চিপকে রামনদের পছন্দের ‘ধানখেত’ বা ইডেনে দিন্দা, শিবশঙ্করদের জন্য অর্ডারি গ্রিনটপ এখন অতীত। রঞ্জি ট্রফিতে বাংলা-রেলওয়েজ কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে এ সব আর চলবে না। চিপকে তামিলনাড়ুকে হারিয়ে লক্ষ্মীরতন শুক্লরা ঘরে ফিরতে না ফিরতেই বোর্ড শহরে ঢুকিয়ে দিল ইডেনের বাইশ গজের ‘পাহারাদার’-দের। তিন দিন আগেই উইকেটের দায়িত্ব নিয়ে ফেললেন বিসিসিআই কিউরেটররা। ফতোয়া জারি হয়েছে, হোম ভেনু পেলেও উইকেট নিয়ে হোম টিমের খবরদারি বরদাস্ত করা হবে না।
বোর্ডের দেওয়া প্রেসক্রিপশন মেনে তাদের অনুমোদিত কিউরেটররা যেমন উইকেট দেবেন, তেমন উইকেটেই খেলতে হবে দু’দলকে। অর্থাত্ লক্ষ্মীরতন শুক্লরা কোয়ার্টার ফাইনালে ঘরের মাঠে বিপক্ষকে গ্রিন টপে ফেলে বধ করার সুযোগ পাবেন কি না, সন্দেহ। অবশ্য শুধু ইডেন নয়, রঞ্জির নক আউটে সব মাঠেই বোর্ড অনুমোদিত কিউরেটরের তদারকিতে প্রস্তুত উইকেট থাকছে। লিগ ম্যাচগুলিতে নিজেদের দলের শক্তি অনুযায়ী যেমন উইকেট বেছে নিত হোম টিম, নক আউটে আর তা হচ্ছে না। |
দলজিত্ সিংহ। বোর্ডের পিচ ও গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান। |
“সবুজ আভা থাকবে। বাউন্স ও ক্যারি দুটোই থাকবে। পেসাররা যেমন ভাল বল করার
রসদ পাবে, তেমন ব্যাটসম্যানরাও স্ট্রোক খেলতে পারবে। দু-তিন দিন পর থেকে এই উইকেটে
টার্নও পাওয়া যাবে। এমন উইকেট না হলে আর ম্যাচের ফয়সালা হবে কী করে? ” —দলজিত্ সিংহ |
|
লিগ পর্যায়ে বাংলা ঘরের মাঠে যে ম্যাচগুলো খেলেছে, তাতে গ্রিনটপ উইকেটই নিয়েছে তারা। পেস বিভাগ শক্তিশালী হওয়াতেই এই সিদ্ধান্ত। কোয়ার্টার ফাইনালেও এমনই উইকেট পাওয়ার আশা করেছিলেন অশোক মলহোত্র-লক্ষ্মীরতন শুক্লরা। কিন্তু বাংলার ক্রিকেটাররা বুধবার চেন্নাইয়ে তামিলনাড়ুকে হারিয়ে শহরে ফেরার আগে থেকেই যে ত্রিপুরা থেকে এসে ইডেনে কাজ শুরু করে দিয়েছেন পূর্বাঞ্চলে বোর্ডের প্রধান কিউরেটর আশিস ভৌমিক ও বোর্ডের পিচ ও গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান দলজিত্ সিংহ, তা বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্তও জানা ছিল না তাঁদের। এ দিন সন্ধ্যায় শহরের এক পাঁচতারা হোটেলে নিজের ঘরে বসে দলজিত্ বলেন, “এগুলো হোম ভেনু হিসেবে গণ্য করা হবে না, বরং এগুলোকে ‘আইডেন্টিফায়েড ভেনু’ বলাই ভাল। যে হেতু আগে থেকেই ঠিক করা রয়েছে কোথায় খেলাগুলো হবে। কারণ, সব ক’টা ভেনুতেই বিসিসিআই-এর গাইডলাইন মেনে পাঁচ দিনের ম্যাচের আদর্শ উইকেট তৈরি করা হচ্ছে। এমন উইকেট, যাতে ম্যাচগুলোর নিষ্পত্তি হওয়ার যথেষ্ট প্রবণতা থাকবে।”
কিন্তু কেমন সেই উইকেটের প্রেসক্রিপশন?
“সবুজ আভা থাকবে। বাউন্স ও ক্যারি দুটোই থাকবে। পেসাররা যেমন ভাল বল করার রসদ পাবে, তেমন ব্যাটসম্যানরাও স্ট্রোক খেলতে পারবে। দু-তিন দিন পর থেকে এই উইকেটে টার্নও পাওয়া যাবে। এমন উইকেট না হলে আর ম্যাচের ফয়সালা হবে কী করে?”, বলছিলেন দলজিত্। |
সপরিবারে উত্সব। বৃহস্পতিবার নিজের বাড়িতে তামিলনাড়ু
ম্যাচের নায়ক সৌরাশিস লাহিড়ী। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস। |
অর্থাত্, ম্যাচ জিততে হলে দলে সঠিক ‘ব্লেন্ড’ প্রয়োজন। কোনও এক বিভাগকে বেশি শক্তিশালী করে তুলে কেল্লা ফতে করার ফর্মুলায় গেলেই বিপদে পড়তে হতে পারে। এ দিন রাত পর্যন্ত বাংলা শিবিরে গ্রিন টপ উইকেটে তিন পেসারে নামার ভাবনা ছিল। কিন্তু বোর্ডের কিউরেটর এসে উইকেট প্রস্তুত করছেন শুনে সেই পরিকল্পনা আপাতত মুলতবি। শুক্রবার প্র্যাকটিসে গিয়ে উইকেটের অবস্থা দেখে তবেই দলের কম্বিনেশন নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করবেন বলে জানালেন কোচ মলহোত্র। বললেন, “বোর্ড যদি এটা ঠিক করে থাকে, তা হলে তা মেনে নিতেই হবে। দেখা যাক কেমন উইকেট পাই। সেই বুঝে দল করতে হবে।” বাংলার ক্যাপ্টেন লক্ষ্মীরতন শুক্ল-র বক্তব্য, “যে দল ভাল ক্রিকেট খেলবে, তারাই জিতবে। এটাই নিয়ম। ইডেনের উইকেটের সাধারণ চরিত্রটা তো আমাদের সবারই জানা। আশা করি তেমন উইকেটই পাব। যেমন উইকেটই হোক, আমরাই জিতব।” নতুন এই দুশ্চিন্তার মধ্যেই অবশ্য বাংলা শিবিরে ভাল খবর, সেমিফাইনালে উঠলে ব্যাট হাতে নামতে পারেন মনোজ তিওয়ারি। তবে তার আগে শেষ আটের কঠিন হার্ডলটা পেরোতে হবে। |
কোয়ার্টার ফাইনালে |
• বাংলা বনাম রেলওয়েজ (ইডেন)
• মুম্বই বনাম মহারাষ্ট্র (ওয়াংখেড়ে)
• কর্নাটক বনাম উত্তর প্রদেশ (চিন্নাস্বামী)
• পঞ্জাব বনাম জম্মু ও কাশ্মীর (মোতিবাগ)।
• সেমিফাইনাল মোহালি ও ইনদওরে।
• ফাইনাল হায়দরাবাদের উপ্পলে। |
|