সম্পাদকীয় ২...
প্রকৃত সংস্কার
বশেষে কি কংগ্রেসের সংস্কারে মতি ফিরিল? জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে এগ্রিকালচারাল প্রডিউস মার্কেট কমিটি আইন সংশোধন করিবার যে প্রতিশ্রুতি কংগ্রেস দিয়াছে, তাহাতে একটি ক্ষীণ আশার আলো দেখা যাইতেছে। এই আইন অনুসারে, রাজ্য সরকার অনুমোদিত নির্দিষ্ট পাইকারি বাজারে নথিভুক্ত পাইকারের নিকটই কৃষক তাঁহার উত্‌পন্ন ফসল বিক্রয় করিতে পারিবেন, অন্য কাহাকে নহে। অর্থাত্‌, এই আইন কৃষিপণ্যের বাজারের নিয়ন্ত্রণ পাইকার-আড়তদারদের হাতেই তুলিয়া দিয়াছিল। কংগ্রেস জানাইয়াছে, অতঃপর যে কেহ সরাসরি কৃষকের নিকট হইতে সব্জি এবং ফল কিনিতে পারিবে, কোনও মধ্যস্বত্বভোগীর প্রয়োজন হইবে না। বিষয়টি রাজ্য সরকারের অধিকারভুক্ত। যে রাজ্যগুলিতে কংগ্রেসের সরকার আছে, সেখানে এই নূতন ব্যবস্থা চালু হইবে। ঘটনাক্রমে, দেশের যে চারটি শহরে বৃহত্তম পাইকারি বাজারগুলি অবস্থিত, তাহার তিনটিতে কংগ্রেসের সরকার আছে। কাজেই, এই সিদ্ধান্তটির প্রভাব গোটা দেশে পড়িবে বলিয়াই অনুমান।
এই সংস্কার যদি সত্যই হয়, তাহার প্রভাব অতি তাত্‌পর্যপূর্ণ হইবে। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে, তাঁহাদের হাতে থাকা কার্যত একচেটিয়া অধিকারের কারণেই, আড়তদার-পাইকার শ্রেণির ভূমিকা অত্যন্ত বড়। তাঁহারা কৃষকের নিকট হইতে যে দামে শস্য কেনেন এবং শেষ পর্যন্ত খুচরা বাজারে যে দামে পণ্য বিক্রি হয়, উভয়ের মধ্যে ফারাক বিস্তর— কখনও কখনও বেশ কয়েক গুণ। এই মুনাফার একটি অংশ পাইকাররা পান, সরকারি করের হিস্যাও কিছু কম নহে। কৃষক ও ক্রেতা, উভয়েই এই ব্যবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত হন। কৃষক তাঁহার শস্যের জন্য অতি সামান্য দাম পান, আর ক্রেতাকে বহু অর্থ ব্যয় করিতে হয়। আইনের প্রস্তাবিত সংস্কার এই মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণিকে সরাইয়া দিবে। সংগঠিত খুচরা ব্যবসায়ীরা সরাসরি কৃষকের নিকট হইতে শস্য কিনিতে পারিবেন। অন্যরাও পারিবেন। যেহেতু মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণির মুনাফার সংস্থানের আর প্রয়োজন নাই, ফলে কৃষককে বাড়তি মূল্য দিতে সমস্যা হইবে না। আবার, খুচরা ক্রেতাও অপেক্ষাকৃত কম দামে সব্জি, ফল পাইবেন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি যে দেশকে সন্ত্রস্ত করিয়া রাখিয়াছে, সেখানে এই ব্যবস্থা অতি জরুরি।
কিন্তু, সম্পূর্ণ সদিচ্ছা এবং আইন সংশোধনের পরেও এই বাজারটি চালু হইবে কি না, তাহার নিশ্চয়তা নাই। তাহার কারণ, এই বাজারে সুষ্ঠু ভাবে চলিতে হইলে যে গ্রামীণ পরিকাঠামো প্রয়োজন, ভারতের অধিকাংশ রাজ্যেই তাহা নাই। ইউপিএ-র দুই দফা শাসনের ইহা এক মস্ত ব্যর্থতা। গ্রামে গাড়ি চলাচলের উপযুক্ত সড়ক নাই, মহকুমা স্তরে কৃষকদের বাজার নাই, পণ্য সংরক্ষণের মতো হিমঘর নাই। এই সমস্যাগুলিই কৃষককে ফড়েদের হাতে অতি কম দামে পণ্য তুলিয়া দিতে বাধ্য করিত। সেই অবস্থার তো কোনও পরিবর্তন হয় নাই। কী ভাবে কৃষক এবং পাইকারি ক্রেতার মধ্যে সংযোগসাধন হইবে, সেই প্রশ্নের উত্তর কংগ্রেস দেয় নাই। এই পরিস্থিতিতে বাঁচাইতে পারে বাজার। সংগঠিত খুচরা ব্যবসায়ীরা, বাজারের তাগিদেই, নিজস্ব পরিকাঠামো গড়িয়া তুলিতে পারেন। কিন্তু, সে কাজে বৃহত্‌ (এবং প্রায় অনিবার্য ভাবে বিদেশি) পুঁজি প্রয়োজন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হইতে অরবিন্দ কেজরিওয়াল, অনেকেরই তাহাতে আপত্তি। রাষ্ট্রও ব্যবস্থা করিবে না, আবার বাজারকেও করিয়া লইতে দিবে না, ইহা এক আশ্চর্য পরিস্থিতিই বটে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.