মেঘলা চিতাবাঘ সংরক্ষণে এগিয়েছে ত্রিপুরার বন দফতর।
সিপাহিজলা অভয়ারণ্যে বিলুপ্তপ্রায় ওই প্রজাতির (ইংরেজিতে ‘ক্লাউডেড লেপার্ড’ নামে পরিচিত) প্রাণীদের বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়েছে রাজ্য প্রশাসন। কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের অনুমতিও মিলেছে। বন দফতর সূত্রের খবর, ২০০৮ সাল থেকে অভয়ারণ্যে চিতাবাঘদের সংরক্ষণে উপযুক্ত ব্যবস্থা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে সেখানে ৪টি ক্লাউডেড লেপার্ড ছিল। এখন তা হয়েছে ৫টি।
প্রশাসনিক সূত্রে জানানো হয়েছে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জঙ্গলে আগে প্রায়ই মেঘলা চিতাবাঘ দেখা যেত। চোরাশিকারিদের উত্পাত, জলবায়ুর পরিবর্তনে তাদের সংখ্যা অনেক কমেছে। ত্রিপুরার চিফ ওয়াইল্ডলাইফ ওয়ার্ডেন অতুল গুপ্তা বলেন, “হিমালয়ের রেডপাণ্ডার মতো মেঘলা চিতাবাঘও বিলুপ্তপ্রায়। ত্রিপুরার জঙ্গল, জলবায়ু ওই প্রজাতির সংরক্ষণের পক্ষে আদর্শ। সে দিকে তাকিয়েই অভয়ারণ্যে ওই পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।” তিনি জানান, জঙ্গলে ঝোপঝাড়ের রঙের সঙ্গে মিল রয়েছে মেঘলা চিতাবাঘের গায়ের রঙের। আত্মরক্ষায়, নিজেকে লুকিয়ে রাখতে তা কাজে লাগে। কিন্তু চোরাশিকারিদের নজর তারা এড়াতে পারেনি। |
২০০৮ সালে কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ত্রিপুরায় কয়েকটি প্রজাতির বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ শুরু হয়। মেঘলা চিতাবাঘ ছাড়াও সংরক্ষণ করা হয়চশমা বাঁদর, ছোট লেজের বাঁদর, বিশেষ প্রজাতির এক বনবিড়াল।
বন দফতরের এক কর্তা জানান, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ প্রক্রিয়া জটিল। যে প্রাণীটিকে সংরক্ষিত করা হবে, সেটির ডিএনএ পরীক্ষা করতে হয়। পরীক্ষাগার হায়দরাবাদে, ‘সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি’। সেখানকার গবেষকরা জানিয়ে দেন, কোন প্রাণী ‘বংশগতি’ বজায় রাখতে সক্ষম। পরীক্ষালব্ধ ফলাফলের উপর ভিত্তি করে সিপাহিজলা অভয়ারণ্যে চিতাবাঘের প্রজননের ব্যবস্থা করা হয়। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারতের বিভিন্ন অভয়ারণ্য এবং চিড়িয়াখানায় এখনও পর্যন্ত ৩৬টি বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির সংরক্ষণ করা হচ্ছে। অতুলবাবু বলেন, ‘‘দার্জিলিঙের রেডপান্ডার মতোই বিলুপ্তির পথে এগোচ্ছে মেঘলা চিতাবাঘ। ওই প্রজাতির সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যবস্থাই করা হয়েছে। কিছুটা সময় লাগলেও সাফল্য মিলছে।’’ তিনি জানিয়েছেন, সংখ্যা আরও বাড়লে মেঘলা চিতাবাঘের শাবকগুলিকে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হবে। সংরক্ষণ কেন্দ্রে জন্মানো ওই শাবকগুলিতে জঙ্গলের জীবনে মানিয়ে নেওয়ার জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ত্রিপুরা ছাড়া অন্য কোথাও মেঘলা চিতাবাঘের সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। এ জন্য পরিকাঠামো গড়তে আর্থিক সাহায্য করেছে কেন্দ্রীয় সরকারও। |