রাহুল গাঁধীর চাপে শেষ পর্যন্ত আদর্শ আবাসন কমিশনের রিপোর্ট ‘আংশিক ভাবে’ মেনে নিল মহারাষ্ট্র সরকার।
তবে অভিযুক্ত আমলাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চাইলেও রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করতে এখনও রাজি নন মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ। তাঁর দাবি, কোনও রাজনীতিক অপরাধ করেছেন এমন তথ্য কমিশনের রিপোর্টে নেই। কেবল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক চহ্বাণ সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে পৃথ্বীরাজ বলেছেন, “ওই বিষয়ে সিবিআই তদন্ত করছে। আমরা তাদের সাহায্য করছি।”
মুম্বইয়ের আদর্শ আবাসন নিয়ে বিতর্কের অন্ত নেই। কখনও অভিযোগ উঠেছে আবাসনটি বেআইনি। কখনও বা অভিযোগ উঠেছে, কার্গিল শহিদদের জন্য আবাসনে নিয়ম ভেঙে ফ্ল্যাট দখল করেছেন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আত্মীয়রা। ওই কেলেঙ্কারির তদন্ত করছে সিবিআই। আবাসন নিয়ে মামলাও চলছে।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জে এ পাটিলের নেতৃত্বাধীন কমিশনের রিপোর্ট প্রথমে খারিজ করেছিল মহারাষ্ট্র সরকার। কিন্তু সম্প্রতি এক সাংবাদিক বৈঠকে রাহুল জানান, ওই রিপোর্ট খারিজের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। কেলেঙ্কারিতে জড়িত কাউকে রক্ষা করার প্রশ্নই নেই।
এর পরেই নড়েচড়ে বসে মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস সরকার। কমিশনের দাবি, অশোক চহ্বাণ ছাড়াও ফ্ল্যাট পাওয়ার বিষয়ে প্রভাব খাটিয়েছিলেন প্রয়াত বিলাসরাও দেশমুখ, সুশীলকুমার শিন্দে ও শিবাজিরাও নিলাঙ্গেকর পাটিল। আদর্শের ফাইল হাতে থাকার সময়ে নিয়ম ভেঙেছেন দুই মন্ত্রী রাজেশ তোপে ও সুনীল তাৎকারে। তা ছাড়া বেশ কয়েক জন আমলার নামও রয়েছে ওই রিপোর্টে।
পৃথ্বীরাজ জানিয়েছেন, ১০২টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ২৫টির মালিকের ওই ফ্ল্যাট পাওয়ার যোগ্যতা নেই বলে জানিয়েছে কমিশন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সম্প্রতি আমেরিকায় বিতর্কে জড়ানো কূটনীতিক দেবযানী খোবরাগাড়ের বাবাও। ওই ২৫ জনকে নোটিস পাঠানো হবে। ১২ জন আমলা নিয়ম ভেঙেছেন বলেও জানিয়েছে কমিশন। তাঁদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ করবে মহারাষ্ট্র সরকার।
তা হলে রাজনীতিকরা বাদ যাচ্ছেন কেন? পৃথ্বীরাজের দাবি, কোনও রাজনীতিক কোনও অপরাধ করেছেন বলে জানায়নি কমিশন। তা-ই পদক্ষেপ করার প্রশ্নই ওঠে না। তবে অশোক চহ্বাণ-সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত চলছে। তাতে সিবিআইকে সাহায্য করেছে রাজ্য। কিছু অফিসারকে সাসপেন্ডও করা হয়েছে। সব ফাইল সিবিআইকে দেওয়া হয়েছে।
কমিশনের রিপোর্টে যে সব রাজনীতিকের নাম রয়েছে তাঁদের মধ্যে সুশীলকুমার শিন্দে এখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদের কটাক্ষ, “রাহুলের চাপের পরেও মহারাষ্ট্র সরকার আংশিক ভাবে রিপোর্ট মানল!” তাঁর মতে, শিন্দেকে বাঁচাতেই রিপোর্ট আংশিক ভাবে মানা হয়েছে। কারণ, তা না হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হবেন শিন্দে। তা ছাড়া মহারাষ্ট্র বিধানসভার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নেতার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হত। তাই কংগ্রেস পিছিয়ে গিয়েছে। পরে এই দুর্নীতির আরও অনেক স্তরের খোঁজ পাওয়া যাবে। |