চাকরির টোপ ফেলে জঙ্গি গড়ছে মাওবাদীরা২ জানুয়ারি
চা বাগানের ‘জীবন’ ভালো লাগছিল না মন্টু ওরাঁওয়ের (বদলে দেওয়া নাম)। পছন্দমতো চাকরিও খুঁজে পাচ্ছিলেন না মরিয়ানির ওই যুবক। তখনই একটি কর্মনিযুক্তি সংস্থার কাছ থেকে ভিন্‌রাজ্যে কাজের প্রস্তাব পান।
মন্টুকে জানানো হয়, কাজটা নিরাপত্তাকর্মীর। কিছুটা লেখাপড়া জানা থাকলেই চলবে। আশপাশের বাগানের পরিচিতি অনেক যুবকই ভিন্‌রাজ্যে একই চাকরি করেন। এক কথায় তা-ই রাজি হয়ে গিয়েছিলেন মন্টুও। চেন্নাইয়ের একটি বেসরকারি সংস্থায় প্রথমে পাঠানো হয় তাঁকে। মাসখানেক পর আরও বেশি বেতনের লোভ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ঝাড়খণ্ডে। ধেমাজি, ডিব্রুগড়, কাছাড়, গোলাঘাটের কয়েকজন যুবকের সঙ্গে সেখানে তাঁর আলাপ হয়। চাকরিটা কীসের তখনই তা জানতে পারেন সকলে। সব শুনে পায়ের তলায় মাটি সরে যায় মণ্টুদের! জানানো হয়, নিরাপত্তারক্ষী নয়, নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধেই লড়তে হবে তাঁদের। পালানোর চেষ্টা করলে মিলবে শাস্তি। অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিলে মোটা বেতন।
পুলিশ সূত্রের খবর, অসমের বরাক উপত্যকা থেকে উজানি অসমের বিভিন্ন জেলায় চা জনগোষ্ঠীর যুবকদের এমনভাবেই ভুল বুঝিয়ে সশস্ত্র জঙ্গি দলে টেনে নিয়ে যাওয়ার ছক কষেছে মাওবাদীরা। কোনওভাবে মন্টু জঙ্গলের জঙ্গিশিবির থেকে পালাতে পেরেছেন। যোরহাটে ফিরে তিনি জানিয়েছেন, অসমের অনেক যুবক ঝাড়খণ্ডের সশস্ত্র শিবিরে আটকে রয়েছেন। ভালো চাকরির আশায় গিয়ে জঙ্গি দলে নাম লেখাতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা।
অসমের চা বাগানগুলি থেকে আদিবাসী যুবক-যুবতীদের মাও শিবিরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। এ বছর বরাক থেকে পরেশ’দা বা গুয়াহাটি ও উজানি অসম থেকে আধ ডজন মাওবাদী নেতাকে গ্রেফতার করার পর পুলিশ জানতে পেরেছে, নামনি থেকে উজানি অসম পর্যন্ত চা বাগানে মাও-প্রভাব বিস্তারের কাজ এক দশক ধরে চলছে। এক পুলিশকর্তার তথ্য অনুযায়ী, বাগানগুলিতে বিপ্লবের সিনেমার সিডি ছড়িয়ে দেওয়া, মানবাধিকার, কৃষক মুক্তি বা বাঁধ বিরোধী আন্দোলনকারীর ‘ছদ্মবেশ’ নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে মাওবাদীরাই সক্রিয়। আলফার চেয়েও আত্মগোপন করে থাকা ওই মাওবাদীদের খুঁজে বের করাই এখন পুলিশের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।
রাজ্যের স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের এডিজি পল্লব ভট্টাচার্য বলেন, “চা বাগান এবং অন্য অনুন্নত এলাকা থেকে সাঁওতাল যুবকদের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা অনেকদিন ধরেই ঘটছে। সম্প্রতি জানা গিয়েছে, নিখোঁজ যুবকদের অনেকে মাও-শিবিরে আটকে রয়েছেন।” তাঁর মতে, সাঁওতালি উগ্রপন্থী সংগঠন এনএসএলএ-র কিছু নেতা ও সদস্য এ কাজে মাওবাদীদের সাহায্য করছে।
কী ভাবে যুবকদের জঙ্গি শিবিরে পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে?
পুলিশ জানায়, চা বাগানগুলির বেকার যুবকদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ভুয়ো নিয়োগ এজেন্সির পরিচয় দিয়ে তাদের দেওয়া হচ্ছে লোভনীয় চাকরির প্রস্তাব। মাওবাদীদের নিজস্ব ‘নেটওয়ার্ক’ ব্যবহার করে ওই যুবকদের প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় চেন্নাইয়ে। মাসখানেক পর ঝাড়খণ্ডে। টাকার লোভ, ভয় দেখিয়ে পালানোর পথ আটকে শুরু হয় অস্ত্র প্রশিক্ষণ। ওই সময় মাসে-মাসে টাকাও দেওয়া হয়। পরিবারের কাছে টাকা পাঠানোর ব্যবস্থাও করে দেয় জঙ্গিরা। প্রশিক্ষণের পর নবনিযুক্ত জঙ্গিদের অসমে ফিরে গিয়ে মাওবাদী কার্যকলাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।
ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের এক কর্তা জানান, অসমের চা বাগানগুলি থেকে যুবকদের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে তাঁরাও উদ্বিগ্ন। বাগানগুলিতে নিয়মিত বাসিন্দাদের গণনা করা হচ্ছে। বহিরাগতদের যাতায়াতে জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.