ভারতের শেয়ার বাজারে যে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে, তা আরও একবার প্রমাণিত হল। বৃহস্পতিবার হঠাৎই এক ধাক্কায় অনেকটা পড়ে গেল শেয়ার বাজার। সেনসেক্স ২৫২ পয়েন্ট পড়ে ফের নেমে এল ২০ হাজারের ঘরে। গত ছ’সপ্তাহে এই পতন সর্বোচ্চ। বাজার বন্ধের সময়ে সেনসেক্স থিতু হয় ২০,৮৮৮.৩৩ অঙ্কে।
এ দিন ৩৬ পয়সা পড়েছে টাকার দামও। ফলে বিদেশি মুদ্রার লেনদেনের বাজার বন্ধ হওয়ার সময়ে ডলারের দাম ছিল ৬২.২৬ টাকা। টাকার এই পতনও শেয়ার বাজারের পতনে ইন্ধন জুগিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
শেয়ার বাজারের পতনে অবশ্য তেমন অবাক হননি বিশেষজ্ঞরা। প্রবীণ বাজার বিশেষজ্ঞ অজিত দে বলেন, “সূচক এখন যে-জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, তাতেও অনেকটা কৃত্রিমতা রয়েছে। বাজার ওঠার কোনও কারণ তো আমার চোখে পড়ছে না। শেয়ার বাজারের মৌলিক উপাদানগুলির কোনওটারই এখনও পর্যন্ত উন্নতি হয়নি। তা হলে বাজার উঠবে কী করে।”
তবে আর এক বাজার বিশেষজ্ঞ ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন ডিরেক্টর এস কে কৌশিক অবশ্য বাজারের পতনের পিছনে রাজনৈতিক কারণের গন্ধ পাচ্ছেন। তিনি বলেন, “দেশে ভর্তুকি রাজ আবার ফিরে আসছে। দিল্লিতে শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণেই আম আদমি পার্টি সরকারি তহবিল খরচ করে ভর্তুকি দিচ্ছে। এ বার অন্য রাজ্যেও এটা সংক্রামিত হলে দেশের উন্নতি যে ব্যাহত হবে, তাতে সন্দেহ নেই। এর পরোক্ষ বিরূপ প্রভাব শেয়ার বাজারের উপর পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমার আশঙ্কা, বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি এটাকে ভাল চোখে দেখবে না। এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে তাদের বিনিয়োগের সিদ্ধান্তের উপরেও।”
ভারতের শেয়ার বাজার এখন প্রধানত নির্ভর করে বিদেশি বিনিয়োগকারী সংস্থাগুলির লগ্নির উপরেই। ওই সব সংস্থা কম্পিউটারের মাধ্যমে বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করে শেয়ারের দামের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। শেয়ার বাজারের ভাষায় যাকে বলা হয় ‘অ্যালগো ট্রেডিং’। এই পদ্ধতিতে কোন শেয়ারের দাম কোথায় পৌঁছনোর পর আর বেশি বাড়ার সম্ভাবনা নেই (মার্কেট রেজিস্ট্যান্স), তা নির্ধারণ করে ওই সব সংস্থা। অনেক সময়েই দেখা যায়, একটি নির্দিষ্ট দামে পৌঁছলেই ওই সব সংস্থা সেই শেয়ার এক যোগে বিক্রি করে মুনাফা তুলে নিতে থাকে। তখন দ্রুত পড়ে যায় শেয়ার বাজার। অজিতবাবু বলেন, “এই ধরনের ঘটনা এখন প্রায়শই ঘটছে। শেয়ার বাজারের এই দিনের পতনের মূলে ওই কারণই কাজ করেছে বলে আমার আশঙ্কা।” |