|
|
|
|
ঝকঝকে জাতীয় সড়কে নেই প্রতীক্ষালয়, নাকাল যাত্রীরা
|
নিজস্ব সংবাদদাতা • রানিগঞ্জ |
ঝাঁ চকচকে রাস্তা এক ধাক্কায় কমিয়ে দিয়েছে নানা শহরের মধ্যে যাতায়াতের সময়। সংখ্যা বেড়েছে বাসেরও। কিন্তু খনি-শিল্পাঞ্চলে এই জাতীয় সড়কের গুরুত্বপূর্ণ বাসস্টপগুলির প্রায় কোনওটিতেই নেই উপযুক্ত যাত্রী প্রতীক্ষালয়। ফলে, গ্রীষ্ম-বর্ষায় সমস্যায় পড়তে হয় যাত্রীদের।
আসানোসোলের প্রবেশদ্বার ছাতাপাথরে রাস্তার এক দিকে একটি ছোট প্রতীক্ষালয় আছে। অন্য দিকে তা-ও নেই। এখান থেকে পূর্ব দিকে তিন কিলোমিটার গেলে চাঁদা মোড়। সেখানেও এক দিকে আছে স্বল্প পরিসরের প্রতীক্ষালয়। সেখান থেকে আরও ৪ কিলোমিটার গেলে গুরুত্বপূর্ণ রানিসায়র মোড়। দু’দিকেই কোনও প্রতীক্ষালয় নেই। তিনটি বাসস্টপেই জলের ব্যবস্থা নেই। চাঁদায় ট্রাফিক সিগন্যালের আলোও জ্বলে না। এই মোড়ে রাস্তায় একটি টাওয়ারে ১২টা বাতি লাগানো থাকলেও ন’টি জ্বলে না। রাস্তার পাশে নর্দমা পরিস্কার করা হয় না। বৃষ্টির দিন নর্দমার আবর্জনা উঠে আসে জাতীয় সড়কে। |
গ্রীষ্ম-বর্ষায় গাছের ছায়া, আশপাশের দোকানই ভরসা যাত্রীদের।
অন্ডালে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে তোলা নিজস্ব চিত্র। |
রানিগঞ্জ থেকে জামুড়িয়া এবং পাঁচটি কোলিয়ারি এলাকায় যাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ রানিসায়র মোড়ে ট্রাফিক সিগন্যালে আলোর ব্যবস্থা করা হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা তথা তৃণমূলের অঞ্চল সম্পাদক প্রকাশ মাহাতো অভিযোগ করেন, তাঁরা বারবার এ নিয়ে স্থানীয় পুরপ্রধান থেকে পুলিশের কাছে আবেদন জানালেও যাত্রী পরিষেবার কোনও উন্নতি হয়নি। দু’কিলোমিটার দূরে বাঁকুড়া ও বীরভুমের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ রানিগঞ্জ মোড়ে এখনও পর্যন্ত প্রতীক্ষালয় নির্মাণ করা হয়নি। বেশ কিছু দিন ধরে জলের অভাবে বন্ধ সুলভ শৌচালয়। রানিগঞ্জ থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে বড় রেল ইয়ার্ড শহর অন্ডাল। রাস্তার পাশেই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এ ছাড়া তিন দিক কোলিয়ারি এলাকায় ঘেরা অন্ডাল মোড়। সেখানেও প্রতীক্ষালয় নেই, জল সরবরাহের উদ্যোগও হয়নি।
পরপর এই চারটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়েই রাস্তার পাশে চা, মিষ্টির দোকানই ঝড়-বৃষ্টি বা রোদের হাত থেকে বাঁচতে যাত্রীদের একমাত্র ভরসা। পানীয় জলও মেলে এই সব দোকান থেকেই। বেশ কিছু যাত্রী জানান, গ্রীষ্মে খনি এলাকায় জলসঙ্কট প্রতি বছর চেনা ছবি। এই সময়ে অনেক দোকানদার আবার কিছু না কিনলে জল দিতে চান না। তৃণমূলের বর্ধমান জেলা (শিল্পাঞ্চল) কমিটির সহ-সভাপতি অলোক মণ্ডলের দাবি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বারবার অন্ডাল মোড়ে যাত্রী পরিষেবার দিকে নজর দেওয়ার আবেদন জানিয়েও ফল হয়নি।
রানিগঞ্জের পুরপ্রধান সিপিএমের অনুপ মিত্র জানান, রানিগঞ্জ মোড়ে পুরসভার কোনও জলের পাইপলাইন নেই। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জল নিয়ে সুলভ শৌচালয়টি চলছিল। পাইপলাইনের কোনও ত্রুটিতে এমন বিপত্তি হয়েছে বলে তাঁর ধারণা। অনুপবাবু বলেন, “এই শহরের প্রধান মোড়ে এবং রানিসায়র মোড়ে আমরা প্রতীক্ষালয় নির্মাণ করতে চেয়েছিলাম। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ছ’লেনের রাস্তা তৈরির কথা ঘোষণা করায় সে কাজ আমরা শুরু করিনি। কারণ, সে ক্ষেত্রে আবার প্রতীক্ষালয় ভাঙতে হত। ছয় লেন হয়ে গেলে আমরা এই কাজ করব।” চাঁদা মোড়ে যাত্রী পরিষেবা দেওয়ার প্রশ্নেও এক মত জামুড়িয়ার পুরপ্রধান ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
আসানসোল থেকে বরাকর পর্যন্ত পুরনো জি টি রোডের দু’পাশে বাসস্টপগুলিরও প্রায় একই অবস্থা। আসানসোল শহরের ঊষাগ্রাম মোড়, রাহা লেন মোড়, পুরসভার সামনে, এমনকী হটন রোড মোড়ে কোনও প্রতীক্ষালয় নেই। যাত্রীদের জল খেতে হয় রাস্তার পাশের দোকানগুলি থেকেই। বার্নপুর মোড়ে প্রতীক্ষালয়েও জলের কোনও ব্যবস্থা নেই। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ঊষাগ্রামে এক দিকে প্রতীক্ষালয় রয়েছে। তবে বাস যেখানে দাঁড়ায় সেখান থেকে সামান্য দূরে। রাহা লেনে এক দিকের প্রতীক্ষালয় ভেঙে গিয়েছে। অন্য দিকে জবরদখল হয়েছে রয়েছে। পুরসভার ডেপুটি মেয়র অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় জানান, যাত্রীরা অসুবিধার কথা জানালেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বরাকর এলসি মোড় ও রানিতলায় প্রতীক্ষালয় ভেঙেচুরে গিয়েছে। নিয়ামতপুর নিউ রোডের প্রতীক্ষালয় জবরদখল করে ব্যবসা চলছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। কুলটির উপ-পুরপ্রধান বাচ্চু রায়ের আশ্বাস, প্রতীক্ষালয়ে যাত্রী পরিষেবা উন্নত করার কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। |
|
|
|
|
|