রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে গত মাসেই ধনেখালিতে দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে প্রাক্তন মন্ত্রী নরেন দে-সহ দলের ১১ জন নেতাকর্মীকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ তুলেছিল ফরওয়ার্ড ব্লক। সেই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে এবং প্রহৃতদের সঙ্গে কথা বলতে বৃহস্পতিবার ধনেখালিতে আসেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। প্রহৃতদের প্রতিবাদে নামার পরামর্শ দেন।
ধনেখালির মদনমোহনতলায় সিপিএমের জোনাল অফিসের সামনে ছোট ট্রাকে এক পথসভায় বিমানবাবু বলেন, “সে দিন যাঁরা প্রহৃত হন, তাঁরা আর চুপ করে থাকবেন না। প্রতিবাদে নামুন। দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের হামলা অব্যাহত। নতুন দল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে আমাদের দলের একশোরও বেশি কর্মী খুন হয়েছেন।”
বিমানবাবুর নেতৃত্বে বামফ্রন্টের তরফে ধনেখালির মদনমোহনতলা থেকে সিনেমাতলা পর্যন্ত এ দিন প্রতিবাদ-মিছিল হয়। উপস্থিত ছিলেন ক্ষিতি গোস্বামী, রবীন দেব, ত্রিদিব ভট্টাচার্য, মঞ্জুকুমার মজুমদার, সুদর্শন রায়চৌধুরী, রূপচাঁদ পাল প্রমুখ নেতারা। ছিলেন নরেনবাবুও। মদনমোহনতলায় দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ সিপিএমের জোনাল কার্যালয়টি পরিদর্শন করেন বিমানবাবুরা। তার পরে মিছিল যায় সিনেমাতলায়। সেখানকারই দলীয় কার্যালয়ে গত ৮ ডিসেম্বর প্রহৃত হন বর্ষীয়ান ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা নরেন দে এবং ওই দলেরই প্রাক্তন বিধায়ক অজিত পাত্র-সহ আরও ১০ জন। ফব-র দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানোরও অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। |
বক্তৃতা করছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। দীপঙ্কর দে-র তোলা ছবি। |
সেই ঘটনার পর থেকেই ফরওয়ার্ড ব্লকের কার্যালয়টি বন্ধ। এ দিন সেই কার্যালয়ও পরিদর্শন করেন বিমানবাবুরা। পথসভায় তৃণমূলের ‘সন্ত্রাস’ নিয়ে বলতে গিয়ে পুলিশকেও একহাত নেন ফ্রন্ট চেয়ারম্যান। তাঁর অভিযোগ, “যে সরকার যখন থাকে, পুলিশ তখন তার হয়ে কাজ করে।” গত ৮ ডিসেম্বরের ওই হামলার সময়ে পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছিল বলে অভিযোগ ছিল ফরওয়ার্ড ব্লকের।
হুগলির পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী এ দিন জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের মধ্যে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজ চলছে। জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত ওই ঘটনাকে ফরওয়ার্ড ব্লকের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল বলে দাবি করেছেন। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “সে দিনের ঘটনায় দলের কেউ জড়িত ছিল না। ফব-র দুই বর্গাদারের বিবাদের জেরেই ওই ঘটনা।”
গত ৮ ডিসেম্বর বিকেলে সিনেমাতলায় দলীয় কার্যালয়ে বৈঠক করতে যান প্রাক্তন মন্ত্রী তথা ফরওয়ার্ড ব্লকের বর্ষীয়ান নেতা নরেন দে। পাশের একটি লজে ওই সময়ে তৃণমূল মহিলা সমিতির বৈঠক চলছিল। বাইরে থাকা কিছু ফরওয়ার্ড সমর্থক তাঁদের মহিলা সমর্থকদের উদ্দেশে কটূক্তি করে, এই অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ জানান এলাকার তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। দু’পক্ষের মধ্যে বচসা থেকে মারামারি বাধে। সেই ফাঁকেই এক দল তৃণমূল সমর্থক ফরওয়ার্ড ব্লকের কার্যালয়ে ঢুকে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। এক দল যুবক লাঠি, বাঁশ নিয়ে ঢুকে মাটিতে ফেলে বেধড়ক পেটায় নরেনবাবুকে। তাঁর দু’চোখে আঘাত লাগে। রক্ত ঝরতে থাকে। তিনি জ্ঞান হারান। তাঁকে ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ওই হামলায় জখম হন ধনেখালির প্রাক্তন বিধায়ক অজিত পাত্র-সহ আরও ১০ জন। কার্যালয়ের বাইরে থাকা নরেনবাবুর গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। পুলিশ গিয়ে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনে। |