সাগর-উন্নয়নে কোপ ম্যানগ্রোভে, বাঁধ রক্ষা নিয়ে প্রশ্ন
সাগরমেলা সামনেই। পুণ্যার্থীদের সুবিধার জন্য সাগরদ্বীপের চেমাগুড়ি পয়েন্টের কাছে বেণুবনে তৈরি হচ্ছে নতুন রাস্তা ও জেটি। এ জন্য কাটা পড়েছে বহু উন্নত প্রজাতির ম্যানগ্রোভ। পরিবেশবিদদের আশঙ্কা, প্রায় ৭০০ মিটার এলাকা জুড়ে যে ভাবে ম্যানগ্রোভ কাটা হয়েছে, তাতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিপন্ন হতে পারে দ্বীপভূমি। কেননা, ম্যানগ্রোভ দ্বীপভূমির নদীবাঁধের ভাঙন আটকাতে রক্ষাকবচের ভূমিকা নেয়।
নতুন জেটি ও রাস্তা তৈরির দায়িত্বে রয়েছে গঙ্গাসাগর-বকখালি উন্নয়ন পর্ষদ। পর্ষদের চেয়ারম্যান বঙ্কিম হাজরা বলেন, “উন্নয়নের জন্য কিছু ম্যানগ্রোভ কাটা হয়েছে। সর্বস্তরে বৈঠকের পরেই পুণ্যার্থীদের সুবিধার জন্য সরকারি উদ্যোগে জেটি ও রাস্তা হচ্ছে।” তাঁর দাবি, “নদীর চরে আরও ম্যানগ্রোভ চারা পৌঁতা হচ্ছে। কোনও ভাবেই নদীবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।”
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, নামখানা থেকে যে সব পুণ্যার্থী সাগরে যান, তাঁদের জন্য চেমাগুড়ি পয়েন্টে জেটি রয়েছে। কিন্তু সেই জেটিতে যাওয়ার সময়ে মুড়িগঙ্গা নদীতে ভাটা থাকলে অনেক সময়েই চড়ায় আটকে যায় ভেসেল। সেই সমস্যা এড়াতে এবং পুণ্যার্থীদের ভিড় সামাল দিতে ওই জেটির কাছেই বেণুুবনে তৈরি হচ্ছে নতুন জেটি। ওই জায়গায় নদী গভীর হওয়ায় ভাটার সময়েও ভেসেল চলতে পারবে বলে মনে করছেন প্রশাসনের কর্তারা। ওই জেটি থেকে প্রায় ৬০ ফুট চওড়া একটি রাস্তাও তৈরি করা হচ্ছে। যা মেশানো হবে সাগরে যাওয়ার মূল রাস্তার সঙ্গে। ওই জেটি আর নতুন রাস্তা গড়তে গিয়েই ম্যানগ্রোভ কাটা হয়েছে। দু’টি যন্ত্রের সাহায্যে কাটা ম্যানগ্রোভ সরানোর কাজও চলছে সেখানে।
চলছে ম্যানগ্রোভ নিধন। ছবি: দিলীপ নস্কর।
চেমাগুড়ি পয়েন্ট প্রায় বঙ্গোপসাগর লাগোয়া। মুড়িগঙ্গায় স্রোতও রয়েছে। সাধারণ ঝড়-ঝঞ্ঝাতেই ওই এলাকার নদীবাঁধ যখন-তখন চুরমার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মানছে প্রশাসনও। তা হলে কেন চেমাগুড়িতে সরকারি উদ্যোগে ম্যানগ্রোভ কাটা হল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশবিদেরা। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরেই সুন্দরবন এলাকায় নদীবাঁধ রক্ষায় ম্যানগ্রোভ সৃজনে জোর দিচ্ছেন। কেননা, ঝড়-ঝঞ্ঝা বা জলোচ্ছ্বাসের প্রাথমিক ধাক্কাটা নদীর চরের ম্যানগ্রোভই সামলে দেয়। তাতে নদীবাঁধে চাপ পড়ে না।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র ও প্রাণী বিভাগের অধ্যাপক অমলেশ চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৯৮৩-৮৪ সালে বেণুবনে নদীর চরে সাত কিলোমিটার জুড়ে ওই ম্যানগ্রোভ পুঁতেছিল তৎকালীন সুন্দরবন উন্নয়ন দফতর। উদ্দেশ্য ছিল, ম্যানগ্রোভের পিছনের নদীবাঁধ রক্ষা। সেই ম্যানগ্রোভ সাফ হয়ে যাওয়ায় অমলেশবাবুর আশঙ্কা, “ওই এলাকায় নতুন করে ম্যানগ্রোভ পোঁতা হলে তা বেড়ে উঠতে বছর পাঁচেক সময় লাগবে। এর মধ্যে বড় ঝড়-ঝঞ্ঝা হলে বিপর্যয় ঠেকানো যাবে না।” একই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অন্য পরিবেশবিদরাও। সেই সঙ্গে তাঁদের খেদ, ওই জঙ্গল কাটার ফলে আশ্রয় হারাল বহু পাখি।
অমলেশবাবুরা যে আশঙ্কা করছেন, তা নিয়ে প্রশ্নের কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি জেলাশাসক তথা সাগরমেলা কমিটির সদস্য শান্তনু বসুর কাছ থেকে। চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। এসএমএস-এরও জবাব দেননি তিনি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.