শীতকালে বনগাঁর নতুনগ্রাম বাওরে বেড়াতে আসে বহু পরিযায়ী পাখি। প্রকৃতিপ্রেমী থেকে শুরু করে পক্ষী বিশারদ— সকলেরই যাওয়া আসা সেখানে। বাদ নেই পাখি শিকারিরাও। অন্য দিকে, বাওরের জল কচুরিপানা আর পদ্ম বনে ভর্তি হয়ে যাওয়ায় পাখির আসা-যাওয়া কমেছে অনেকটাই। পাখি বাঁচাতে নতুনগ্রামে পাখিরালয় গড়ার দাবি জানিয়েছেন বনগাঁর একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তাঁদের পাশে আছেন স্থানীয় মানুষও।
বনগাঁ-চাকদহ সড়ককে ডান দিকে রেখে পূর্ব-পশ্চিমে বনগাঁর চাঁপাবেড়িয়া থেকে চালকি পর্যন্ত প্রায় ৫০০ বিঘা বিস্তৃত এই জলাভূমি। উত্তরে নতুনগ্রামের নামেই নামকরণ হয়েছে বাওরের। নভেম্বর থেকে মার্চের শুরু অবধি গোটা শীতেই এই জলাভূমিতে পাখিদের আনাগোনা চলে। ভিড় জমান পর্যটক, পক্ষীবিশারদ থেকে আলোকচিত্রীরা। পক্ষীবিদ ও আলোকচিত্রী ধৃতিমান বিশ্বাস জানান, পবনকূট, মুর হেন, টারটেল মুর হেন, উকিং ডাক্স-এর মতো বিভিন্ন পাখি আসে এখানে। কচুরিপানা জমে যায় বলে এখন আর তেমন সরাসরি পরিযান হয় না। ফিরতি পথে অবশ্য দেখা মেলে পিকস, কোর্চাডের মতো বিদেশি পাখির। এ ছাড়াও, পানকৌড়ি, চাতক, মাছরাঙার মতো বিভিন্ন দেশি পাখি তো রয়েইছে। তবে গত কয়েক বছরে পাখিদের আসা যাওয়া বেশ কমেছে বলে জানালেন ধৃতিমানবাবু।
জলাভূমিতে ছবি তুলতে এসেছিলেন রাজা সাহা, কৃষ্ণেন্দু পালিত। তারা বলেন, “অনেক বছর ধরেই আমরা এখানে ছবি তুলতে আসি। এত পাখি এক সঙ্গে এই মহকুমায় আর পাওয়া যাবে না।” |
বাসিন্দাদের অভিযোগ, ক্রমশই কমছে পরিযায়ীদের আসা-যাওয়া। উপযুক্ত পরিবেশের অভাব ও পাখি শিকারই এর মূল কারণ বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। এলাকার বাসিন্দা কার্তিক সরকার জানান, “এখানে অনেকে ফাঁদ পেতে পাখি ধরত বা এয়ারগান দিয়ে পাখি শিকার করতে আসত। আমরা বাধা দিতাম। কিন্তু রাতের বেলা শিকারিদের আটকানো যেত না। তবে দিনের বেলা পাখি শিকার অনেকটাই কমে গিয়েছিল।” স্থানীয় কৃষক রাজা মণ্ডল বলেন, “ছোটবেলা থেকে এখানে পাখিদের আনাগোনা দেখছি। অনেক বছর আগে এখানে জল অনেক স্বচ্ছ্ব ছিল। তাতে পাখিদের খেলা দেখে ভারি ভাল লাগত। এখন পুরো বাওরটাই পদ্মবন আর কচুরি পানায় ভর্তি। দু’বছর আগে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে ৭ লক্ষ টাকা খরচ করে কচুরিপানা পরিস্কার করা হয়েছিল। অনেক বেশি পাখিও এসেছিল সেই বছর। এখন আবার পানায় ঢেকে গিয়েছে বাওর। আগে প্রায় ১০-১২ রকম প্রজাতির পরিযায়ী আসত। এখন আসে মোটে ৪-৫ রকম।”
প্রতিকূলতা সত্ত্বেও পাখি সংরক্ষণে উত্সাহের শেষ নেই এলাকার মানুষের। পাখি শিকারিদের বাধা দেওয়ার পাশাপাশি তাঁরা বাড়ির ছোটদেরও শেখান কী ভাবে নির্বিঘ্ন পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে পাখিদের জন্য। তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে বনগাঁর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি। তাদের তরফে অমিত সরকার জানান, “জলাভূমিটিতে আমরা সরেজমিনে খোঁজ-খবর নিয়েছি। স্থানীয় মত্স্যজীবীরা ওখানে মাছ চাষ করেন। তাঁদের সমিতির সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। ওখানে আসা দেশি বিদেশি পাখিদের একটা তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আমরা সরকারের কাছে একটা পাখিরালয় ও পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার প্রস্তাব দেব।” বাসিন্দাদেরও বক্তব্য, সাঁতরাগাছি বা নরেন্দ্রপুরের মতো পাখি সংরক্ষণালয় এখানে গড়ে উঠলে ভাল হয়। সব রকম সাহায্য করতে তাঁরা প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন। |