মহেন্দ্র জেনা • শান্তিনিকেতন |
প্রস্তুতি ছিল সকাল থেকেই। মাঠে ছুটে গিয়েছিলেন পুলিশ, প্রশাসন ও দমকল বিভাগের কর্তারাও। হেলিকপ্টারটিও সময় মতো এসে পৌঁছেছিল। কিন্তু বার তিনেক চক্কর মেরেও কেন্দ্রীয় সংস্থা পবনহংসের ওই কপ্টার বোলপুরের ডাকবাংলো মাঠে নামতে পারেনি। অভিযোগ, অবতরণের উপযুক্ত পরিকাঠামো ছিল না বলেই হেলিকপ্টারটি ফিরে যেতে বাধ্য হয়। গত ১১ ডিসেম্বর এমনটাই ছিল বহু প্রতীক্ষিত কলকাতা-শান্তিনিকেতন রুটের কপ্টার পরিষেবার ‘ট্রায়ালে’র হাল!
সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মফস্সল শহরগুলির সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ বাড়াতে কম খরচে হেলিকপ্টার পরিষেবা চালুর কথা ঘোষণা করেছিলেন। তাঁর ঘোষণা অনুযায়ী, গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে ওই পরিষেবা চালু হয়ে যাওয়ার কথা। প্রতিশ্রুতি মতো ইতিমধ্যে কলকাতা-গঙ্গাসাগর, কলকাতা-অন্ডাল ও কলকাতা-মালদা-বালুরঘাট রুটে হেলিকপ্টার পরিষেবা চালুও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ঘটনা হল, নিয়মিত আকারে ওই পরিষেবা চালুর জন্য যে উপযুক্ত পরিকাঠামো দরকার শান্তিনিকেতনের ক্ষেত্রে তা এখনও গড়ে ওঠেনি। ফলে কলকাতা-শান্তিনিকেতন রুটের হেলিকপ্টার পরিষেবা কবে চালু হবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের কাছেও কোনও স্পষ্ট উত্তর মিলছে না। জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা অবশ্য বলছেন, “খুব দ্রুতই ওই পরিষেবা চালু হবে।” |
এ দিকে, পরিকাঠামোগত সমস্যার কথা মানতেই চাননি জেলা আঞ্চলিক পরিবহন পর্ষদের বোর্ড সদস্য দেবব্রত সরকার। তাঁর দাবি, “সে দিন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই কপ্টারটি বোলপুরের ডাকবাংলো মাঠে নামতে পারেনি।” রাজ্যের পরিবহণ দফতর কলকাতা থেকে ছোট ছোট রুটে হেলিকপ্টার চালানোর পরিকল্পনা করেছে। দফতর সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় সংস্থা পবনহংস এখন কলকাতা থেকে ওই হেলিকপ্টার ভাড়া দিচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী রাজ্য সরকার প্রতি মাসে ৪০ ঘণ্টার ভাড়া তুলে দেয় পবনহংসের হাতে। কিন্তু সরকারি প্রয়োজনে তা মাসে বড়জোর আট থেকে ১০ ঘণ্টা ব্যবহার করা হত। বাকি সময়টুকু বসিয়ে না-রেখে হেলিকপ্টার ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গঙ্গাসাগর, অন্ডাল, মালদহ-বালুরঘাট রুটের পরে কলকাতা থেকে শান্তিনিকেতন, মায়াপুর, বহরমপুর রুটেও নিয়মিত আকারে কপ্টার পরিষেবা চালু হওয়ার কথা। রাজ্যের পরিবহন সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “কলকাতা-শান্তিনিকেতন রুটে হেলিকপ্টার পরিষেবা শীঘ্রই চালু হয়ে যাবে। কবে চালু হবে, তা সরকারি ভাবে জলদি-ই জানিয়ে দেওয়া হবে।”
