিদের বদলে যাওয়া।
আব্দুল আজিজের জমানায় যে টিমটাকে দেখলে মনে হত ফ্যাকাশে, অনুজ্জল, মানসিকভাবে ভেঙে পড়া একটা দল— সেই মহমেডানই বৃহস্পতিবার মাঠে নেমেছিল নতুন মেজাজে। যেন ‘উল্টে দেখুন পাল্টে গেছি’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে।
টানা চার-পাঁচ-ছ’টা পাস খেলা, মাটিতে বল রেখে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা, জোনাল মার্কিংয়ে বিপক্ষকে রোখার জাল বোনা, নাছোড় আগুনে মেজাজ—ম্যাচ জেতার জন্য যা যা করার দরকার, সবই দেখা গেল মহমেডানের খেলায়।
বিরতির পরই ইস্টবেঙ্গলের দশ জন হয়ে যাওয়ার কথা!
রেফারি প্রবীর ধর সচেতন থাকলে অর্ণব মণ্ডলকে দেখাতেই পারতেন লালকার্ড! |
সাদা-কালো চক্রব্যুহে এ ভাবেই আটকে পড়েছেন সুয়োকারা।
বৃহস্পতিবার যুবভারতীতে। ছবি: উত্পল সরকার। |
নিজের তিন নম্বর জার্সি না পরে, রবার্টের ১৯ নম্বর জার্সি গায়ে বিরতির পর নেমে পড়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্ডার! ভিজে জার্সি পাল্টাতে গিয়েই এই বিভ্রাট। ফিফার নিয়মে যা গুরুতর অপরাধ। কারণ টিম লিস্টে রিজার্ভে থাকা রবার্টও পরেছিলেন ১৯ নম্বর জার্সিই। আর্মান্দো কোলাসো ভুল বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি চতুর্থ রেফারির কাছে গিয়ে জার্সি বদলের আবেদন করেন। অর্ণব বেঁচে যান।
অর্ণবের ভুল শুধরে দিলেও লাল-হলুদের গোয়ান কোচ নিজে অবশ্য একটা বড় ভুল করে বসেন মাঠে নামার আগেই। নিয়মিত গোল করে যাওয়া লেন-কে শুরু থেকে না নামিয়ে। জেমস মোগার সঙ্গে তিনি ফরোয়ার্ডে জুড়ে দিয়েছিলেন কেভিন লোবোকে। জীবনের শুরুতে স্ট্রাইকার খেললেও, এখন লোবোর জায়গা মাঝমাঠ। ফলে আর্মান্দোর ৪-৪-২ এর ফর্মেশন শেষ পর্যন্ত হয়ে যাচ্ছিল ৪-৫-১। নিট ফল, আক্রমণের ঝাঁঝটাই হারিয়ে গেল লাল-হলুদ জার্সির। যা কোলাসো জমানায় ইস্টবেঙ্গলের ব্র্যান্ড। মোগার অবস্থা অবশ্য যত দিন যাচ্ছে ততই খারাপ হচ্ছে। বিতর্কের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নামছে দক্ষিণ সুদানের ফুটবলারটির পারফরম্যান্সের গ্রাফ। আর এই সুযোগটা নিয়েই প্রায় বাজিমাত করে ফেলেছিলেন মহমেডান কোচ। নিখুঁত স্ট্র্যাটেজি তৈরি করে। তাঁর সুবিধা হয়ে গিয়েছিল নবি, নির্মল, মেহরাজ, মণীশ মৈথানির মতো বড় দল খেলা অভিজ্ঞ ফুটবলার হাতে থাকায়।
লেন না থাকায় এমনিতেই তাঁর সুবিধা হয়ে গিয়েছিল। মোগার পিছনে লুসিয়ানো সাব্রোসাকে তাই লাগিয়ে দিয়েছিলেন সঞ্জয়। আর আক্রমণের সাপ্লাই লাইন কাটতে সুয়োকার পিছনে ডাকটিকিট করে দিয়েছিলেন খড়গপুরের সালুয়ার চাষি পরিবারের ছেলে অ্যান্টনি সোরেনকে। মাস্টার স্ট্রোক সন্দেহ নেই। সুয়োকা আটকে যাওয়াতেই লাল-হলুদের মাঝমাঠ ভোকাট্টা।
