চলতি আর্থিক বছরে শেয়ার বাজার পড়ার সম্ভাবনা আর তেমন নেই। যদিও বাজারের ওঠা-নামা বজায় থাকবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সূচকের পারার মুখ উপরের দিকেই থাকবে। ভারতের শেয়ার বাজার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা এই মুহূর্তে অন্তত তেমনটাই মনে করছেন।
বৃহস্পতিবার দিনের শেষে সূচক সামান্য বেড়েই থিতু হয়েছে। বাজার বন্ধের সময়ে সেনসেক্স ছিল ২১,০৭৪.৫৯ অঙ্কে। যা আগের দিনের থেকে প্রায় ৪২ পয়েন্ট বেশি।
এ দিন অবশ্য পড়েছে টাকার দাম। ডলার কেনাবেচার ক্ষেত্রে টাকার দাম ৩৭ পয়সা পড়ার ফলে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়িয়েছে ৬২.১৬ টাকা। গত তিন সপ্তাহের মধ্যে যা সবচেয়ে কম।
এ দিকে, ২৫ ডিসেম্বর থেকেই বড়দিনের ছুটির মরসুম শুরু হয়েছে। বিশেষ করে ইউরোপ এবং আমেরিকায় শেয়ার বাজারের লেনদেন এই ক’দিন অনেকটা দায়সারা ভাবেই হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যার ফলে ভারতের বাজারেও এখন কয়েক দিন বড় মাপের উত্থান বা পতন হওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অবশ্য শুধু ছুটির মরসুমের জন্যই নয়। বর্তমানে ভারতের আর্থিক ক্ষেত্রে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেয়ার বাজারের অনুকূলেই রয়েছে। যেমন, শীতের ফসল ভাল হওয়ার দরুন খাদ্যপণ্যের দাম কমবে বলেই মনে করছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক-সহ বিভিন্ন মহল। তার হাত ধরে সার্বিক ভাবে মূল্যবৃদ্ধির হার কমার রুপোলি রেখাও দেখতে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। মূলত এই আশার উপর ভর করেই হালে মূল্যবৃ্দ্ধির হার কিছুটা বাড়া সত্ত্বেও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কর্তা রঘুরাম রাজন ঋণনীতির পর্যালোচনায় সুদের হার বাড়ানোর পথে হাঁটেননি। বাজারের আশঙ্কার মুখে জল ঢেলে রাজন বলেছেন, ‘অত্যধিক চড়া সুদের’ তিনি পক্ষপাতী নন।
এ প্রসঙ্গে আইডিবিআই মিউচুয়াল ফান্ডের সিইও এবং এমডি দেবাশিস মল্লিক বলেন, “রাজনের এই পদক্ষেপ এক ধাক্কায় শেয়ার বাজারের মনোবল অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। লগ্নিকারীরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন, সুদ বাড়ানোর ইচ্ছা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নেই। পরিস্থিতি সহায়ক হলে উল্টে রাজন সুদ কমানোর সিদ্ধান্তও নিতে পারেন।”
আরও কিছু বিষয় শেয়ার বাজারের অনুকূলে রয়েছে। যেমন, বিশ্ব বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম কমছে। যা তেল আমদানিতে ভারতের বিদেশি মুদ্রা ব্যয় কমিয়ে মল্যূবৃদ্ধি কমাতে সাহায্য করবে। চলতি খাতে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন ঘাটতিও এর জেরে কমছে। পাশাপাশি, আমেরিকার আর্থিক হাল ফিরতে শুরু করেছে। তারা জানিয়েছে, বাজার থেকে বন্ড কেনার কর্মসূচি ক্রমশ সঙ্কুচিত করা হবে। কিন্তু ওই ঘোষণা সত্ত্বেও বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলি ভারতের বাজারে লগ্নির বহর কমায়নি। প্রায় প্রতিদিনই তারা হাজার কোটি টাকার মতো শেয়ার কিনছে।
ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন সভাপতি এবং স্টুয়ার্ট সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান কমল পারেখ মনে করেন, “এটা ঠিক, আমেরিকার বন্ড কেনা বন্ধের সম্ভাবনা নিয়ে বাজারে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি বাজারে এত দিনে ‘ফ্যাক্টর্ড ইন’ বা গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। যার ফলে বন্ড কেনা কমলেও শেয়ার দরে বড় মাপের পতন হওয়ার সম্ভাবনা নেই।” |