জেলা প্রশাসন ও পরিবহন দফতর সূত্রে খবর, সপ্তাহে এক দিন (শনিবার) ওই কপ্টার পরিষেবা চালু থাকবে বলে প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৭ আসন বিশিষ্ট ওই কপ্টারে যাত্রী পিছু ভাড়া নেওয়া হবে ১৫০০ টাকা। কলকাতার বেহালা ফ্লাইং ক্লাব থেকে শান্তিনিকেতন পৌঁছে যাওয়া যাবে মাত্র ৪৫ মিনিটেই। ফেরার সময় তা অন্ডাল হয়ে কলকাতা ফিরবে। এখনও পর্যন্ত উপযুক্ত পরিকাঠোমা না থাকায় বোলপুর স্টেডিয়ামের মাঠ থেকেই অস্থায়ী ভাবে ওই পরিষেবা চালু করতে চেয়েছে জেলা প্রশাসন। তবে, স্থায়ী ভাবে অবরতরণ-উত্তরণের জন্য বোলপুর শহর লাগোয়া পারুলডাঙার মাঠে একটি হেলিপ্যাড গড়ে তোলার বিষয়ে প্রাথমিক কথাবার্তা শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কপ্টার সংস্থার লোক জন ওই মাঠ ঘুরেও দেখেছেন। তাঁরা অবশ্য পাইলটদের জন্য দু’টি বিশ্রাম ঘরের প্রয়োজনের কথাও জানিয়েছেন। বোলপুরের মহকুমাশাসক মলয় হালদার বলেন, “হেলিকপ্টার পরিষেবা চালু করা নিয়ে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়া-সহ আনুষঙ্গিক সমস্ত ব্যবস্থা দ্রুত নেওয়া হচ্ছে। আশা করি, যাত্রীরা খুবই শীঘ্র ওই পরিষেবার সুবিধা পাবেন।” আজ, শুক্রবার বোলপুর স্টেডিয়াম মাঠে ফের হেলিকপ্টার ওঠা-নামার ‘ট্রায়াল’ হবে বলে জানা গিয়েছে।
এ দিকে, বেহালা ফ্লাইং ক্লাব থেকে ওই কপ্টার পরিষেবা চালু করা নিয়ে আগ্রহীদের মধ্যে কিছু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিশ্বভারতীর কর্মী স্বপন হাজরা যেমন বলছেন, “বেহালায় নেমে সেখান থেকে হাওড়া স্টেশন, এসএসকেএম বা এয়ারপোর্টের মতো প্রয়োজনীয় জায়গাগুলি পৌঁছতে যে সময় লাগবে, তাতে ট্রেনের সময়ের সঙ্গে ওই কপ্টারের বিশেষ পার্থক্য থাকবে না। তা হলে আর সুফল কোথায়?” ময়দান বা ধর্মতলার মতো মধ্য কলকাতার কোনও জায়গাতে নামলেই যাত্রীদের সুবিধা হবে বলে তিনি মনে করছেন। কপ্টার পরিষেবা চালু হওয়ার খবরে খুশি বিশ্বভারতীর ইলিয়াস সাবচি-র মতো বিদেশি ছাত্ররাও। ইরান থেকে আসা ইলিয়াসের কথায়, “জরুরি পরিস্থিতিতে ওই কপ্টার পরিষেবা অনেকের উপকারে আসবে।”
আর কলকাতা থেকে প্রায় দিন শান্তিনিকেতন ঘুরতে আসা শুভদীপ ভট্টাচার্য বলছেন, “ট্রেনের ধাক্কা খেয়ে শান্তিনিকেতন যাওয়ার দিন শেষ। এখন সপ্তাহান্তের ছুটিতে মাত্র ৪৫ মিনিটেই খোয়াইয়ের দেশে পৌঁছে যাব!”
|
কলকাতা-শান্তিনিকেতন রুটে হেলিকপ্টার পরিষেবা শীঘ্রই চালু হয়ে যাবে।
আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্য পরিবহণ সচিব |
|