পাইপ নিয়ে দুর্নীতি, বিডিও ডাকলেও গরহাজির প্রধান
লকূপের পাইপ নিয়ে দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে বর্ধমানের তৃণমূলের দখলে থাকা বৈকুন্ঠপুর ২ পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, একই দিনে ওয়ার্ক অর্ডার পাশ করিয়ে, নলের ডেলিভারি চালান কেটে, সরবরাহকারীকে সে দিনই প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপরেই সরবরাহ করা পাইপের মান ও পরিমাণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ, সরবরাহ করা পাইপের পরিমাণ বা সংখ্যা, টেন্ডারে যা বলা হয়েছিল তার চেয়ে অনেক কম। ঘটনার তদন্তে নেমেছে ব্লক প্রশাসন। বৃহস্পতিবার দুপুরে বর্ধমান ২ ব্লকের বিডিও কমলিকা মুখোপাধ্যায় তদন্তে আসেন। ওই পঞ্চায়েতের গুদামও সিল করে দেন তিনি। কলমিকাদেবী বলেন, “অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে দোষিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ দিন বৈকুন্ঠপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে দেখা যায়, বিডিও গুদাম খুলিয়ে তদন্ত করছেন। সরবরাহ করা পাইপ ও যন্ত্রাংশেরর গুণতি করছেন। কিন্তু প্রধান নীলকান্ত ঘোষ বা উপপ্রধান জবা মালিক কারোরই দেখা নেই। এমনকী পঞ্চায়েত কার্যালয়ে গিয়েও খোঁজ মেলেনি তাঁদের। বিডিও বারবার ডেকেও তাঁদের দু’জনের কাউকেই ঘটনাস্থলে হাজির করাতে পারেননি। আসেননি পঞ্চায়েতের কোনও সদস্যও।
বৈকুন্ঠপুর পঞ্চায়েতের জব অ্যাসিস্ট্যান্ট বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “যে পরিমাণ পাইপ ও যন্ত্রাংশ সরবরাহের কথা ছিল টেন্ডারে, তার তুলনায় অনেক কম হাতে পেয়েছি। মোট ৪ লক্ষ ৪৮ হাজার ১৬৯ টাকার মাল সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল একটি বেসরকারি সংস্থাকে। ৯ ফুট লম্বা ও দেড় ইঞ্চি ব্যাসের প্লাষ্টিকের পাইপ-সহ লোহার যন্ত্রাংশ সরবরাহের কথা ছিল। কিন্তু যা মাল হাতে পেয়েছি, তা টাকার তুলনায় কম।” বিশ্বরূপবাবুর দাবি, কিডনির চিকিৎসা করাতে ভেলোরে গিয়েছিলেন তিনি। ফলে গত ৬ তারিখ থেকে ছুটিতে ছিলেন। ২৩ তারিখে কাজে যোগ দেওয়ার পরে নতুন মাল এসেছে শুনে চালান ভাউচার দেখে পাইপ ও যন্ত্রাংশ মেলাতে যান তিনি। কিন্তু চালানে যে পরিমাণ বলা ছিল, গুদামে সে পরিমাণ পাইপ ও যন্ত্রাংশ তিনি পাননি। তাঁর অভিযোগ, “যেখানে ৯ ফুটের পাইপ ৪৫টি থাকার কথা, সেখানে মাত্র ২০-২২ টি মিলেছে। এই অসঙ্গতির কথা গত ২৭ তারিখ প্রধান নীলকাম্তবাবুকে জানিয়েছিলাম। উনি বলেছিলেন, ঘটনাটির তদন্ত হবে।” কিন্তু তদন্ত শুরুর কোনও উদ্যোগ তিনি না করায় ৩০ ডিসেম্বর ফের লিখিত ভাবে বিশ্বরূপবাবু জানতে চান, তদন্তের কী হল? কিন্তু সে চিঠির উত্তরপ্রধান দেননি বলে তাঁর দাবি।
ওই জব অ্যাসিস্ট্যান্ট আরও বলেন, “চালান-ভাউচার অনুযায়ী গত ৬ ডিসেম্বর ওই সরবরাহকারী পঞ্চায়েতে আসেন। ৭ তারিখেই তিনি পাইপ ও যন্ত্রাংশ সরবরাহ করেন। সেই দিনই সরবরাহ করা পাইপ বা যন্ত্রাংশের সংখ্যা যাচাই না করেই তাঁকে পুরো ৪ লক্ষ ৪৮ হাজার ১৬৯ টাকার পেমেন্ট দিয়ে দেওয়া হয়।” ওই পঞ্চায়েতের এগজিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট অরুন মণ্ডলও বলেন, “সরবরাহের পরে আমিও খোঁজ নিয়ে জানতে পারি পাইপ কম রয়েছে। প্রধানকে জানিয়েওছি।”
ওই পাইপ ও যন্ত্রাংশ সরবরাহে যে অসঙ্গতি আছে, তা জানান তৃণমূল সমর্থক পঞ্চায়েতি রাজ এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সভাপতি হরবিলাস চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, “কোনও মাল সরবরাহ করা হলে, তা প্রথমে গুদামে স্টক এন্ট্রি করা হয়। পরে তার মান ও পরিমাণ খতিয়ে দেখেন স্টোরকিপার, জব অ্যাসিস্ট্যান্টেরা। তারপরে জব অ্যাসিস্ট্যান্ট ও এগজিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট সব ঠিক আছে বলে শংসাপত্র দেন। সেই শংসাপত্র দেখেই প্রধান মালের পেমেন্ট বিলে সই করেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি।”
পাইপ নিয়ে দুনীর্তির অভিযোগ পেয়ে বুধবারই বিডিও পঞ্চায়েতের গুদাম সিল করে দেন। সেদিনই পঞ্চায়েতেকে জানিয়েও দেন, যে বৃহস্পতিবার তদন্ত করবেন তিনি। কিন্তু এ দিন দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরেও প্রধান, উপপ্রধান বা কোনও সদস্যের দেখা মেলেনি। প্রধান ও উপপ্রধানকে ফোনও করেন বিডিও। শেষে পঞ্চায়েত কর্মীদের সামনে রেখেই তদন্তের কাজ শুরু করেন। বর্ধমান জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ তথা তৃণমূল নেতা গোলাম জার্জিস বলেন, “ওখানে ১২টি আসনের মধ্যে নটি পেয়ে বোর্ড গঠন করেছি আমরা। বিডিও পঞ্চায়েতের গুদাম সিল করে দিয়েছেন এমন খবর পেয়েছি। কিন্তু আর কিছু জানিা। খবর নেব।”
আর বৈকুন্ঠপুর পঞ্চায়েতের প্রধান নীলকান্তবাবু বলেন, “সরবরাহ করা পাইপ আর যন্ত্রাংশ কম বলে অভিযোগ উঠেছে, এমনটা শুনেছি। তবে তদন্ত শেষ হবার পরেই তা বোঝা যাবে। তা ছাড়া সরবরাহকারীকে যে চেক দেওয়া হয়েছে, তাতে তিনজনের সঙ্গে আমার সই রয়েছে। মাল কম আছে না বেশি, তা দেখা তো প্রধানের কাজ নয়!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.