ইস্টার্ন রেলের চাকরি বাজি রেখে ছোট্টখাট্টো চেহারার অ্যান্টনি এ বার এসেছেন ওপেন ক্লাব খেলতে। কোটি টাকার তারকা ফুটবলারদের অগোছালো ফুটবলের দিনে অ্যান্টনিই আলো ছড়ালেন যুবভারতীতে। রংমশাল হয়ে জ্বললেন। ভাল পাসার, নাছোড় মনোভাব, মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে হঠাত্ই গতি বাড়িয়ে বিপক্ষের গোল-বক্সে পৌঁছে যাওয়াএকেবারে কমপ্লিট মিডিও বলতে যা বোঝায়। পেন ওরজির অভাবটা বুঝতেই দিলেন না তিনি। অ্যান্টনিকে দেখে উচ্ছ্বসিত বিকাশ পাজিও। “রাইট উইং দিয়ে আমি যেমন অপারেট করতাম, একেবারে সে রকমই করে ছেলেটা। গতিও আছে, এখনকার ফুটবলে যা দরকার,” খেলা দেখে বেরোনোর পর বলছিলেন এক সময়ের ময়দান কাঁপানো তারকা।
শেষ তিন ম্যাচে (ইউনাইটেড, কালীঘাট এম এস, মোহনবাগান) পাঁচ পয়েন্ট পেলেই লিগ খেতাব মুঠোয় এসে যাবে। সেই দলটা এত খারাপ খেলল কেন? আর্মান্দো কোলাসো দায়ী করছেন, ক্লান্তি আর টানা ম্যাচ খেলার ধকলকে। তাঁর কথা ফেলে দেওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রশ্ন উঠছে, এর মধ্যেই গোলের যে সুযোগগুলো আসছে তা-ও কেন কাজে লাগাতে পারছেন না মোগা, ডিকা, সুয়োকারা। মোগা তো ঠিকমতো বলই রিসিভ করতে পারছেন না। বারবার তা বেরিয়ে যাচ্ছে। ওয়ান টু ওয়ান অবস্থায় বিপক্ষের কিপার লুই ব্যারেটোকে পেয়েও ডিকা যে সুযোগ নষ্ট করলেন তা অপরাধ।
ডেম্পো ফর্মুলায় ইস্টবেঙ্গলকে আনতে চাওয়া আর্মান্দোর অবশ্য এ সবে তেমন হেলদোল নেই। দু’পয়েন্ট নষ্ট করার পরও সাংবাদিক সম্মেলনে এসে তিনি এমন ভাবে চেয়ারে বসলেন যে, মনে হল ‘বারান্দায় রোদ্দুর’ গানটা ওর জন্যই লেখা। লিগ জয়ের ‘রোদ’ তাঁর ‘বারান্দায়’ এসে পড়েছে ইতিমধ্যেই।
চিডি-মোগাদের ডার্বির আগে দু’টো ম্যাচ রয়েছে ইউনাইটেড ও কালীঘাট এম এসের সঙ্গে।
কেমন অবস্থা ওই দু’টো টিমের? পরের ম্যাচ যে-দলের সঙ্গে, সেই ইউনাইটেডের কোচ এলকো সাতোরি মিনি ডার্বি দেখতে এসেছিলেন যুবভারতীতে। মাঠে হাজার চল্লিশ দর্শক এসেছেন দেখার পরও কলকাতা লিগকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তিনি। বলেও ফেললেন, “এই টুর্নামেন্টের কোনও গুরুত্ব নেই আমার কাছে। এই লিগ ‘জোক’ ছাড়া কিছুই নয়।” যা থেকে পরিষ্কার, ফেড কাপের কথা ভেবে রবিবার র্যান্টি-এরিকদের মাঠে নামাবেন না এলকো। নিট ফল, ইস্টবেঙ্গলের পোয়াবারো। আর কালীঘাট এম এস? তারা তো আরও দুর্বল। তাদের সচিব আবার ইস্টবেঙ্গলের কর্মসমিতির সদস্যও।
কোলাসো ‘আরাম কেদারায়’ বসে পা নাচাবেন না তো কে নাচাবেন?
|
ইস্টবেঙ্গল: গুরপ্রীত, নওবা, গুরবিন্দর, অর্ণব, সৌমিক, খাবরা, সুয়োকা, ভাসুম (লেন), ডিকা, লোবো (তুলুঙ্গা), মোগা (চিডি)।
মহমেডান: ব্যারেটো, নির্মল, সাব্রোসা, মেহরাজ, ধনরাজ, ইজরায়েল (জেরি), নবি, মণীশ, অ্যান্টনি, অসীম (স্যামসং), জোসিমার।
|
|
|
|
|
|